ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম ধাপে পৌর ভোট

ডিসেম্বরে শুরু হচ্ছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন

প্রকাশিত: ২৩:০৪, ১৫ নভেম্বর ২০২০

ডিসেম্বরে শুরু হচ্ছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন

শাহীন রহমান ॥ উপনির্বাচনের পর ডিসেম্বর থেকে সারাদেশে শুরু হবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এই প্রক্রিয়ায় প্রথমে পৌরসভা নির্বাচন। ধাপে ধাপে অনুষ্ঠিত হবে শূন্য আসনে উপজেলা নির্বাচন, জেলা পরিষদ নির্বাচন এবং ইউপি নির্বাচন। এজন্য সকল আয়োজন প্রায় সম্পন্ন। অপেক্ষা এখন তফসিলের। ইসি সূত্রে জানা গেছে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রথম ধাপে পৌরসভায় নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে ইসির। পৌর সভায় ভোট যেহেতু দলীয় ভিত্তিতে হবে, নির্বাচনকালীন সময়ে ঝিমিয়ে থাকা রাজনৈতিক পরিবেশ থাকবে বেশ সরগরম। এছাড়া আগামী বছরের শুরুতেই উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদ এবং জেলা পরিষদ নির্বাচনের কারণে বছরজুড়েই রাজনৈতিক উত্তাপ থাকবে। গত ১২ নবেম্বর সম্পন্ন হয়েছে ঢাকা ১৮ এবং সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচন। ভোটে বিএনপি প্রার্থীরা বড় ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে ব্যর্থ হলেও রাজনেতিক মাঠ গরম ছিল বেশ। বিশেষ করে নির্বাচনের দিন একটি ভোট কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ এবং রাজধানীতে একদিনের ৯টি বাসে আগুন লাগানোকে কেন্দ্র করে এখন চলছে দোষারোপের রাজনীতি। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি একে অপরকে দুষছে। এর মধ্যেই আসছে পৌরসভা নির্বাচন। ইসি সূত্রে জানা গেছে, সপ্তাহের মধ্যে পৌরসভায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। প্রথম দফায় ডিসেম্বরে ২০ থেকে ২৫টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া ধাপে ধাপে মে মাস পর্যন্ত সারাদেশে ৩ শতাধিক পৌরসভায় নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে ইসির। পৌরসভা নির্বাচনের মধ্যেই দেশে সাড়ে চার হাজারের বেশি ইউনিয়ন পরিষদের ভোটের আয়োজনের প্রস্ত্রতি চলছে। জানা গেছে, মার্চ বা এপ্রিল থেকেই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শুরু হবে। কয়েক ধাপে অনুষ্ঠিত হবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। শুধু ইউনিয়ন নয় এ বছর নির্বাচনী ডামাডোলে যোগ হচ্ছে জেলা পরিষদ নির্বাচনও। পৌরসভা নির্বাচন ॥ বর্তমানে দেশের ৩২৪টি পৌরসভা রয়েছে। স্থানীয় সরকার আইন সংশোধনের পর ২০১৫ সালে প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট হয় পৌরসভায়। ওই নির্বাচনে ইসির নিবন্ধিত ২০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচন (পৌরসভা) আইন অনুযায়ী, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। সম্প্রতি কমিশনের সভা শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুর হুদা পৌরসভা নির্বাচনের বিষয়ে বলেন, ইসির পক্ষ থেকে ধাপে ধাপে পৌর সভা নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ডিসেম্বর থেকেই প্রথম ধাপে নির্বাচন করার প্রস্তুতি রয়েছে। পৌরভায় এবার ভোট হচ্ছে ইভিএম মেশিনে। জানা গেছে, প্রথম ধাপে দেশের ২৫টি পৌরসভায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়। বড়দিনের উৎসব বিবেচনায় রেখে ভোটগ্রহণ করা হবে। ডিসেম্বরের তৃতীয় বা চতুর্থ সপ্তাহে ভোটগ্রহণের দিন ধার্য হতে পারে। আর দ্বিতীয় ধাপে জানুয়ারিতে কমবেশি ১৭০টি পৌরসভায় ভোট হতে পারে। এরই মধ্যে দেশের নির্বাচন উপযোগী এবং বিভিন্ন কারণে পদ খালি হওয়া শতাধিক স্থানীয় সরকার পরিষদের নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের ১০ তারিখে এসব নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ পৌরসভা, ছয় ইউপিতে সাধারণ নির্বাচন এবং ৬৮ ইউপি, ৪ জেলা, ২ পৌরসভা ও ১০ উপজেলায় উপনির্বাচন রয়েছে। যেসব পৌরসভায় সাধারণ নির্বাচন হবে তার মধ্যে ফরিদপুরের ফরিদপুর পৌরসভা, মধুখালী পৌরসভা, মাদারীপুরের রাজৈর পৌরসভা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর পৌরসভা ও গাইবান্ধার পলাশবাড়ী পৌরসভা। এছাড়া গোপালগঞ্জের সুকসুদপুর পৌরসভার ৬ নং সাধারণ ওয়ার্ড ও জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল পৌরসভার ১ নং সাধারণ ওয়ার্ডে উপনির্বাচনও হবে ১০ ডিসেম্বর। উপজেলা নির্বাচন বগুড়ার শেরপুরে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, নওগাঁর রানীনগরে চেয়ারম্যান, পাবনার বেড়া ও ঈশ্বরদীতে চেয়ারম্যান, সাতক্ষীরার দেবহাটায় চেয়ারম্যান, যশোরের বাঘারপাড়ায় চেয়ারম্যান ও সদরে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং রাজবাড়ীর গোয়ালন্দতে চেয়ারম্যান, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে চেয়ারম্যান ও কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন হবে ১০ ডিসেম্বর। ইউপি নির্বাচন কুড়িগ্রামের রৌমারি উপজেলার দাঁতভাঙ্গা, বন্দবেড়, চর শৌলমারী, বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের উত্তর উলানিয়া, দক্ষিণ উলানিয়া ও রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউপিতে ভোট হবে ১০ ডিসেম্বর। এছাড়া ৬৮ ইউপির বিভিন্ন পদে উপনির্বাচন হবে ১০ ডিসেম্বর।এছাড়াও ফেনী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ভোট ১০ ডিসেম্বর হবে। এসব স্থানীয় সরকার পরিষদের দলীয় মনোনয়নের জন্য প্রার্থীরা এখন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়গুলোতে ভিড় করছে। মনোনয়ন পেতে চলছে নানা ধরনের লবিং গ্রুপিং। দলগুলোর পক্ষ থেকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে প্রার্থী বাছাই করা হবে বলে জানিয়েছে তারা। আইন অনুযায়ী দলীয় প্রার্থী হতে হলে আগে দল থেকে মনোনয়ন নিশ্চিত করতে হবে। ইসির নিবন্ধন রাজনৈতিক দলও রয়েছে ৪১টি। নিবন্ধিত এসব দলেল প্রার্থীরাই কেবল দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। এর বাইরে অংশ নেয়া প্রার্থীরা স্বতন্ত্র বলে বিবেচিত হবে। দলের প্রার্থীরা দলের নিবন্ধিত প্রতীকেই ভোট করতে পারবেন। এছাড়াও পৌরসভায় নির্বাচনের পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে ইসিতে। ইসির কর্মকর্তারা জানান সারা দেশের ইউনিয়ন পরিষদগুলোয় এপ্রিল থেকে ধাপে ধাপে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে ইউনিয়ন পরিষদেও ইভিএম ব্যবহার করা হতে পারে। তবে তা নির্ভর করছে এনআইডির সক্ষমতার ভিত্তির ওপর। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিশেষ করে ইউনিয়র পরিষদ নির্বচন যেহেতু তৃণমূলের ভোট, তৃণমূলের সাধারণ মানুষের মতে প্রতিফলন রয়েছে বেশি। এ কারণে আগামী বছরের শুরুতে পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে কেন্দ্রে পাশাপাশি তৃণমূলের রাজনীতিও বেশ চাঙ্গা থাকবে।
×