ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাড়ে ১২ হাজার ক্লিনিকের লাইসেন্স নবায়নের আবেদন

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ১২ নভেম্বর ২০২০

সাড়ে ১২ হাজার ক্লিনিকের লাইসেন্স নবায়নের আবেদন

নিখিল মানখিন ॥ সরকারের বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে সারাদেশে ১২ হাজার ৫৪৩টি বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিক লাইসেন্স নবায়নের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরে আবেদন করেছে। তবে কতটি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের লাইসেন্স নেই তার কোন তথ্য অধিদফতরের কাছে নেই। এই সুযোগে শত শত লাইসেন্সবিহীন বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিক দেদার অবৈধভাবে ব্যবসা করে যাচ্ছে। এ ধরনের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানসমূহ বিদ্যমান নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করে না। বারবার ঘোষণা দিয়েও দেশব্যাপী কার্যকর অভিযান অব্যাহত রাখতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদফতর। বরং স্বাস্থ্য অধিদফতরের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা আর্থিক সুবিধা নিয়ে ওইসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানসমূহ লালন-পালন করে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এসব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের ভুল ও মানহীন চিকিৎসায় একের পর এক রোগীর মৃত্যু ঘটছে। বার বার অভিযোগ তুলেও প্রতিকার পাচ্ছেন না রোগীরা। সর্বশেষ রাজধানীর আদাবরের মাইন্ড এইড সাইকিয়াট্রি এ্যান্ড ডি-এ্যাডিকশন হাসপাতালে মারধর করার পর এক পুলিশ কর্মকর্তা মারা যান, সেটি চলছিল অবৈধভাবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, নিরাপদ জনস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে বদ্ধ পরিকর বর্তমান সরকার। রাজধানীসহ সারাদেশের অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর তালিকা তৈরির কাজ এখনও চলছে। তালিকা তৈরির পাশাপাশি কালো তালিকাভুক্ত প্রতিস্থানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল বিভাগসহ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এ অভিযান পরিচালনা করছে। অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে জনসাধারণকেও সোচ্চার হতে হবে। এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলো জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক। কোভিড-১৯ পরীক্ষা নিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের নানা অনিয়মের খবর উঠে আসার পরই লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। অভিযানে দেখা যায়, বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বড় অংশেরই নেই নিবন্ধন। আবার কিছু আছে লাইসেন্স নিলেও তা নবায়ন করেনি। এসব প্রতিষ্ঠানের লাগাম টানতে লাইসেন্স নবায়ন ও নিবন্ধনে এক মাস সময়সীমা বেধে দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। সেই সময় শেষ হয় গত ২৩ আগস্ট। বেধে নেয়া সময়ের মধ্যে লাইসেন্স নবায়ন বা নিবন্ধন নিতে ব্যর্থ হলে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হবে-মন্ত্রণালয়ের এমন নির্দেশনার পর অনলাইনে আবেদন বাড়লেও বর্তমানে চিকিৎসা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই এখনও লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেনি। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কতদিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হবে এমন প্রশ্নে সঠিক তথ্য দিতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ২০১৮ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট ১৭ হাজার ২৪৪টি বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে পাঁচ হাজার ৪৩৬টি, চট্টগ্রাম বিভাগে তিন হাজার ৩৭৫, রাজশাহী বিভাগে দুই হাজার ৩৮০, খুলনায় দুই হাজার ১৫০, রংপুরে এক হাজার ২৩৬, বরিশালে ৯৫৭, ময়মনসিংহে ৮৭০ এবং সিলেট বিভাগে ৮৩৯টি। প্রতিষ্ঠান মালিকদের ভোগান্তি কমাতে দুই বছর আগে অনলাইনের মাধ্যমে লাইসেন্স নবায়নের সুযোগ দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। তবে এ পদ্ধতির নানা জটিলতার কথা জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাদের অভিযোগ, দুই বছর আগে অনলাইনে আবেদন করা অনেক প্রতিষ্ঠান এখনও লাইসেন্স নবায়ন করতে পারেননি। একইসঙ্গে লাইসেন্স পেতে পরিবেশ ছাড়পত্র ও ট্রেড লাইসেন্স পেতে নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, লাইসেন্স নবায়ন না করার বিশেষ কিছু কারণ রয়েছে। হাসপাতাল লাইসেন্সের সময় কাগজপত্রে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী ঠিকই দেখায়। কিন্তু পরের বছর নবায়নের সময় এ-সংখ্যক জনবল দেখাতে পারে না। নবায়নের আবেদন করার পর পরিদর্শনে গেলে আবেদনে দেয়া তথ্যের সঙ্গে কোন মিল পাওয়া যায় না। এসব সংশোধন করে ফের আবেদন করতে বলার পর থেকেই তাদের আর কোন সাড়া পাওয়া যায় না। লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল-ক্লিনিকের সঠিক তথ্য নেইÑ স্বাস্থ্য অধিদফতর ॥ সারাদেশে ১২ হাজার ৫৪৩টি বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিক লাইসেন্স নবায়নের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরে আবেদন করেছে। তবে কতটি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের লাইসেন্স নেই তার কোন তথ্য অধিদফতরের কাছে নেই। বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চকে সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) মোঃ ফরিদ হোসেন মিয়ার দেয়া এই তথ্য আদালতকে জানান ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত। মানবাধিকার সংগঠন চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের পরিচালক ইশরাত হাসানের করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ তথ্য জানানো হয়। অধিদফতর আদালতকে জানায়, কোভিড ও নন- কোভিড হাসপাতালের সংখ্যা, নাম স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে রয়েছে। লাইসেন্সধারী বেসরকারী হাসপাতালের তালিকা সরকারের কাছে আছে। কিন্তু কতগুলোর লাইসেন্স নেই, তার কোন তালিকা নেই। লাইসেন্সবিহীন হাসপাতালের বিরুদ্ধে সরকার অভিযান চালাচ্ছে।
×