ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ ॥ ইজারার শর্ত ভঙ্গ করলে আইনগত ব্যবস্থা

ফুলবাড়িয়ায় মার্কেট থেকে টার্মিনাল ইজারাদারের জোরপূর্বক টোল আদায়

প্রকাশিত: ১৯:৫৪, ১৪ নভেম্বর ২০২০

ফুলবাড়িয়ায় মার্কেট থেকে টার্মিনাল ইজারাদারের জোরপূর্বক টোল আদায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ফুলবাড়িয়া স্টপ ওভার টার্মিনালের ইজারাদারের বিরুদ্ধে আশপাশের মার্কেট থেকে টোল আদায়ের অভিযোগ করেছেন ওই এলাকার ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে সম্প্রতি তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভও করেছেন। তারা বলছেন, ইজারাদার টার্মিনাল ইজারা নিলেও তারা দোকানপাটের মালামাল থেকেও টোল আদায় করছে। তবে ইজারাদারের দাবি, যারা এই অভিযোগ করেছেন তারা আগেও টোল দিতেন। তবে আগে অবৈধভাবে যারা আদায় করত তাদের এই টোল দেয়া হতো। জানা গেছে, গত ১৪ অক্টোবর হতে এক বছরের জন্য দুই কোটি ২৫ লাখ টাকায় ডিএসসিসির মালিকানাধীন ফুলবাড়িয়া স্টপ ওভার টার্মিনালটি ইজারা নেয় মিনহাজ এন্টারপ্রাইজ। ইজারার শর্ত অনুযায়ী ইজারাদার টার্মিনালের আওতাভুক্ত গুলিস্তান-মিরপুর ১, ৯, ১০, ১১ ও ১২, চিড়িয়াখানা, এয়ারপোর্ট, আব্দুল্লাহপুর, ধামরাই, মানিকগঞ্জ, রামপুরা, গাবতলী, কালিয়াকৈর, কালীগঞ্জ, কলাকুপাবান্দুরা, সাভার, নবীনগর, আরিচা (বিআরটিএ কর্তৃক লিজ প্রদত্ত) কাপাসিয়া, গাজীপুর, টঙ্গী, শ্রীপুর, সখীপুর, শ্রীনগর, দোহার ও বাড়ৈখালী রুটে চলাচলকারী বাস মিনিবাস প্রতিদিন ৪০ টাকা হারে টার্মিনাল ফি ও নির্ধারিত কুলি মজুরি আদায় করবে। নির্ধারিত স্থান ও রুট ছাড়া অন্য কোন স্থান বা রুটে রাজস্ব আদায় করা যাবে না। অটোরিক্সা সিএনজি হতে প্রতি ট্রিপে ১০ টাকা ও টেম্পো হতে ৩০ টাকা হারে আদায় করা যাবে। কার্যাদেশে পরিবহনের নামও উল্লেখ করে চিহ্নিত করে দেয়া হয়েছে। তবে পরিবহন থেকে আদায়কৃত টোলের পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে। ইজারার শর্ত অনুযায়ী কোন যাত্রী সামান্য মালামাল উঠানো বা নামানোর জন্য কুলিদের সাহায্য না চাইলে কোন কুলি উক্ত মালামাল স্পর্শ করা বা মজুরি দাবি করতে পারবে না। যাত্রী সাধারণের সঙ্গে কোন কুলি বা আদায়কারী কোন প্রকার দুর্ব্যবহার, অশালীন উক্তি, জোরপূর্বক অর্থ আদায় করা যাবে না। কিন্তু আশপাশের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ইজারাদার টার্মিনাল বুঝে নেয়ার পর থেকেই তারা দোকানপাটের সামনে থেকে টোল আদায় করছে। তাদের দাবি কোন ব্যবসায়ী যদি তাদের গোডাউন থেকে মালামাল নিয়ে দোকানে নেয় সেখান থেকেও টোল আদায় করা হচ্ছে। এ অভিযোগে গত ২০ অক্টোবর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা। রিয়াদ হোসেন নামে এনেক্স টাওয়ারের একজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার কাছে ১০টি কার্টনের বিপরীতে ৫০ টাকা করে ৫০০ টাকা চাঁদা চেয়েছে। আমি চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আমাদের বলে, এটা আমরা মেয়রের কাছ থেকে টেন্ডার নিয়েছি। মার্কেটে যত মাল ঢুকবে এবং যত মাল বের হবে, টাকা দিতে হবে। আমরা তাদের বলেছি, তাহলে মেয়র সাহেব আমাদের চিঠি দেবেন, তারপর আমরা দোকান থেকে চাঁদা দেব। এরপর তারা কয়েকজন এসেছে, আমাদের তুলে নিয়ে যেতে চেয়েছে। রিয়াদ হোসেন চাঁদার রশিদ দেখিয়ে বলেন, এখানে স্পষ্ট লেখা আছে তারা যানবাহনের টোল নেবেন। কিন্তু তারা আমাদের প্রতিটি বস্তা ও কার্টন থেকে মার্কেটে ঢুকতেও ৫০ টাকা ও বের হতেও ৫০ টাকা করে নেয়। অথচ আমরা লাভই করি ৫০ টাকা। এর মধ্যে ১০০ টাকা দিলে আমাদের থাকবে কী? ব্যবসায়ীরা জানান, কোন ক্রেতা মার্কেট থেকে কোন কিছু কিনে নিলেও তাদের চাঁদা দিতে হচ্ছে। মার্কেটে একটা মালের বান্ডেল নিয়ে যেতে হলে তাদের টাকা দিতে হয়। বের করলেও টাকা দিতে হয়। গোডাউন থেকে আনলেও টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে ব্যবসায়ীদের গালমন্দ করে, মারতে যায়, হুমকি দেয়। যে গ্রাহকের কোন কুলির প্রয়োজন নেই সে কেন কুলি মজুরি বাবদ টাকা দেবে? ইজারার শর্তেও এটা বলা আছে যদি যাত্রীর কুলির প্রয়োজন না হয় তার কাছ থেকে জোর করে চাঁদা আদায় করা যাবে না। জানতে চাইলে টোল আদায়কারী প্রতিষ্ঠান মিনহাজ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সাইফুর রহমান বলেন, এই ব্যক্তিরা আগেও চাঁদা দিতেন। কিন্তু তখন তারা চাঁদাবাজদের চাঁদা দিতেন। একটি চক্র এই টাকা লুটপাট করে খেয়েছে। এখন আমরা এর ইজারা নিয়েছি। সরকার রাজস্ব পায়। তারা এখন বিভিন্ন কথা বলছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইজারার পুরো বিষয়টি আমার বড় ভাই টিটু দেখেন। তিনি এসব বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবেন। জানতে চাইলে টিটু বলেন, দীর্ঘ ৮ বছর সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব বন্ধ ছিল। কিছু লোক এটা নিয়ন্ত্রণ করত। বর্তমান মেয়র সাহেব টেন্ডার শিডিউল কল করার পর আমরা টেন্ডার ড্রপ করি। এখন আমরা রাজস্ব আদায় করছি। আমাদের পাঠাইছে সিটি কর্পোরেশন। আমরা মেয়রকে বিষয়টি অবহিত করেছি। তিনি হয়ত ব্যবসায়ীসহ সবার সঙ্গে বসে এটা সমাধান করবেন। তিনি আরও বলেন, যারা আগে অবৈধভাবে এই টার্মিনাল নিয়ন্ত্রণ করত তারা হয়ত ব্যবসায়ীদের ভুল বুঝিয়ে এটা করাতে পারে। তার মতে এমনি কেউ পয়সা দিতে চায় না। যখন কেউ ক্ষমতা খাটায় তাকে পয়সা দেয়। যখন কেউ চাঁদাবাজি করে তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু বৈধভাবে রাজস্ব নেয়া হলে তাতে তাদের আপত্তি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দোকানের মালামাল তো আমাদের না। এখানে একটু ভুল বোঝাবুঝি আছে। বিষয়টিতে অস্পষ্টতাও আছে। মালিক সমিতিকে নিয়ে বসা হলে ক্লিয়ার হবে। কোন জায়গা থেকে রাজস্ব নেয়া যাবে, কোথায় নেয়া যাবে না সেটা ক্লিয়ার হওয়া যাবে। জানতে চাইলে ডিএসসিসির মহাব্যবস্থাপক (পরিবহন) বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘এমন অভিযোগ যারা করেছে তাদের কিছু কথা অতিরঞ্জিত হতে পারে। আমরা ওটা ইজারা দিয়েছি। সেখানে পরিবহন ভেদে টোল নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। আর ইজারাদার যদি ইজারার শর্তের বাইরে কিছু করে থাকেন, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’ এদিকে টার্মিনালে মালামাল নামানোর ক্ষেত্রে কুলি মজুরি আদায়ের হারও বাড়িয়েছে সিটি কর্পোরেশন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ এই কুলি মজুরি ফি টার্মিনালের জন্য। কোন দোকানপাটের জন্য নয়। টার্মিনাল ইজারা দেয়া হয়েছে দোকানপাট থেকে টোল আদায়ের জন্য নয়।
×