ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হেঁটে ৪ শিক্ষার্থীর ১১ দিন

প্রকাশিত: ২৩:৫১, ১৫ নভেম্বর ২০২০

হেঁটে ৪ শিক্ষার্থীর ১১ দিন

বর্তমান সময়ে পায়ে হেঁটে ভ্রমণ খুবই জনপ্রিয় ভ্রমণ মাধ্যমে পরিণত হচ্ছে। যদিও সবার দ্বারা এটা সম্ভব না। কিন্তু হেঁটে হেঁটেও যে শেখা যায় এটা আমি খুবই প্রখরভাবে উপলব্ধি করেছি এ ভ্রমনের মাধ্যমে। এ পরিভ্রমণ থেকে আমি সময়ানূবর্তিতা, হাল ছেড়ে না দিয়ে এগিয়ে যাওয়া, দলের সাথে মিলেমিশে কাজ করা এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষা পেয়েছি। কথাগুলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিশ্বনাথ ভৌমিকের। সাম্প্রতিক সময়ে তারা ‘হাইকিং ফোর্স বাংলাদেশ’ এর চারজন সদস্য পায়ে হেঁটে ১১ দিনে সিলেট বিভাগের চারটি জেলা পরিভ্রমণ করেছে। ১১ দিনে ৩৬৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এ পরিভ্রমণ শেষ করেছেন তারা। এদের মধ্যে প্রধান ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাসফিকুল হাসান টনি। এছাড়া ছিলেন ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী জাকিয়া রাফা এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আরেক শিক্ষার্থী মুস্তাকিম রহমান। এ ১১ দিনে নানা অভিজ্ঞতা ও বিভিন্ন ধরনের সংস্কৃতির সাথে পরিচয় হয়েছে বলে জানান তারা। পুরো সময়টা তারা পার করেছেন দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে। কখনো হাঁটতে হয়েছে চা বাগানের মধ্যে দিয়ে, কখনো হাওর, কখনো পাহাড়, হাইওয়ে, গ্রামের মেঠোপথ, পাথরের পথ, ইট বসানো রাস্তা কখনো বা আবার যেতে হয়েছে রেললাইনের পথ ধরে। এসময় তারা স্থানীয়দের থেকে নদী এবং নদী দূষণ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন এবং জনসচেতনতামূলক প্রচারণা করেন। এসময় তারা ‘অবিলম্বে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ কর’, ‘নদী উদ্ধার ও খনন করা হোক’, ‘নদী বাঁচাও দেশ বাঁচাও’ এবং ‘গৃহস্থালি ও শিল্প বর্জ্য নদীতে না ফেলে নদীকে দূষণ মুক্ত করুন’ লেখা সম্বলিত লিফলেট প্রদর্শন করেন। ‘দেশ বাঁচাও নদী বাঁচাও’ প্রতিপাদ্যে হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ থেকে তাদের এ যাত্রা শুরু হয়। এরপর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, শমসেরনগর হয়ে কুলাউড়া। এরপর একে একে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, সিলেট সদর, গোয়াইনঘাট, জাফলং, বিছনাকান্দি, কোম্পানিঞ্জ হয়ে সুনামগঞ্জ সদর এবং লালপুর হয়ে তাদের পরিভ্রমণ শেষ হয়। নানা অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিশ্বনাথ ভৌমিক বলেন, হাঁটাহাঁটি ভালো লাগার কারণে মূলত হাইকিং ফোর্স বাংলাদেশ এর সাথে কাজ করা। সামনে আমরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিভ্রমণের মাধ্যমে দেশের মানুষ এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে আরও জানতে পারবো আশা করি। বিশ্বনাথ বলেন, সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় রাতে থাকার অভিজ্ঞতা হয়েছে এবং সিলেটের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ নেওয়ারও সুযোগ হয়েছে। বিশ্বনাথ আরও বলেন, যাত্রা পথে চেষ্টা করেছি যতটা সম্ভব সিলেটের মানুষ ও তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার। চেষ্টা করেছি স্থানীয় মানুষ থেকে নদী এবং নদী দূষণ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার। আবার সেগুলো নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে জনসচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা করেছি। পরিভ্রমণের পাশাপাশি সিলেট বিভাগের উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্পটগুলোর দেখার সুযোগ হয়েছে তাদের। এর মধ্যে শ্রীমঙ্গলের চা-বাগান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মায়াবি ঝর্ণা, জাফলং, তামাবিল স্থলবন্দর, হাকালুকি হাওর, বিছানাকান্দি, উৎমাছড়া, ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর , ফতেপুর চা-বাগান, জাফলং চা-বাগান, সুনামগঞ্জ তাহিরপুরের নীলাদ্রি লেক (শহিদ সিরাজ লেক), শাহজালাল (র) এর মাজার এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অসংখ্য হাওর, খোয়াই নদী, মনুনদী, গোয়াইন নদী, সুরমা এবং রূপের রাণী খ্যাত যাদুকাটা নদী। এছাড়া তারা উপভোগ করেন ভারতের মেঘালয়ের পাহাড় আর মেঘের মিতালী।
×