ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

১৯৮ কোটি টাকার প্রকল্প ॥ প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন করা হবে কক্সবাজারে

দেশের চাহিদা পূরণ করে বাড়বে শুঁটকি রফতানি

প্রকাশিত: ২৩:০৫, ১৫ নভেম্বর ২০২০

দেশের চাহিদা পূরণ করে বাড়বে শুঁটকি রফতানি

ওয়াজেদ হীরা ॥ মাছের অপচয় কমিয়ে আনতে মানসম্মত শুঁটকি উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করবে সরকার। শুঁটকির স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রফতানি বাড়াতে কক্সবাজার শহর সংলগ্ন খুরুশকুলে কারখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে ‘কক্সবাজার জেলায় শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন’ প্রকল্পের আওতায় খরচ করা হবে ১৯৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেক। জানা গেছে, মাছ আহরণের পর অপচয় কমানোর লক্ষ্যে আধুনিক পদ্ধতিতে মানসম্পন্ন শুঁটকির উৎপাদন বৃদ্ধি, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মাছের অপচয় কমিয়ে শুঁটকি উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করবে সরকার। শুঁটকি উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্যাকেজিং ও বিপণনের কাজে জড়িতদের জন্য নিরাপদ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। সারা বছরই কক্সবাজারে শুঁটকি উৎপাদন হচ্ছে। শুঁটকি তৈরি একটি অতি প্রচলিত মাছ সংরক্ষণ পদ্ধতি হলেও বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রেই বাণিজ্যিক শুঁটকি উৎপাদন ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন প্রকার কৃষিজ কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। তাছাড়া শুঁটকি তৈরির সময় মাছ ভালভাবে পরিষ্কার না করা, পরিবেশ, আবহাওয়া ও গুণগতমান রক্ষার অভাবে কাক্সিক্ষত মানসম্পন্ন শুঁটকি তৈরি সম্ভব হয়ে ওঠে না। ধারণা করা হয়, সমুদ্র এলাকায় পচন ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণে ১০ থেকে ৩৫ শতাংশ শুঁটকি নষ্ট হয়। শুঁটকির গুণগতমান উন্নত করার জন্য দেশী উপায়ে তৈরি গ্রীন হাউস মেকানিক্যাল ড্রায়ার খুবই উপযোগী। মৎস্য ও প্রাণি সম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, আমাদের দেশে যেমন শুঁটকির চাহিদা আছে বিদেশেও আছে। আমরা স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রফতানি করতে পারব। অনেক জেলে পরিবারের কর্মসংস্থান হবে। সূত্র বলছে, এ প্রকল্পের আওতায় আধুনিক পদ্ধতিতে বছরে প্রায় ১৪ হাজার মেট্রিক টন মানসম্পন্ন শুঁটকি উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপনার জন্য খরুশকুলে স্বয়ংসম্পূর্ণ শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। অভ্যন্তরীণ বাজারে মানসম্পন্ন শুঁটকির সরবরাহ নিশ্চিত এবং মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের শুঁটকির প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা। পাশাপাশি চার হাজার ৬০৯ জেলে পরিবারের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দবিহীনভাবে সংযুক্ত অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত নেই। তবে আশ্রয়ণ-২ (২য় সংশোধিত) প্রকল্পের ওপর গত ২০১৯ সালের ১৯ জুন পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত পিইসি সভার সুপারিশ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নতুন অননুমোদিত প্রকল্পসমূহের উচ্চ অগ্রাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ‘ভ্যালু এ্যাডেড পণ্য শুঁটকি মাছ ও সাপাই চেন উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটির পরিবর্তে আলোচ্য প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত করে অনুমোদন প্রক্রিয়াকরণের জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিকল্পনা কমিশনকে অনুরোধ করা হয়। প্রকল্পের তথ্যে জানা গেছে, ২৫০০ বর্গমিটার আয়তনের অবতরণ শেড নির্মাণ, ১৮৬০ বর্গমিটার আয়তনের ৪ তলাবিশিষ্ট ল্যাব, অফিস, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কাম ডরমিটরি নির্মাণ, ১০০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন কোল্ড স্টোরেজ (চার চেম্বারবিশিষ্ট) নির্মাণ, দুটি ওয়ে ব্রিজ এবং তিনটি পন্টুন/গ্যাংওয়ে তৈরি, ৩৫০ গ্রীন হাউজ মেকানিক্যাল ড্রায়ার এবং ৩০টি মেকানিক্যাল ড্রায়ার স্থাপন, প্যাকেজিং ফ্যাক্টরি স্থাপন, ৩৬টি শুঁটকি বিক্রয় কেন্দ্র নির্মাণ, ১০টি টয়লেট জোন নির্মাণ, ইটিপি, এসটিপি ও ডব্লিউটিপি নির্মাণ, তিনটি জেনারেটরসহ একটি বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন স্থাপন, ৩টি আরসিসি জেটি নির্মাণ এই প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম। এর আগে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ বলেছেন, শুঁটকি দেশের একটি জনপ্রিয় খাবার হলেও এখনও মানসম্পন্ন উপায়ে মাছ শুকানোর আধুনিক কোন ব্যবস্থা দেশে নেই। প্রথাগতভাবে রোদে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হচ্ছে। অথচ বৃষ্টির দিনে অনেক মাছ শুকাতে না পেরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মানসম্পন্ন উপায়ে শুঁটকি তৈরি করতে পারলে বিদেশেও রফতানি বাড়বে। প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়, মুক্ত জলাশয়ে মাছ শিকারে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে। মুক্ত জলাশয়ে উৎপাদিত মাছের মধ্যে ৭০ ভাগ তাজা মাছ হিসেবে, ২৫ ভাগ শুঁটকি হিসেবে এবং ৫ ভাগ মাছ স্থানীয় প্রক্রিয়াজাত মাছ হিসেবে বিপণন করা হয়। এতে আরও বলা হয়, উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় ৮/১০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ বাণিজ্যিকভাবে শুঁটকি হিসেবে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। মৎস্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২ হাজার ২২৯ টন শুঁটকি রফতানি করা হয়েছিল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সেই রফতানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৮১ টনে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৭০ কোটি টাকা। কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে এর সম্প্রসারণের ফলে ওই এলাকার প্রায় চার হাজার পরিবার বাস্তুচ্যুত হতে পারে। এসব পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ’ প্রকল্পের আওতায় খরুশকুলে নির্মাণাধীন ১৩৯টি বহুতল ভবনে পুনর্বাসন করা হবে।
×