ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করুন-বিএনপিকে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০০:৪৪, ১৭ নভেম্বর ২০২০

সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করুন-বিএনপিকে প্রধানমন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বিএনপিকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, নিজেদের অপকর্মের কারণে বিএনপি মানুষের থেকে দূরে সরে গেছে, জনগণের কাছে অনেক আগেই আস্থা-বিশ্বাস হারিয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচন থেকেই জনগণ বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করে আসছে। আর বিএনপি ভাল করেই জানে নির্বাচনে জনগণের ভোট পাবে না। সে কারণে নিজেরা বাসে আগুন দিয়ে উল্টো সরকারকে দোষারোপ করে। ‘উদোর পি-ি বুধোর ঘাড়ে চাপানো’-এটা বিএনপির পুরনো অভ্যাস। রাজধানীতে বাসে আগুন দেয়ার জন্য বিএনপিকে দায়ী করে সরকারপ্রধান বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এমনিতেই মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। মানুষ কষ্টে আছেন। এই সুযোগে বিএনপি চাচ্ছে মানুষের দুঃসময়টাকে কাজে লাগিয়ে সরকারের বদনাম করতে। নিজেরা ফায়দা লুটতে। তবে মানুষ এখন অন্ধ নয়। তারা সব দেখে-জানে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সোমবার রাতে জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচন এবং রাজধানীতে কয়েকটি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করলে তার জবাব দিতে গিয়ে সংসদ নেতা এসব কথা বলেন। তিনি ওই বিএনপি সংসদ সদস্যকে জাতীয় সংসদে মিথ্যা তথ্য তুলে ধরে জাতিকে বিভ্রান্ত না করার আহ্বান জানান। বক্তব্য দেয়ার আগে শেখ হাসিনা বাসে আগুন দেয়া ইস্যুতে বিএনপির নেতা নিতাই রায় চৌধুরী ও দলের একজন নারী নেত্রীর টেলিফোনের কথোপকথনের অডিও সংসদে বাজিয়ে শোনান। সেখানে তাদের কথোপকথনেই স্পষ্ট উল্লেখ করা হয় যে, যুবদলের নেতাকর্মীরাই এসব যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করেছে। ঢাকার নির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, একটি আসনে নির্বাচন হচ্ছে, এ সময় কয়েকটা বাসে আগুন দেয়া। তারা নিজেরা আগুন দিয়ে দোষ দিচ্ছে এটা নাকি সরকারী এজেন্ট করেছে! তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আমরা আগুন দেব কী কারণে? আমরা ক্ষমতায় আছি। আমরা আগুন দিয়ে আমাদের সরকারকে বদনামের ভাগিদার করব কেন? মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দেয়া তো আমাদের দায়িত্ব। টেকনোলজির কারণে হাতে হাতে ধরা পড়ে যাচ্ছে কারা আগুন দিচ্ছে। নিজেরা আগুন-টাগুন দিয়ে পার্লামেন্টে এসে সরকারকে দোষারোপ করা হলো। কিন্তু প্রযুক্তি অনেক এগিয়ে গেছে, প্রযুক্তিই কথা বলবে। বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদকে উদ্দেশে করে তিনি বলেন, ‘উনাকে সামনের সিটে বসিয়েছি। উনি কথা বলেন। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে এমন এমন কথাগুলো তোলেন সব সময় তার উত্তরও দেই না। আজকে যেভাবে কথাটা তুললেন- বোধহয় নিজেদের পার্টির সম্পর্কে তথ্যগুলো জেনে নিয়ে উনার কথা বলা উচিত ছিল।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির সংসদ সদস্য নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে- বিএনপি আদৌ নির্বাচন করে কিনা? নির্বাচনে উনারা অংশ নেন, নমিনেশন নিচ্ছেন, নির্বাচনে যাচ্ছেন। কিন্তু নির্বাচনে তাদের কোন প্রচার নেই, নির্বাচনের দিনে কোথায় একটা এজেন্টও ঠিকমতো দেবে না। কোন কিছু করবে না। একটা সময় পর নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করেই বলে নির্বাচন ঠিক হচ্ছে না। বিএনপিকে বলব- নির্বাচন যদি করতে হয় সঠিকভাবে যেন করেন। আমরাও রাজনীতি করে আসছি। আমরাও মানুষ চিনি। বিএনপি অনেক আগেই জনগণের সমর্থন হারিয়েছে দাবি করে সরকারপ্রধান বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। তারপর থেকে তাদের অপকর্মের কারণে মানুষের কাছ থেকে আরও দূরে সরে গেছে, এটা হলো বাস্তবতা। তিনি বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে চক্রান্ত করে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তারা (বিএনপি) যে সমস্ত ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে, সন্ত্রাস-খুন-নারী নির্যাতন থেকে শুরু করে এমন কোন অপরাধ নেই- তা তারা করেনি। তারপর আসল তাদের অগ্নিসন্ত্রাস। জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। মানুষ পোড়ানো-খুন করা তাদের নাকি আন্দোলন। বিএনপির গোড়ায় গলদ রয়েছে অভিযোগ তুলে সংসদ নেতা বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেছে হত্যা-ক্যু ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে। তার ক্ষমতা দখল হচ্ছে খুনের মধ্য দিয়ে। তিনি যে পার্টি সৃষ্টি করে গেছে, তারা অস্ত্র-সন্ত্রাসের রাজনীতি ভাল বোঝে। সন্ত্রাস-বাংলাভাই সৃষ্টি থেকে শুরু করে জঙ্গীবাদ সৃষ্টি করা, দুর্নীতি করা, অর্থপাচার নানা ধরনের কর্মকা- তারা করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, কোন কারণ নেই এভাবে বাস আগুন দিয়ে পোড়ানোর। কিন্তু বিএনপি করছে নির্বাচনটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই। মানুষের ভোট পাচ্ছে না, মানুষের আস্থা-বিশ্বাস হারিয়েছে। তারা ভোটে হারবে না কেন? দলের নেতা বানিয়েছে কাকে? মামলার আসামি, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারির সাজাপ্রাপ্ত। যে (তারেক রহমান) দেশ থেকে পলাতক তাকে বানানো হলো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান! বাংলাদেশে বিএনপির এমন কোন যোগ্য নেতা নেই যিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হতে পারে? ফেরারি খুনের মামলার আসামিকে করেছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। আর তাদের নেত্রী (খালেদা জিয়া) তিনিও সেই এতিমদের অর্থ আত্মসাতকারী সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তারপরও তাঁকে বাসায় থাকতে দেয়া হয়েছে। বিএনপির এমপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, সংসদ একটি পবিত্র জায়গা। বিএনপির সদস্যকে বলব- এভাবে এখানে অসত্য তথ্য নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত না করাই ভাল। এটা মানুষ বিশ্বাস করবে না। আর সন্ত্রাসী কর্মকা-টা যেন বিএনপি বন্ধ করে। এটাই আমার আবেদন থাকবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে এমনিতেই মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তারা কষ্টে আছেন। তাদের সাহায্য করে যেতে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। অর্থনীতির চাকাটা সচল রাখতে। আর সেখানে তারা এই সুযোগে চাচ্ছে মানুষের দুঃসময়টাকে কাজে লাগিয়ে সরকারকে বদনাম করা। আর নিজেদের ফায়দা লুটায়। এই ফায়দাটা লুটতে পারবে কিনা জানি না। কারণ মানুষ এখন অন্ধ নয়। তারা সব দেখে-জানে। এ বিষয়টি বিএনপির নেতাদের বুঝা উচিত। টেকনোলজির কারণে সব ধরা পড়ে যায়। আমার মনে হয় তারা আর অসত্য তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে না। প্রধানমন্ত্রীর আগে অনির্ধারিত বিতর্কের সূত্রপাত করে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ উপ-নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সংসদে গাড়ি পোড়ানোর বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই ঘটনায় বিভিন্ন থানায় ১৫টি মামলা হয়েছে, পুলিশের পেশাদারিত্ব নিয়ে অনেক প্রশ্ন আসছে। পত্রিকায় এসেছে মামলার কথা বাদী নিজেই জানে না। পুলিশ বলছে, ভিডিও ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি- ইশরাক হোসেন কোভিড-১৯ আক্রান্ত। জুয়েলও কোভিড-১৯ আক্রান্ত। আমাদের ছাত্রদলের আরেকজন নেতা চেন্নাই হাসপাতালে এক বছর ধরে চিকিৎসাধীন। তারা কী করে মামলার আসামি হয়? এটা জুলুম। অন্যায়। আমরাও চাই একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপ না করে অবশ্যই তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা বের করা উচিত। তিনি এ সময় সংসদীয় কমিটি গঠন করে প্রকৃত ঘটনা জাতির সামনে তুলে ধরার জন্য স্পীকারের কাছে দাবি জানান।
×