ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভোট জালিয়াতির অভিযোগ হাস্যকর ॥ নির্বাচনী কর্মকর্তা

যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের পক্ষে বিক্ষোভ, সহিংসতা ॥ গ্রেফতার ২০

প্রকাশিত: ২২:০৯, ১৬ নভেম্বর ২০২০

যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের পক্ষে বিক্ষোভ, সহিংসতা ॥ গ্রেফতার ২০

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ সদ্য সমাপ্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কারচুপি ও জালিয়াতি নিয়ে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিযোগকে হাস্যকর বললেন তারই নিযুক্ত নির্বাচনী কর্মকর্তা বেন হোভল্যান্ড। আর ভোট জালিয়াতির প্রতিবাদে রাজধানী ওয়াশিংটনের রাজপথে নেমেছে ট্রাম্প সমর্থকরা। তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। বিক্ষোভ যখন সহিংসতায় রূপ নেয় তখন ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে পরাজয় মেনে নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। খবর বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, রয়টার্স, ইউএসএ টুডে, লস এ্যাঞ্জেলেস টাইমসের। নির্বাচন নিয়ে ট্রাম্পের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এক সাক্ষাতকারে বেন হোভল্যান্ড বলেন, চারপাশে যেসব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ঘুরছে তার পরিণতি রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের ইলেকশন এ্যাসিসট্যান্স কমিশন পরিচালনা করেন বেন হোভল্যান্ড। অন্য কাজের পাশাপাশি ভোটিং মেশিন পরীক্ষা এবং অনুমোদন করা এই কমিশনের দায়িত্ব। গত বছর এই কমিশনে হোভল্যান্ডকে মনোনীত করেন ট্রাম্প। আর সিনেট সর্বসম্মতক্রমে তা অনুমোদন করে। নির্বাচন তদারকি করা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে থাকেন হোভল্যান্ড। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবার দেয়া ওই সাক্ষাতকারে হোভল্যান্ড বলেন, সর্বনিম্ন (পরিণতি) হলো এটা আমাদের নির্বাচন পরিচালনা করা পেশাজীবীদের জন্য অপমানজনক আর ধারণা করছি সেটাই এর সবচেয়ে মারাত্মক ফল। আমাদের লোকজন তাদের কাজ করছে কিন্তু এখন তা করতে তারা নিরাপদ বোধ করছেন না। সেটা একটা বিপর্যয়, আশঙ্কাজনক। তারা সবাই জনগণের সেবক। এই কাজগুলো তারা সম্মান পেতে কিংবা ধনী হওয়ার জন্য করে না। নির্বাচনে ট্রাম্পের পক্ষে পড়া লাখ লাখ ভোট মুছে দেয়া হয়েছে বলে তিনি যে অভিযোগ এনেছেন সেটিকে ‘মোটামুটি বিভ্রান্তিকর’ বলে মন্তব্য করেন হোভল্যান্ড। তিনি বলেন, আমি মনে করি যদি আমরা এই ধরনের কোন কিছু দাবি করতে চাই তাহলে তার সমর্থনে বিশ্বাসযোগ্য কিছু থাকা উচিত। আমার বিশ্বাস এই ধরনের বক্তব্যতে কিছু যায় আসে। এগুলোর কারণে (নির্বাচনী) প্রক্রিয়ার ওপর থেকে মার্কিন জনগণ বিশ্বাস হারাতে পারে। ট্রাম্প ও তার সহযোগীদের আনা অভিযোগগুলো আইনী প্রক্রিয়া থেকে খুবই আলাদা বলেও মনে করেন হোভল্যান্ড। তিনি বলেন, আমরা টুইটার কিংবা বক্তৃতার মঞ্চে বলিষ্ঠ বক্তব্য দেখতে পাচ্ছি আর জনশ্রুতি এবং হাস্যকর প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা হচ্ছে দেখছি। এগুলোর পরস্পরের সঙ্গে কোন ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা ॥ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণের প্রায় দুই সপ্তাহের মাথায় সহিংসতায় জড়াল মার্কিনীরা। রবিবার দিনের শুরুতেই ওয়াশিংটন ডিসির বেশ কিছু এলাকায় হাতাহাতি, ছুরিকাঘাত, ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এসব সহিংসতায় জড়িত অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে অন্তত ২০ জনকে। ভোট জালিয়াতি নিয়ে ট্রাম্পের দাবির সপক্ষে ওয়াশিংটন ডিসির রাস্তায় নেমে আসেন হাজার হাজার সমর্থক। এসময় ‘ভোটচুরি বন্ধ করো’, ‘প্রত্যেকটি ভোট গণনা করো’ প্রভৃতি স্লোগান দেন তারা। অনেকের হাতেই ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ স্লোগানধারী পতাকা দেখা গেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর তথ্যমতে, এদিন হোয়াইট হাউসের অদূরে ফ্রিডম প্লাজায় সমবেত হয়েছিলেন অন্তত ১০ হাজার ট্রাম্পভক্ত। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে করোনাভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমণ সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগের মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি, ছিল না সামাজিক দূরত্বের বালাইও। পরে তারা মার্কিন সুপ্রীমকোর্টের দিকে মিছিল নিয়ে যান। রাত নামতেই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ক্রমেই সহিংস হয়ে ওঠে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওতে বেশকিছু জয়গায় মারামারি ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপের দৃশ্য দেখা গেছে। পুলিশ জানিয়েছে, সংঘর্ষস্থল থেকে বেশ কয়েকটি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। একজনের ওপর ছুরিকাঘাতের ঘটনাও ঘটেছে। গ্রেফতার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হামলা ও অস্ত্র রাখাসহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে। সংঘর্ষের সময় অন্তত দুই পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। শহরের জরুরি মেডিক্যাল সেবা বিভাগের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ছুরিকাঘাতে আহত এক ব্যক্তিকে দ্রুত স্থানীয় একটি ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, স্থানীয় সময় রাত ৮টার দিকে ট্রাম্প সমর্থক ও তাদের পাল্টা বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় ছুরিকাঘাত হন ওই ব্যক্তি। সংঘর্ষের সময় অনেকের হাতেই লাঠিসোটা দেখা গেছে। যদিও ট্রাম্প তার সমর্থকদের সহিংসতায় উস্কানি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার বিক্ষোভ চলাকালে এর পাশ দিয়ে গাড়িবহর নিয়ে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ওয়াশিংটনের রাজপথে ট্রাম্প সমর্থকরা ॥ রাজধানী ওয়াশিংটনের রাজপথে নেমেছে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থকরা। শনিবার রাজপথে সমবেত হয়ে মার্কিন নির্বাচনে ‘ভোট জালিয়াতির’ বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন তারা। নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী বাইডেনের বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর বড় ধরনের এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হলো। হাজার হাজার মানুষ এতে অংশ নেয়। প্রথম থেকেই নির্বাচনে পরাজয় মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছেন ট্রাম্প। বিক্ষোভকারীদের মুখেও ট্রাম্পের এমন বক্তব্য প্রতিধ্বনিত হয়। হোয়াইট হাউস সংলগ্ন ফ্রিডম প্লাজা থেকে সুপ্রীমকোর্ট এলাকা পর্যন্ত এ কর্মসূচীতে ভোট চুরির বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে বিক্ষোভকারীরা। ৭ নবেম্বর বাইডেনের জয় নিশ্চিত হওয়ার পর পরই বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ করেছে তার সমর্থকরা। পরাজয় মেনে নেয়ার ইঙ্গিত ট্রাম্পের ॥ সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেনের বিজয় মেনে নিতে অস্বীকার করে আসা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার অবস্থান বদলানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। নির্বাচনে জালিয়াতির ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে বেশ কিছু অঙ্গরাজ্যে মামলা করেছেন তিনি। ট্রাম্পের দাবি, তিনিই নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প পূর্ববর্তী অবস্থান থেকে খানিকটা সরে এসে বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট থাকবেন কিনা তা সময়ই বলে দেবে। করোনাভাইরাস টাস্কফোর্স সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প এসব কথা বলেছেন। নির্বাচন শেষ হওয়ার পর দীর্ঘ সময় ক্যামেরার সামনে কথা বলা থেকে বিরত থাকেন ট্রাম্প। শুক্রবার হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে আয়োজিত এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে সেই নীরবতা ভাঙ্গেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
×