ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিষধর সাপের স্বভাব

প্রকাশিত: ২০:৫২, ১৮ নভেম্বর ২০২০

বিষধর সাপের স্বভাব

বিষধর সাপ ফণা তুলবেই। ছোবল মারাই তার স্বভাব। এদেশে স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি হলো চিহ্নিত বিষধর সাপ। একাত্তরে প্রথম তাদের হন্তারক স্বভাব জানা যায়। এরপর তাদের চারিত্র্যবৈশিষ্ট্যের পরিচয় আমরা নতুন করে পেয়ে আসছি পঁচাত্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর থেকে। ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাকাণ্ডের পর পাকিস্তানপন্থীরা, যারা এদেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি তারাই দণ্ডমুণ্ডের অধিকর্তা হয়ে বসে। দেশটাকে তারা উল্টোদিকে চালানো শুরু করে। আমাদের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার পাঁয়তারা চালায়। একুশ বছর পর আবারও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি সরকার গঠনের সুযোগ পেলে কিছুদিন বিষধর সাপেরা গর্তে লুকোয়। পরে গণতন্ত্রের খোলা হাওয়ার ভেতর সুযোগ বুঝে ফের আবির্ভূত হয় স্বরূপে। বর্তমানকালে তাদের স্পর্ধা সীমা ছাড়িয়ে যেতে বসেছে। আবারও তারা সাম্প্রদয়িকতার বিষবাষ্প ছড়াতে শুরু করেছে। সম্প্রতি তারা ধৃষ্টতার চূড়ান্ত নজির স্থাপন করেছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনে বাধা প্রদান এবং স্থাপিত ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলার ভয়ঙ্কর হুমকি দিয়েছে ওই চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধী, মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি। এই দুঃসাহস তারা পায় কোথায়? বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অপসারণে স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির ঔদ্ধত্যপূর্ণ হুমকির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। রবিবার সংগঠনের এক যুক্ত বিবৃতিতে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে একই সঙ্গে উগ্রবাদীদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ হুমকির প্রতিবাদে সরকারদলীয় কোন প্রতিবাদ না হওয়ারও নিন্দা জানিয়েছেন। আমাদের মহানবী (সা.) কাবা শরিফের ৩৬০টি মূর্তি অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। দেয়ালের সব ফ্রেসকো নষ্ট করার কথাও তিনি বললেন। হঠাৎ তাঁর দৃষ্টি পড়ল কাবার মাঝখানের একটি স্তম্ভে। যেখানে বাইজেন্টাইন যুগের মাদার মেরির একটি অপূর্ব ছবি আঁকা। নবীজী (সা.) সেখানে হাত রাখলেন এবং বললেন, ‘এই ছবিটা তোমরা নষ্ট কোর না।’ কাজটি তিনি করলেন সৌন্দর্যের প্রতি তাঁর অসীম মমতা থেকে। মহানবীর (সা.) ইন্তেকালের পরেও ৬৮৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ধর্মপ্রাণ খলিফাদের যুগে কাবা শরিফের মতো পবিত্র স্থানে এই ছবি ছিল। এতে কাবা শরীফের পবিত্রতা ও শালীনতা ক্ষুণ্ন হয়নি। মহানবীর (সা.) প্রথম জীবনীকার আরব ইতিহাসবিদ ইবনে ইসহাকের লেখা দি লাইফ অব মোহাম্মদ গ্রন্থে ঘটনাটির উল্লেখ আছে। ভাস্কর্য প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে অপপ্রয়াস চালানোর মাধ্যমে এরা পরধর্মসহিষ্ণু বাঙালীর হাজার বছরের সুনাম নষ্ট করে নতুন প্রজন্মের স্বাভাবিক বিকাশের পথে বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এরা জেনেবুঝেই বিষয়টিকে ধর্মরক্ষার তকমা পরাতে চাইছে। অর্থাৎ তারা ধর্মভিত্তিক রাজনীতিরই চর্চা করছে এবং একই সঙ্গে ধর্মের ললিতবাণীকে অস্বীকার করে অধর্মের অপসংস্কৃতি চাপিয়ে দিতে চাইছে। সবচেয়ে বড় কথা এরা দেশে বিভেদ তৈরির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে নৈরাজ্য কায়েম করতে চাইছে। তাদের দুঃসাহস সীমা লঙ্ঘন করে চলেছে। তাই এদেরকে রুখতে হবে এখনই। ধর্মের দোহাই দিয়ে কোন মহল নাশকতা ও নৈরাজ্য চালিয়ে যেতে পারে না। আমরা যদি আমাদের স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে চাই, এদেশকে সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় রেখে বিশ্বে সম্মানজনক অবস্থান অর্জন করতে চাই, তাহলে অন্ধকারের শক্তিকে পরাস্ত করতে হবে যে কোন মূল্যে। চিহ্নিত অপশক্তির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের এটিই উপযুক্ত সময়।
×