ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

উদ্বোধন করবেন দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী

চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথ ১৬ ডিসেম্বর উন্মুক্ত হচ্ছে ॥ সুজন

প্রকাশিত: ২৩:০৪, ১৫ নভেম্বর ২০২০

চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথ ১৬ ডিসেম্বর উন্মুক্ত হচ্ছে ॥ সুজন

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ রেলপথমন্ত্রী এ্যাডভোকেট মোঃ নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, বাংলাদেশের চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ি হয়ে শিলিগুড়ি পর্যন্ত বাংলাদেশের রেল যোগাযোগ চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বর উন্মুক্ত করা হবে। সেদিন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পণ্যবাহী ট্রেনের মাধ্যমে ওই রেলপথ যোগাযোগের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন। ওই দিন ভারত থেকে একটি পণ্যবাহী ট্রেন বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। শনিবার দুপুরে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার চিলাহাটিতে ভারত-বাংলাদেশ সংযোগ রেলপথের নির্মাণ কাজের পরিদর্শন ও চিলাহাটি আন্তর্জাতিক রেলস্টেশন নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, করোনা মহামারী অতিক্রম করতে পারলে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সেটি উদ্বোধন করার চেষ্টা চলছে। আর যদি স¤পূর্ণ নিরাপদ না হয়, তাহলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করা হবে। মন্ত্রী বলেন, রেললাইন নির্মাণ কাজ স¤পন্ন হয়েছে। দুই দেশের পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল উদ্বোধনের জন্য আমরা এখন প্রস্তুত । মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের পর্যটক বর্তমানে স্থলপথে বাংলাবান্ধা-হিলি কিংবা বুড়িমারী দিয়ে ভারত-নেপাল-ভুটানে যায়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থার (বিআরটিসি) বাস ভারতের কলকাতা ও আগরতলা, বুড়িমারী ও বাংলাবান্ধা পর্যন্ত স্থলপথে সংযোগ চালু করেছে। আকাশপথে ভারতের কলকাতা, মুম্বাই-চেন্নাই-ব্যাঙ্গালুরু ফ্লাইট চালু আছে। যাত্রীরা সাধারণত রেলভ্রমণে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। রেলপথে ঢাকা ও খুলনা থেকে কলকাতার সরাসরি সংযোগ আছে রেলের। তাই বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর সুর্বণজয়ন্তী উপলক্ষে আগামী বছরের ২৬ মার্চ চিলাহাটি-হলদিবাড়ি নতুন এই রেলপথ দিয়ে আমরা ঢাকা-শিলিগুড়ি যাত্রীবাহী ট্রেনের উদ্বোধন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তিনি বলেন, চিলাহাটি-হলদিবাড়ি ইন্টারচেঞ্জ লিংক চালু হলে বন্ধুপ্রতীম দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় উন্নয়নের দুয়ার আরও একধাপ খুলে যাবে। এতে লাভবান হবে উভয় দেশ। প্রজন্মের মধ্যে সম্প্রীতির মেলবন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে। চিলাহাটি দিয়ে ট্রেন ভারতে ঢুকে প্রথমেই হলদিবাড়ি স্টেশন। তার পরে জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশন হয়ে শিলিগুড়ি (এনজেপি) যাবে ওই ট্রেন। মন্ত্রী জানান,অবিভক্ত ভারতের রেল যোগাযোগের এটিই প্রধান পথ ছিল। সেই রেল যোগাযোগটি ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের সময় বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যে সোনালি অধ্যায়ের সূচনা করেছে তারই ফলশ্রুতিতে এই রেলপথ পুনরায় চালু হতে যাচ্ছে। রেলমন্ত্রী আরও জানান,যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশেই বঙ্গবন্ধু ডুয়েল গেজ রেল সেতুর নির্মাণ কাজ আগামী ২৯ নবেম্বর ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাপানের জাইকার অর্থায়নে ২০২৫ সালের মধ্যে রেল সেতুটির বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। রেল সেতুর ওপর দিয়ে কম করে হলেও ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। এটি বাস্তবায়িত হলে দেশের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ আরও সহজ হবে এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থার আরও উন্নয়ন ঘটবে। তিনি জানান, বর্তমানে যমুনা নদীর ওপর যে সেতুটি রয়েছে সেটি সিঙ্গেল লাইনের। তাতে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটারের বেশি গতিতে ট্রেন চালানো যায় না। ফলে অনেক সময় নষ্ট হয়। ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় হয়। নতুন রেল সেতুতে ডাবল লাইন রাখা হয়েছে। একসঙ্গে দুই দিক থেকে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে রেলের উন্নয়নে কাজ করছেন। আগামী ২০৪৫ সালের মধ্যে বৈদ্যুতিক রেল ইঞ্জিন দিয়ে রেল চলবে। পৃথিবীর উন্নতমানের আধুনিক ট্রেন চালু করা হবে। চিলাহাটি পরিদর্শনের সময় রেলমন্ত্রী গ্যাংকার ইঞ্জিনে উঠে চিলাহাটি থেকে ভারতের হলদিবাড়ির সীমানা পর্যন্ত নতুন পাতানো রেললাইন পরিদর্শন করেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নীলফামারী জেলা প্রশাসক মোঃ হাফিজুর রহমান চৌধুরী, নীলফামারী ৫৬ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল মোঃ মামুনুল হক, পাকশী বিভাগের প্রধান পরিবহন কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম, চিলাহাটি রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোঃ আব্দুর রহিম, নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন প্রমুখ। উল্লেখ্য, চিলাহাটি রেলস্টেশন থেকে সীমান্ত পর্যন্ত ৬ দশমিক ৭২৪ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণে সরকারের ব্যয় হচ্ছে ৮০ কোটি ১৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। রেলওয়ে সূত্র জানায়, ভারতের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ রেলওয়ে চিলাহাটি থেকে সীমান্ত পর্যন্ত ৬ দশমিক ৭২৪ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। ২ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার লুপ লাইনসহ ৯ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে বাংলাদেশ অংশে। অপরদিকে ভারতের হলদিবাড়ি রেল স্টেশন থেকে সীমান্ত পর্যন্ত ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার রেলপথ স্থাপনের কাজ শেষ করেছে ভারতীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। প্রকাশ থাকে যে, চলতি বছরের ৮ অক্টোবর ভারতীয় ইঞ্জিন ও ২৭ অক্টোবর বাংলাদেশের ইঞ্জিন সফলভাবে এই নতুন চিলাহাটি-হলদিবাড়ি সীমান্ত পর্যন্ত রেলপথে পরীক্ষামূলক ট্রায়াল সফলভাবে সম্পন্ন করেছিল।
×