ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আশিক ইসলাম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ॥ কোথাও কেউ নেই

প্রকাশিত: ২৩:৫২, ১৫ নভেম্বর ২০২০

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ॥ কোথাও কেউ নেই

পড়ন্ত বিকেলের সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়েছে চতুর্পাশে। শোনা যাচ্ছে চায়ের কাপের ‘টুং’ ‘টাং’ শব্দ। একাডেমিক ক্লাস, পরীক্ষা, ল্যাব শেষে একত্রিত হয়েছে যে যার মতো করে। কেউ কেউ টেবিলে, কেউ টাইলস্ দিয়ে বাঁধানো গাছের গোড়ায়, কেউবা আবার শান বাঁধানো পুকুর ঘাটে বা খোলা মাঠের সবুজ ঘাসের উপরে গোল হয়ে বসে। চায়ের কাপে চুমুকের ফাঁকে খোশ গল্পে মেতেছে সবাই গল্প-আড্ডায়। বলছিলাম করোনার পূর্বে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন প্রাণচঞ্চল আড্ডা নিয়ে। বর্তমানে সেসব আড্ডাস্থলে নেমে এসেছে সুনশান নিরবতা। সবুজের সমারোহে ঘেরা ৭৫৩ একরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এভাবেই কোলাহল, প্রাণচঞ্চলতায় ভরে ওঠে ক্যাম্পাসের প্রতিটি প্রান্তর। বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বর, শহীদ মিনার, শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা মুক্তমঞ্চ, শাবাশ বাংলাদেশ চত্বর, বুদ্ধিজীবী চত্বর, জোহা চত্বর, ইবলিশ চত্বর, টিএসসিসি চত্বর, হবিবুর মাঠ, চারুকলা চত্বর, চারুকলার রেললাইন, বধ্যভূমি, পশ্চিমপাড়া, পলাশ চত্বরসহ ক্যাম্পাসের প্রধান আড্ডাস্থলগুলো আজ প্রাণহীন। কোথাও কেউ নেই। করোনায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ঘাস, লতা-পাতায় ছেয়ে গেছে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আড্ডাস্থলগুলো। শিক্ষার্থীদের প্রাণের টুকিটাকি চত্বর এখন পাখিদের দখলে। ক্যাম্পাসের এই ব্যস্ততম জায়গায় পাখির কিচিরমিচির শব্দে ভরপুর। সেখানে আর কেউ চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে হারিয়ে যাচ্ছে না অতীত স্মৃতিচারণে। নেই কোন কোলাহল, নেই কোন গিটারের সুর। ইবলিশ চত্বরে আড্ডায় বসে বিকেলের সূর্য অস্ত দেখতো অনেকেই সেখানে আজ কেউ নেই। সবুজ ঘাস পুরো জায়গাটা দখল করে রেখেছে। ইবলিশের শান বাঁধানো পুকুর ঘাটে প্রতিদিন কারো না কারো জন্মদিনের আয়োজন হতো, সেখানেও কেউ নেই। বিকেলে শহীদ মিনারের মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড নাচে, গানে, বিতর্কে ভরপুর থাকতো। সেখানেও নেই কোন কোলাহল। বাজে না বাঁশি, ঢোল, তবলা বা খঞ্জনি। তবে করোনার এই ছুটিতে ক্যাম্পাসে সেজেছে নিজের মতো করে। ড. মুহাম্মদ শহিদ্ল্লুাহ ও মমতাজউদ্দিন একাডেমিক ভবনের ধার ঘেঁষে রাস্তায় সুভাস ছড়াচ্ছে নানা প্রজাতির ফুল। গোলাপ, জবা, কৃষ্ণচূড়া ফুল গাছগুলো ছড়াচ্ছে মন মাতানো সৌরভ। ফাঁকা প্যারিস রোডের গগন শিরীষ গাছ, শেখ রাসেল মডেল স্কুলের পাশে মেহগনি গাছের সারিগুলো ফিরে পেয়েছে তাদের সজীবতা। নিরব ক্যাম্পাস সরব পাখির কিচির-মিচির গানে। পাখি কলোনিতে পাখ-পাখির কলকাকলিতে মুখর। তাপসী রাবেয়া হলের পেছনের পুকুরে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখিরা। ঝোপ-ঝাড়ে বাসা বেঁধেছে দোয়েল, ঘুঘু, শালিক, ডাহুকসহ হাজারো পাখি। গাছের ডালগুলোতে খেলা করছে কাঠবিড়ালি। পুকুরগুলোতে ফুটেছে লাল শাপলা। নির্জন ক্যাম্পাস এক অচেনা রূপ ধারণ করেছে। করোনার এই অপ্রত্যাশীত ছুটিতে ক্যাম্পাসের টুকিটাকি চত্বর, প্যারিসরোড, ইবলিশ চত্বরের স্মৃতিগুলো হাতরে বেড়াচ্ছে শিক্ষার্থীরা। দিন শেষে মনে হয় আবার যদি ফিরে পেতাম সেই ক্যাম্পাসের আড্ডা। করোনামুক্ত হয়ে আবারও শিক্ষার্থীদের কোলাহলে, আড্ডা-গানে মুখরিত হবে ক্যাম্পাসের প্রতিটি প্রান্তর সেই প্রত্যাশা।
×