ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সৌমিত্র ছিলেন জাত অভিনেতা ॥ ববিতা

প্রকাশিত: ২২:১১, ১৬ নভেম্বর ২০২০

সৌমিত্র ছিলেন জাত অভিনেতা ॥ ববিতা

মনোয়ার হোসেন ॥ অস্কারজয়ী নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের বেশ কিছু কালজয়ী সৃষ্টির একটি অশনি সংকেত। এই ছবিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন এদেশের নন্দিত অভিনেত্রী ববিতা। অনঙ্গ বউয়ের চরিত্রে রূপ দিয়ে দিয়েছিলেন এক সময়ের তুমুল দর্শকপ্রিয় এই নায়িকা। আর সেই ছবিতে গঙ্গাচরণের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তাই সৌমিত্রকে নিয়ে রয়েছে ববিতার ভিন্ন রকমের অনুভূতি। রয়েছে নানা রকমের স্মৃতি। বরেণ্য এই অভিনেত্রীর সেসব স্মৃতি আর অনুভবের কথা মেলে ধরা হলো এই লেখায়। আলাপচারিতায় ববিতা বলেন, আমি একজন সৌভাগ্যবতী অভিনয়শিল্পী। তাই ১৯৭৩ সালে সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে অভিনয়ের আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। তখন আমার বয়স পনেরো। চলছিল কিশোরকাল। এমন সময় এতবড় নির্মাতার ডাক পেয়ে চমকে যাই। এর পর যখন জানতে পারি আমার বিপরীতে অভিনয় করবেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তখন চমক পরিণত হয় বিস্ময়ে। পরবর্তীতে ছবির সেটে গিয়ে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকি সৌমিত্রের দিকে। মনে খুব সংশয় ছিল যে এতবড় অভিনেতার সঙ্গে তাল মেলাতে পারব কিনা। শেষ পর্যন্ত তারই সহযোগিতায় সহজেই উতরে যাই সেই যাত্রায়। সহশিল্পী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়ের মূল্যায়ন করে ববিতা বলেন, তিনি ছিলেন জাত অভিনেতা। সেই অভিনয় এতটাই ন্যাচারাল ছিল যে সেটাকে অভিনয় মনে হতো না। সহজাত অভিনয়ের মাধ্যমে চরিত্রকে ধারণ করতে পারতেন খুব সহজে। অভিনয়ের এই গুণটি সব অভিনেতার থাকে না। এ কারণেই অভিনয়শিল্পী কিংবা চরিত্রাভিনেতা হিসেবে আমার বিবেচনায় বিশ্ব সেরাদের একজন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। অশনি সংকেত ছবির শূটিং হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের শান্তি নিকেতনে। সেই স্মৃতির কথা মেলে ধরে ববিতা বলেন, চলচ্চিত্রটির শূটিং চলাকালে একদিন আমার মন খুব খারাপ ছিল। সেটা বুঝতে পেরেছিলেন সৌমিত্র। তাই আমাকে বললেন, মন খারাপ করে বসে আছ কেন? আর কাঁদছইবা কেন? কী হয়েছে? জবাবে বললাম, দাদা, আজ তো রোজার ঈদ। উৎসবের সময় পরিবার-পরিজন ছেড়ে দূরদেশে পড়ে আছি। কোন কিছুতেই মন বসছে না? প্রত্যুত্তরে সৌমিত্র বললেন, এ নিয়ে চিন্তা করো না। মাথা থেকে সবকিছু ঝেড়ে ফেলে শূটিংয়ে মনোযোগ দাও। শূটিং শেষে বিকেলের পর তোমার ঈদ উদ্যাপিত হবে। এর পর ঠিকই তিনি চমকে দিলেন আমাকে। সন্ধ্যায় তিনি নানা রকমের খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করলেন। শুধু তাই নয়, সঙ্গে ছিল তারাবাতি, মোমবাতিসহ ঈদ উ্্দযাপনের নানা অনুষঙ্গ। আর এভাবেই সেই ঈদটি আমার জীবনেও হয়ে রইল স্মরণীয়। সৌমিত্রের বহুমাত্রিক প্রতিভায় মুগ্ধ হয়েছিলেন ববিতা। সে প্রসঙ্গে বলেন, শূটিংয়ের ফাঁকে তাকে কবিতা আবৃত্তি করতে দেখতাম। দারুণ লাগত। আবার ফুরসত পেলেই শূটিং স্পটেই শরীরচর্চাটাও সেরে নিতেন। সৌমিত্রের অসুস্থতা প্রসঙ্গে এই অভিনেত্রী বলেন, প্রতিদিনই পত্রিকা বা টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতাম। মনে মনে চাইতাম তিনি যেন সুস্থভাবে আবার ফিরে আসেন। কিন্তু সবার সব চাওয়া যেমন পূরণ হয় না তেমনি আমারটাও পূরণ হলো না। আমরা হারালাম বাংলা চলচ্চিত্রের এক কালজয়ী অভিনয়শিল্পী ও অভিভাবককে।
×