ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আগুন সন্ত্রাসীদের ক্ষমা নেই

প্রকাশিত: ২০:৩০, ১৫ নভেম্বর ২০২০

আগুন সন্ত্রাসীদের ক্ষমা নেই

বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ১১টি চলন্ত বাসে আগুন লাগানোর ঘটনার ভেতর দিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির যে অপতৎপরতা চলেছে সেটির তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে দেশবাসী। মানুষের স্মৃতিতে এখনও জাজ্বল্যমান যে দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি আন্দোলনের নামে দেশব্যাপী বোমা ও অগ্নি সন্ত্রাস করেছিল, যা ছিল দেশের জন্য এক নতুন ধরনের ভয়ঙ্কর মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড। দেশের মানুষের কল্যাণের জন্যই রাজনীতি, তাদের আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করার জন্য নয়। আগুনসন্ত্রাসীদের দোসর জামায়াতের নীলনক্সার বিষয়টি উন্মোচিত হয়েছে অল্প ক’দিন আগেই। সে বিষয়ে সম্পাদকীয়তে আমরা স্পষ্টত অভিমত প্রকাশ করেছিলাম, দেশে অস্থিতিশীল ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পিত নীলনক্সা অনুযায়ী গোপনে মাঠ পর্যায়ে তৎপরতা শুরু করেছে জামায়াত-শিবির-বিএনপি। বড় ধরনের নাশকতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও দাঙ্গা হাঙ্গামা চালানোর পরিকল্পনা নিয়ে মাঠপর্যায়ে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে যুদ্ধাপরাধীদের এই দলটি। এই দলটির সঙ্গে গোপন যোগাযোগ রয়েছে বিএনপির উগ্র মৌলবাদী ও জঙ্গী গোষ্ঠীর। এই ধরনের অপতৎপরতায় মদদ যোগাচ্ছে দেশী-বিদেশী অশুভ শক্তি, বিশেষ করে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের যোগাযোগ আছে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করছে গোয়েন্দা সংস্থা। রাজধানীর একটি এবং ঢাকার বাইরের আরেকটি আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠান চলার মধ্যেই দেশের সম্পদ ধ্বংসের মহোৎসব এবং আগুন সন্ত্রাসের সূচনা যে পূর্বপরিকল্পিত এতে কোন সন্দেহ নেই। ‘ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাই না’ এই প্রবাদটিই মানুষের মনে পড়ে গেছে বিএনপি মহাসচিবের সাফাই গাওয়া নিয়ে। দেশের মানুষ কী করে ভুলে যাবে যে মাসের পর মাস বোমা ও অগ্নি সন্ত্রাস করে ওই দলটি দেশবাসীকে প্রতিপক্ষ ভেবে তাদের জীবননাশের কি ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নেমেছিল। বৃহস্পতিবারের ঘটনায় পুলিশ টেলিফোন কথোপকথনের যে রেকর্ড পেয়েছে এবং একইসঙ্গে সিসি ক্যামেরা ফুটেজসহ যেসব আলামত সংগ্রহ করেছে তাতে সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই যে, কারা চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত, কারা অপকর্মটি করেছে। বাসগুলোতে গানপাউডার বা অন্য কোন দাহ্যবিস্ফোরক পদার্থ দিয়ে আগুন লাগানো হয়েছে এবং সন্ত্রাসীরা সেগুলো আগে থেকেই সংগ্রহ করে রেখেছিল। শুধু বাসে অগ্নিসংযোগ নয়, নির্বাচন কেন্দ্রসহ কয়েকটি স্থানে হাতবোমারও বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রতিটি দেশ যখন করোনা মহামারীর সঙ্গে লড়ছে এবং নিজ নিজ দেশের মানুষের সুরক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে নানা পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে চলেছে, সে সময়ে হীন গোষ্ঠীস্বার্থের জন্য আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে মানুষ হত্যার অপতৎপরতা নজিরবিহীন। এটি কোন প্রকৃত মানুষের কাজ হতে পারে না। তাই এ কাজের জন্য যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত, যারা অর্থদাতা ও হুকুমদাতা, তাদের প্রত্যেককেই স্বল্পতম সময়ের ভেতর আইনের আওতায় আনা হবে। করোনা মহামারী সত্ত্বেও দেশ যখন উন্নয়নের সড়কে চলমান, ঠিক সে সময়েই আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়ে দেশে আতঙ্কের সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার অপচেষ্টাকে যে কোন মূল্যে রুখে দিতে হবে। দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ মনে করে বিএনপি-জামায়াত কখনোই এ দেশের ভাল চাইবে না। তারা সব সময়েই দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে চাইবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারকে বিব্রত করা, বিপাকে ফেলার নানা অপতৎপরতা তারা সব সময়েই চালিয়ে যাবে। তাই এখন সময় এসেছে এদের কঠোর হাতে দমনের। যখনই যেখানেই তারা আইনবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত হবে তৎক্ষণাৎই তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনে জনবল বাড়িয়ে তাদের ওপর বিশেষ নজরদারি করতে হবে। সেইসঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের প্রকাশ্য ও গোপন দেশবিরোধী অপপ্রয়াসের সমুচিত জবাব দেয়া চাই। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে হলে এসব বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলার কোন বিকল্প নেই।
×