ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জনবল-দক্ষতা সঙ্কটে প্রশাসন

প্রকাশিত: ২০:৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২০

জনবল-দক্ষতা সঙ্কটে প্রশাসন

বর্তমান জনবান্ধব ও গণমুখী সরকারের দেশব্যাপী নানাবিধ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হলেও প্রশাসনে দক্ষতা ও জনবল আশানুরূপ বাড়েনি। ফলে সরকারের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সঙ্গে তাল মেলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রায় সর্বস্তরের প্রশাসনকে- রাজধানী থেকে তৃণমূল পর্যন্ত। গত তিন দশক বিশেষ করে বর্তমান সরকারের গত এক দশকে কর্মপরিধি বেড়েছে কয়েকগুণ। জনগোষ্ঠী বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। অথচ প্রশাসনে জনবল বেড়েছে মাত্র দশমিক ২৭ ভাগ। ফলে শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকা পর্যন্ত সুবিশাল জনগোষ্ঠীকে জনসেবা দিতে পদে পদে বিপাকে পড়তে হচ্ছে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ১৯৮৭ সালে সিভিল প্রশাসনে সব মিলিয়ে জনবল ছিল ১০ লাখ ৯০ হাজার ৩৩৩ জন। বর্তমানে সব মিলিয়ে জনবল রয়েছে, ১৩ লাখ ৮২ হাজার ৩৯৩ জন। বিগত ৩৩ বছরে জনবল বেড়েছে মাত্র ২ লাখ ৯২ হাজার ৬০ জন। এতে নারীর অংশগ্রহণ আরও কম। অর্থাৎ, এই সময়ে জনবল বেড়েছে মাত্র দশমিক ২৭ শতাংশ। ইতোমধ্যে অনেকে অবসরে চলে গেছেন। করোনা মহামারীতে নতুন নিয়োগও প্রায় বন্ধ। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে অবসরে যাওয়া শূন্যপদের সংখ্যা চার লক্ষাধিক। তদুপরি রয়েছে দক্ষ জনবলের প্রকট অভাব। আইটি বিশেষজ্ঞ ও ডিজিটাল কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই বললেই চলে। এই সীমিত সংখ্যক অদক্ষ জনবল দিয়ে যথার্থ অর্থে একটি উন্নত সমৃদ্ধ ও আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা প্রায় অসম্ভব। অন্যদিকে চাকরি বিশেষ করে সরকারী চাকরি যেন সোনার হরিণ তুল্য। অনেকেই যথেষ্ট মেধা, শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সরকারী চাকরি পান না সহজে। তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর সরকারী চাকরিতে ঢোকার পথ কিছুটা সহজ হলেও বিসিএসের মাধ্যমে ক্যাডার সার্ভিস তথা সরকারী চাকরিতে অনুপ্রবেশ বেশ কষ্টাসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ। ফলে স্বভাবতই ২৬ লাখ শিক্ষিত বেকারের অনেকের মধ্যে হতাশা থাকা বিচিত্র নয়। এবার বোধহয় সেটা আরও কিছুটা কঠিন তথা দুঃসাধ্য হতে চলেছে। সরকারী চাকরিতে ঢোকার শর্ত হিসেবে ডোপ টেস্ট তথা মাদক পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জেল-জরিমানাসহ অর্থদণ্ডের বিধান রেখে প্রণয়ন করেছে ডোপ টেস্ট বিধিমালা-২০১৯। বলা বাহুল্য, এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারলে পাওয়া যাবে না সরকারী চাকরি। ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য কেউ আবেদন করলে তাকেও উত্তীর্ণ হতে হবে এই পরীক্ষায়। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, দেশে একশ্রেণীর মধ্যে ইয়াবা-ফেন্সিডিলসহ মাদকাসক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। তরুণদের একাংশের নীতিনৈতিকতাও প্রশ্নবিদ্ধ। সেই প্রেক্ষাপটে এর প্রয়োজন অস্বীকার করা যায় না। অপ্রিয় হলেও সত্য, দেশে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সার্বিক মান ও দক্ষতা ভাল নয়। ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়ম-মাদকাসক্তি প্রায় সর্বত্রই পরিলক্ষিত হয়। ফলে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নীতি-নৈতিকতা, দায়িত্বশীলতা ও কর্তব্যনিষ্ঠা নিয়েও প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে এসব অনিয়ম-অনাচার-দুর্নীতি ও দায়িত্বহীনতা অনতিবিলম্বে দূর করতে হবে। সরকারের নব প্রণীত বিধি ডোপ টেস্টসহ শুদ্ধাচার পুরস্কার যদি এসব ক্ষেত্রে কিছু ইতিবাচক অবদান রাখতে সক্ষম হয়, তাহলেই এর সাফল্য ও সার্থকতা।
×