ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পেন্টাগনের প্রধান হচ্ছেন এক নারী

পরাজয় স্বীকারের একদিন পর ট্রাম্পের ইউটার্ন

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ১৭ নভেম্বর ২০২০

পরাজয় স্বীকারের একদিন পর ট্রাম্পের ইউটার্ন

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ দিন না পেরোতেই ইউটার্ন নিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় রবিবার সন্ধ্যায় তিনি এক টুইটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাইডেনের জয় স্বীকার করে নিলেও সোমবার দুপুরে আরেক টুইটে নিজেরই জয় দাবি করেছেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে। টুইটারের পাশাপাশি ফেসবুকে নিজের আইডিতে এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, আমি এই নির্বাচনে জিতেছি। তার এ পোস্টে অনেকে উপহাস-বিদ্রুপ করে মন্তব্য করেন। খবর বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, রয়টার্স, ইউএসএ টুডে, লস এ্যাঞ্জেলেস টাইমস ও ফক্স নিউজের। গিনো তং নামে একজন লেখেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় নাছোড়বান্দা!’ ফিরাজ মোকাদ্দেম নামে একজন লেখেন, হ্যাঁ জনাব, আপনিই জিতেছেন, হোয়াইট হাউস ছাড়বেন না। তালা বদলে ফেলুন, তাহলে তন্দ্রাচ্ছন্ন জো ভেতরে ঢুকতে পারবে না। অবশ্য কেউ কেউ ট্রাম্পকে এই লড়াইয়ের ‘শেষ না দেখে’ হাল না ছাড়ার পরামর্শও দেন। আগের টুইটে বাইডেনের জয়ের কথা স্বীকার করে রিপাবলিকান এ রাজনীতিক বলেছিলেন, তিনি জিতেছেন, তবে নির্বাচনে জালিয়াতি করে। নির্বাচনে কোন পর্যবেক্ষক ছিল না। ভোট গণনা করেছে কট্টর বামপন্থী ব্যক্তিমালিকানার প্রতিষ্ঠান ডমিনিয়ন, যাদের বিরুদ্ধে অনেক দুর্নাম রয়েছে। তাদের সরঞ্জামগুলো খুবই বাজে, যা টেক্সাসের ভোট গণনার জন্যও যথাযথ ছিল না। জো বাইডেনকে অন্যায়ভাবে জিতিয়ে দিতে ভুয়া মিডিয়া ভূমিকা রেখেছে। আমি কিছুই মানি না। আরেকটি টুইটে তিনি বলেন, তিনি (বাইডেন) শুধুমাত্র ভুয়া সংবাদ মাধ্যমের চোখে জিতেছেন। আমি কিছুই স্বীকার করিনি। আমাদের এখনও অনেক পথ পাড়ি দেয়া বাকি আছে। এটা ছিল একটি পাতানো নির্বাচন। ট্রাম্পের এই টুইটের পর রয়টার্স, এনবিসি নিউজসহ যুক্তরাষ্ট্রের আরও কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ট্রাম্পের এই টুইটে ‘পরাজয় স্বীকারের’ বার্তা রয়েছে বলে খবর প্রকাশ করে। ট্রাম্পের রবিবারের টুইটগুলো নিয়ে পরে এনবিসির ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে বাইডেনের পছন্দের শীর্ষে থাকা হোয়াইট হাউসের সম্ভাব্য চীফ অব স্টাফ রন ক্লাইন বলেন, জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হবেন নাকি হবেন না তা ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইটার ফিড ঠিক করবে না। আমেরিকার জনগণ সেটা ঠিক করবেন। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বাইডেন ৩০২টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেয়েছেন। অন্যদিকে ট্রাম্পের ঝুলিতে আছে ২৩২টি। ট্রাম্প ‘ভোট চুরির’ অভিযোগ তুলে পুনঃগণনার দাবি জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে মামলা করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ অঙ্গরাজ্যে ‘ভোট চুরির’ অভিযোগ খারিজ করে দেয়া হয়েছে। এখন যা অবস্থা তাতে আইনের মাধ্যমে ভোটের ফল পাল্টে যাওয়ার সুযোগ খুবই কম বলে মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞরা। কারণ নির্বাচনী কর্মকর্তারাই বলেছেন, ভোটে অনিয়মের বড় ধরনের কোন প্রমাণ নেই। বরং ট্রাম্প তার প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেনের বিজয় কালক্ষেপণ করার এবং আমেরিকার নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর থেকে দেশটির জনগণের আস্থা নষ্ট করার পাঁয়তারা করছেন। পেন্টাগণের প্রধান হচ্ছেন নারী ॥ সদ্যসমাপ্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী জো বাইডেন। ভোটে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তিনি পরাজিত করেছেন। এই নির্বাচনে বিভিন্ন রেকর্ড দেখেছে মার্কিনীরা। দেশটির নির্বাচনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৬ কোটির বেশি ভোটার ভোট দিয়েছেন এবার। নির্বাচিত ও পরাজিত দুই প্রার্থীই পেয়েছেন রেকর্ড ভোট। সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রার্থী হিসেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন বাইডেন। প্রথমবারের মতো নারী ও কৃষ্ণাঙ্গ ভাইস প্রেসিডেন্ট পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এর সুবাদে নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের স্বামী ডগলাস এমহফ হচ্ছেন দেশটির প্রথম ‘সেকেন্ড জেন্টেলম্যান’। আলোচ্য রেকর্ডগুলো হয়েছে ভোটের ফল চূড়ান্ত হওয়ার পরেই। এবার আরেকটি রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেন। পেন্টাগণের মতো স্পর্শকাতর স্থানে প্রধান করতে যাচ্ছেন আরও এক নারীকে। তিনি হলেন মিশেল ফ্লাওনোয়ি। মার্কিন গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে বাইডেন ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এক নারীকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিতে যাচ্ছেন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের আমলে পেন্টাগণের ডেপুটি এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এবং বারাক ওবামার আমলে আন্ডার সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করা নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মিশেল ফ্লাওনোয়িকেই পরবর্তী প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিতে যাচ্ছেন বাইডেন। আর তা সত্যি হলে মিশেল ফ্লাওনোয়ি প্রথম নারী প্রধান হচ্ছেন পেন্টাগণের। পেন্টাগণের ইতিহাসে গত চার বছর ছিল সবচেয়ে অস্থির সময়। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের মেয়াদকালে পেন্টাগণের প্রধান হিসেবে দায়িত্বে এসেছেন পাঁচজন। সর্বশেষ এই পদ থেকে বিদায় নিতে হয়েছে মার্ক এসপারকে। সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, মিশেল যদি শেষ পর্যন্ত ওই পদে মনোনীত হয়, তবে তাকে শুরুতেই বেশ ঝামেলা সামলাতে হবে। বাইডেনের প্রতিশ্রুতি অনুসারে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন বিতরণে সেনাসদস্যদের কাজে লাগাতে হবে তাকে। শুধু তাই নয় এ কাজ করতে হবে তাকে কম টাকার মধ্যেই। বাইডেনের উপদেষ্টাদের একজনের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেমোক্র্যাটরা অনেক আগে থেকেই গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে নারীদের নিয়োগ দিতে চাইছে; বিশেষত যেসব পদে নারীরা এর আগে কখনও আসেননি, সেসব পদে তাদের নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা অনেক আগের। ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটন জয়ী হলে মিশেল ফ্লাওনোয়িকে পেন্টাগণের প্রধান হিসেবে আনার পরিকল্পনা ছিল। এ কারণে বাইডেনের সম্ভাব্য মন্ত্রিসভায় ফ্লাওনোয়ির থাকাটা এক ধরনের নিশ্চিত ধরা যায়। মিশেল ১৯৯০ সালে পেন্টাগণের সঙ্গে যুক্ত হন। সর্বশেষ বারাক ওবামার আমলে ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত আন্ডার সেক্রেটারি অব ডিফেন্স ফর পলিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। উদারনৈতিক হিসেবে পরিচিত ৫৯ বছর বয়সী ফ্লাওনোয়ি বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষানীতি নিয়ে সতর্ক; বিশেষত গত বছর এ নিয়ে তিনি প্রচুর কথা বলেছেন। বাইডেনের মন্ত্রিসভায় থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেন ওবামা ॥ নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মন্ত্রিসভায় কোন দায়িত্ব দিতে চাইলেও নেবেন না সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। কারণ, তিনি দায়িত্ব নিলে তাকে ছেড়ে যাবেন মিশেল ওবামা। নিজের আত্মজীবনী গ্রন্থ প্রকাশের আগে রবিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএসকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এমনটি জানিয়েছেন তিনি। ২০০৯-১৭ সাল পর্যন্ত ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন বাইডেন। জানুয়ারি মাসে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন। ট্রাম্পকে হারানোর নির্বাচনী লড়াইয়ে বাইডেনের হয়ে প্রচারে নেমেছিলেন ওবামা। বাইডেনকে এখন কিভাবে সহযোগিতা করবেন জানতে চাইলে ওবামা বলেন, আমার পরামর্শ তার দরকার নেই। সম্ভাব্য যে কোন উপায়ে আমি তাকে সহযোগিতা করব। হোয়াইট হাউস বা অন্য কিছু নিয়ে হুট করে কাজের কোন পরিকল্পনা আপাতত আমার নেই। ওবামা আমলের দুই প্রবীণ রাজনীতিক সুসান রাইস ও মিশেল ফ্লাওনোয়ি বাইডেনের মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মন্ত্রিসভার কোন দায়িত্বের প্রস্তাব পেলে বিবেচনা করবেন কিনা জানতে চাইলে ওবামা বলেন, কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলো আমি মিশেলের কারণে করব না। সে বলবে, কী? তুমি কী করতে যাচ্ছ?
×