ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পুলিশের অপরাধে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক

প্রকাশিত: ১৯:৫৫, ১৪ নভেম্বর ২০২০

পুলিশের অপরাধে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে পুলিশের অপরাধে সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে অমন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, এমন ধারণা সাধারণ মানুষের। অসাধু পুলিশের অপরাধের দায় পড়ছে কর্মকর্তাদের ওপর। টহল পুলিশ থেকে শুরু করে থানা পর্যন্ত সর্বত্র পুলিশের অপরাধ তাকিয়ে থাকার মতোই। টু শব্দ করলেই থানা হাজত আর জেলের ভয় দেখিয়ে দমিয়ে রাখা হয় সাধারণ মানুষকে। পুলিশের অপরাধ দেখেও সচেতন নাগরিক পাশ কেটে চলে যান। পুলিশের সঙ্গে তর্কে জড়ালেই হয়রানির শিকার হতে হয়। অভিযোগ রয়েছে, কোথায়, কোন্ স্পটে কোন্ টিম ডিউটি করে এমন তথ্য দিতে নারাজ থানার ডিউটি অফিসাররা। যেন ডিউটি অফিসারের যোগসাজশে ডিউটি রোস্টার তৈরি হয়। ডিউটিতে কারা কর্মরত ছিলেন এমন প্রশ্নে সম্প্রতি আকবরশাহ থানায় কর্তব্যরত ডিউটি অফিসার এসআই হামিদুল তথ্য দিতে রাজি হননি প্রতিবেদককে। গত ২৬ অক্টোবর সকালে সিটিগেটে ডিউটিরতদের তথ্য জানাতে ওসি তদন্ত এসআই হামিদুলকে নির্দেশ দিলেও হামিদুল আর সরকারী মোবাইলটি সিরিভ করেননি প্রতিবেদকের টেলিফোনের কলে। প্রশ্ন উঠেছে, ডিউটি অফিসার হামিদুলও এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত কিনা। অন্যথায় প্রতিবেদক বারবার সরকারী মোবাইলে কল দেয়ার পরও তিনি কেন রিসিভ করেননি। এ ব্যাপারে গত ২৬ অক্টোবর বিকেলে সিএমপির পশ্চিম জোনের পাহাড়তলী ডিভিশনের সহকারী কমিশনার আরিফ হোসেন বলেন, বিষয়টি যেহেতু ওসি জেনেছে তিনি অবশ্যই ঘটনাস্থলে গেছেন। দুর্গাপূজার বির্সজন উপলক্ষে দেওয়ানহাটে আমি কর্মরত আছি। ওই বিষয়টা আমার জানা নেই। আরও অভিযোগ পাওয়া গেছে, চট্টগ্রাম-কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্ত প্রতিনিয়ত চলাচল করে গ্রামবাংলা স্পেশাল নামে একটি ট্রান্সপোর্টের কয়েকটি যাত্রীবাহী বাস। গত সোমবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে নগরীর একে খান মোড় থেকে মাত্র ২৬ যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে গ্রামবাংলা (নং-ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৭৯৮০) নামের বাস। ৯টা ৩০ মিনেটে সিটিগেট পুলিশ বক্সের অপরপ্রান্তে পৌঁছায়। সেখানে ছিল আকবরশাহ থানা পুলিশের একটি আকস্মিক চেকপোস্ট। এএসআই সঞ্জয় বাসটিকে থামার সিগন্যাল দেয়। বাসটি থামলে প্রথমে চশমা পরিহিত পুলিশী পোশাকে কনস্টেবল তৌহিদুজ্জামান এবং এএসআই সঞ্জয় বাসে ওঠে। প্রথমে সঞ্জয় বাসের প্রথম সিটে থাকা সালাউদ্দিনকে জিজ্ঞেস করে কোথায় যাচ্ছে। এসময় তার সঙ্গে থাকা ব্যাগে হাত দিয়ে সবকিছু বের করে তন্ন তন্ন করে কিছু একটা খুঁজেছে। কিন্তু চেষ্টা ব্যর্থ। অপরদিকে, কনস্টেবল তৌহিদুজ্জামান বাসের বাঁ দিকের সারির ৩য় সিটে থাকা সুলব দাশকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। সুলব ফেনীতে সেলুন ব্যবসা করে। তাঁর বাবা মুদি দোকানি। পূঁজা উপলক্ষে চট্টগ্রামের টাইগারপাসে বোনের বাসায় বেড়াতে এসেছিল। এসময় তৌহিদুজ্জামান সুলবের মানিব্যাগ দেখতে চায় আর হুমকি দিয়ে বলে ‘জেলে যাবি নাকি বাড়ি যাবি’ চুপচাপ বসে থাক। কোন টু শব্দ করবি না। এসময় সুলবের মানি ব্যাগে থাকা ৫শ’ টাকার একটি নতুন নোট, ২শ’ টাকার একটি নতুন নোট, ৬টি নতুন ৫০ টাকার নোটসহ ১২শ’ টাকা, দুটি সৌদি রিয়েল, পাঁচটি আমেরিকান এক ডলার নিয়ে নেমে যায়। বছর দুয়েক আগেও সুলব ওমানে ছিল। প্রায় ৮ বছর থাকার পর দেশে ফিরে আবারও সেলুন ব্যবসা শুরু করে। বাসে পুলিশের এমন কথা শুনে ভীতসন্ত্রস্ত ও অনেকটা বাকরুদ্ধ হয়ে যায় সুলব। গাড়ি ছাড়ার পর পুলিশ টাকা নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি পার্শ্ববর্তী ২ নং সিটে থাকা শোয়েব নিজেই দেখেছে। যাত্রী সুলব দাশ পরে বিষয়টি বাসে থাকা লালপোলের যাত্রী শোয়েব, চৌদ্দগ্রামের যাত্রী ফাহিম ও সুপারভাইজার মোহাম্মদ আলীকে জানিয়েছে। একজন যাত্রী পুরো বিষয়টি জেনে বাস থেকেই আকবরশাহ থানার ওসি জহির হোসেনকে জানান। ওসি বলেন, তিনি বিষয়টি দেখছেন। পরবর্তীতে ওসি আবারও ওই যাত্রীর মোবাইলে কল দিয়ে জেনেছেন যাত্রীর মানিব্যাগ থেকে কনস্টেবল তৌহিদুজ্জামানের অর্থ ছিনিয়ে নেয়ার পুরো ঘটনা।
×