ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আবারও বাসে আগুন, বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০১:৫৪, ১৬ নভেম্বর ২০২০

আবারও বাসে আগুন, বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত প্রধানমন্ত্রীর

সংসদ রিপোর্টার ॥ জাতির পিতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধায় রবিবার রাতে জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে এই শ্রদ্ধা জানানো হয়। যা জাতীয় সংসদের ইতিহাসে এক অনন্য মাইলফলক। এই সাধারণ আলোচনার সমাপ্তি টানতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীতে বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় বিএনপির জড়িত থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর ওপর আনা প্রস্তাবের ওপর সমাপনী বক্তৃতা করতে গিয়ে ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন কথা নেই বার্তা নেই, হঠাৎ করে বাসে আগুন দিয়ে অগ্নিসন্ত্রাস। কেন, কী স্বার্থে? কিসের জন্য। নির্বাচন হয়। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার নামে অংশগ্রহণ করে। টাকা পয়সা যা পায় পকেটে নিয়ে রেখে দেয়। ইলেকশনের দিন ইলেকশনও করে না। এজেন্টও দেয় না। কিছুই করে না। মাঝ পথে ইলেকশন বয়কটের নাম দিয়ে বাসে আগুন দিয়ে পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। এটা উদ্দেশ্যটা কী? রবিবার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে আনা সাধারণ প্রস্তাবের ওপর আলোচনার সমাপনী বক্তব্যে তিনি জাতির পিতার কর্মময় জীবন তুলে ধরেন। এ সময় জাতির পিতার কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ-বাকশাল গঠনের কারণ ও প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। এর আগে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতাকে শ্রদ্ধা জানাতে ১৪৭ বিধিতে সাধারণ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। করোনা সংক্রমণের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের উন্নয়ন-কর্মকা- কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। তবে এটাও আমরা মোকাবেলা করে চলছি। করোনার মধ্যেই এলো ঘূর্ণিঝড়, বন্যা। এরই মধ্যে কোন কথা নেই বার্তা নেই- হঠাৎ করে বাসে আগুন দিয়ে অগ্নিসন্ত্রাস। বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, দেশের মানুষের একদিকে করোনা সামলাচ্ছি, অপরদিকে অর্থনীতির গতি যাতে সচল থাকে তার ব্যবস্থা নিয়েছি। যেখানে যা দরকার আমরা দিয়ে মানুষের জীবন-যাত্রা যাতে সচল থাকে সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনি বলেন, করোনার চিকিৎসার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। আজকে ভ্যাকসিন আবিষ্কার হচ্ছে। টাকা পয়সা দিয়ে ইতোমধ্যে ভ্যাকসিন কেনার ব্যবস্থা আমরা রেখে দিয়েছি। যেন যখনই চালু হবে আমরা এটা নিতে পারি। সেই ব্যবস্থটা আমরা নিয়েছি। যখনই যা প্রয়োজন আমরা করে যাচ্ছি। সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ের নানা দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা অনেক কাজ করেছি। দারিদ্র্যের হার কমাতে পেরেছি। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ এখন আর ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে চলে না। নিজেদের অর্থে বাজেট দিতে পারছি। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের চ্যালেঞ্জ আমরা গ্রহণ করেছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। বিজ্ঞান-প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন জাতি গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছি। চিকিৎসাসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর ওপর জাতীয় সংসদে তার আনা প্রস্তাবের ওপর বক্তব্য রাখায় সরকার ও বিরোধী দলের সকল সদস্যকে ধন্যবাদ জানান। বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের দ্রুত উন্নয়ন ছিল বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য। এজন্যই তিনি দেশের সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। গঠন করেছিলেন বাকশাল। অথচ এ নিয়ে নানা সমালোচনা হয়েছে। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, ভিক্ষুক জাতির কোন ইজ্জত নেই। তাই তিনি এই জাতিকে সম্মানিত করতে চেয়েছিলেন। তিনি পাঁচ বছর সময় চেয়েছিলেন উৎপাদন বাড়িয়ে এই জাতিকে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে। এমন একটি ব্যবস্থা চালু করতে চেয়েছিলেন যাতে সকল মানুষ তার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে। ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করতে চেয়েছিলেন। এজন্য গবর্নর ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। গবর্নরদের প্রশিক্ষণও শুরু হয়েছিল। দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করতে সিস্টেম পাল্টাতে চেয়েছিলেন। ৬৫ হাজার গ্রামে সমবায় করতে চেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু পাঁচ বছর সময় পেলে বাংলাদেশ আরও অনেক আগেই উন্নতির পথে এগিয়ে যেত। বঙ্গবন্ধুর নতুন ব্যবস্থা ছিল জনগণের গণতন্ত্র। অথচ পুরো জিনিসটাকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে নস্যাত করে দেয়া হয়েছে। পাকিস্তানের প্রভুদের দাসত্বকে তারা ভুলতে পারেনি। তাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। এটাই হলো দুর্ভাগ্য। যে কাজ তিনি করতে চেয়েছিলেন তা তিনি করতে পারেননি। ফলে ৪৯ বছরেও দেশ উন্নত দেশ হতে পারেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলে দেশের উন্নতি ও অগ্রগতি হচ্ছে। আমরা দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করছি। বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য অর্জনে কাজ করছি। বাংলাদেশ এখন আর ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে চলে না। নিজের অর্থে পদ্মা সেতু তৈরি করছি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য কাজ করছি। রবিবার সন্ধ্যা ৬টায় জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশন আবার শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। বিশেষ অধিবেশনের মুলতবি বৈঠকের শুরুতে তিনি মুজিববর্ষে সংবিধানের সুফল বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে অঙ্গীকার করার আহ্বান জানান। এ সময় তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর দর্শন ধারণ করে ১৯৭২ সালের সংবিধান যেন বাংলার মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণের মধ্য দিয়ে অর্থবহ হয়। সংবিধানকে সুরক্ষিত ও সমন্বিত রাখার ক্ষেত্রে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। সেই লক্ষ্য অর্জনে আমাদের কাজ করতে হবে। অধিবেশনের শুরুতে দেয়া বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবন নিয়ে দেশী-বিদেশী মনীষীদের উদ্ধৃতি ও লেখার অংশ বিশেষ তুলে ধরেন। পরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মময় ও বর্ণাঢ্য জীবনের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন সরকার ও বিরোধী দলের সদস্যরা। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃত্ব সংসদে উত্থাপিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর শেষ দিনের আলোচনায় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১১ সাংসদ অংশগ্রহণ করেন। অপর সংসদ সদস্যরা হলেন- বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সাবেক পাটমন্ত্রী ইমাজউদ্দিন প্রামাণিক, বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের, চীফ হুইপ নূরে আলম চৌধুরী, জাতীয় পার্টির নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ, অধ্যাপক আলী আশরাফ, আওয়ামী লীগের সদস্য সফিকুর রহমান ও আয়েশা খান। এ সময় রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সংসদ ভবনে অবস্থিত তার গ্যালারি থেকে বঙ্গন্ধুর ওপর আলোচনা শোনেন এবং প্রত্যক্ষ করেন। স্পীকার বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। ১৯৭২ সালের সংবিধানের মূল প্রতিপাদ্য সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে ভবিষ্যত বংশধররা যদি শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারে তাহলে আমার জীবন সার্থক হবে, শহীদদের রক্তদান সার্থক হবে। সবাইকে এই মর্মকথা উপলবব্ধি করতে হবে। মূল প্রতিপাদ্য স্মরণ রাখতে হবে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে হবে। এই সংবিধানকে পরিপূর্ণভাবে কার্যকর করার দায়িত্ব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ভবিষ্যত প্রজন্মের ওপরই ন্যস্ত করেছেন। বঙ্গবন্ধুর দর্শন ধারণ করে এই সংবিধান যেন বাংলার মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণের মধ্য দিয়ে অর্থবহ হয়। সেই লক্ষ্য অর্জনে আমাদের কাজ করতে হবে। এই সংবিধান তখনই সার্থক হবে যখন বাংলার মানুষ ক্ষুধা, দারিদ্র্য, বঞ্চনা ও বৈষম্য থেকে মুক্ত হয়ে উন্নত জীবন পাবে।’ সেই লক্ষ্য অর্জনে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে ড. শিরীন শারমিন বলেন, ‘বাঙালীর প্রাণের গভীর হতে উৎসারিত নির্মল ভালবাসায় অশ্রুধারায় সিক্ত হৃদয় নিংড়ানো আবেগ ও পরশ শ্রদ্ধায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব থাকবেন সদা সমুজ্জল। ইতিহাসের পাতায় চিরজাগ্রত অমর এক নাম শেখ মুজিব। তারই প্রেরণায় বাঙালী এগিয়ে যাবে জীবনের জয়গান। এক মুজিবের রক্ত থেকে লক্ষ মুজিব জন্ম নেবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যে তুলে ধরে স্পীকার বলেন, ‘গত ১৩ নবেম্বর ২০২০ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার এক বক্তৃতায় বলেন, আমি মানবতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে অনুধাবন করে মানবতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষের উন্নতির জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
×