ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

স্বার্থসিদ্ধির জন্য কিছু লোক ধর্মকে ব্যবহার করছে

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ১৫ নভেম্বর ২০২০

স্বার্থসিদ্ধির জন্য কিছু লোক ধর্মকে ব্যবহার করছে

রাজন ভট্টাচার্য/সঞ্জয় সরকার নেত্রকোনা থেকে ॥ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজারও মানুষের মিলনমেলায় রূপ নিয়েছিল নেত্রকোনার সদর উপজেলার বাংলা রেল লাইন সংলগ্ন মহাশ্মশানঘাট প্রাঙ্গণ। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী সকলের উপস্থিতিতে নতুন করে যাত্রা শুরু হলো এই পবিত্র প্রাঙ্গণে নবনির্মিত কালী মন্দিরের। মন্দিরের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করে আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আমরা শিশুকাল থেকে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রীস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মীয়-সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির মেলবন্ধন দেখে আসছি। কখনও কোনরকম বিভেদ দেখিনি। কিন্তু সাম্প্রতিককালে কিছু লোক তাদের স্বার্থের জন্য ধর্মকে ব্যবহার করে নানা অশুভ কাজ করছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত করছে। এরা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী এবং পাকিস্তানের প্রেতাত্মা। শনিবার দুপুর দুইটায় জেলার সদর উপজেলার বাংলা বাজার সংলগ্ন মহাশ্মশান কালী মন্দির কমিটি আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে যোগ দেন। এ সময় ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, সকল ধর্মই শান্তির জন্য। ন্যায় প্রতিষ্ঠা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার জন্য। আর মন্দির হল সম্প্রীতির জন্য, সুন্দর জীবনের জন্য। তিনি সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ব্যক্তিগত জীবনে ধর্মীয় আদর্শকে লালন করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আপনারা সকলে মিলে শ্মশান দখলমুক্ত করে মন্দির নির্মাণ করেছেন এর মধ্য দিয়ে অশুভ শক্তির পরাজয় হয়েছে। আশাকরি এলাকায় সামাজিক সম্প্রীতি বাড়বে। নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করবে। আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি অশুভ শক্তি সমাজে টিকে থাকতে পারে না। মাছে ভাতে রাঙালীর ঐতিহ্য নেত্রকোনা অঞ্চলের মানুষ ধরে রাখবে। নেত্রকোনা দেশের উন্নয়নে একটি রোল মডেল হবে। এলাকায় একে একে আরও উন্নয়ন হবে এমন প্রত্যাশার কথাও জানান তিনি। আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মুক্তিযুদ্ধে সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যাশা এখন পূরণের পথে। হতাশা কেটে গেছে। সকলের সহযোগিতায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলাদেশ গড়ে ওঠবে বলে আমি আশাবাদী। যারা অন্যায়ভাবে কিছু অর্জন করতে চায় এটি একটি ভাল শিক্ষা তাদের জন্য একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সমাজে অশুভ শক্তি টিকে থাকতে পারে না। এর পতন একদিন না একদিন হবেই। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মোঃ আশরাফ আলী খান খসরু এমপি বলেন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে নেত্রকোনা জেলা। এখানে আমরা হিন্দু-মুসলিম সকলে ভাই ভাই। আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে ঈদ ও পূজার আনন্দ ভাগাভাগি করি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও এমন একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ মেলবন্ধন যাতে ভবিষ্যতেও অটুট থাকে- সেজন্য ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। আশরাফ আলী খান খসরু এমপিও ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে যোগ দেন এ অনুষ্ঠানে। মন্দির কমিটির সভাপতি কেশব সেনের সভাপতিত্বে এবং অজিত কুমার দাসের সঞ্চালনায় এ সুধী সমাবেশ শুরু হয়। এ সময় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দৈনিক জনকণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার রাজন ভট্টাচার্য। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তৃতা করেন সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি হাবিবা রহমান খান শেফালী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আব্দুল্লাহ্ আল মাহমুদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জুয়েল, আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য অসিত সরকার সজল, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি কেশব রঞ্জন সরকার, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মারুফ হাসান খান অভ্র, ব্যবসায়ী বাবলু সাহা প্রমুখ। হাবিবা রহমান খান শেফালী এমপি কৃষিমন্ত্রী ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে ফিতা কেটে মন্দিরের দ্বার উন্মুক্ত করেন। জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী বাংলা গ্রামের রেল লাইনের উত্তর পাশে শত বছরের বেশি আগে এ শ্মশানঘাট প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০১ সালে এলাকার একটি দুষ্টচক্রের যোগসাজশে কয়েক ভূমিদস্যু শ্মশানের জায়গাটি দখল করে নেয়। এ নিয়ে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হলে কিছুদিন আগে তারা রাস্তা অবরোধসহ স্থানীয়ভাবে মিছিল-আন্দোলন করেন। পরবর্তীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে রেল মন্ত্রণালয় ওই জায়গাটি শ্মশানের জন্য বরাদ্দ করে। সম্প্রতি শ্মশানঘাট পরিচালনা কমিটি সেখানে কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে।
×