ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মতো পরিস্থিতি এখনও হয়নি

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ১২ নভেম্বর ২০২০

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মতো পরিস্থিতি এখনও হয়নি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মতো পরিস্থিতি এখনও হয়নি মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেছেন, আসলে করোনা মহামারীর মধ্যে কবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্বাভাবিকভাবে খুলে দেয়া যাবে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না। এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা না খোলা ইস্যুতে সরকারের সর্বশেষ অবস্থান আজ কালের মধ্যে জানিয়ে দেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শীঘ্র না খুললেও আগামী বছরের এসএসসিও সমমান পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি ও সিলেবাস শেষ করতে ‘কিছু’ স্কুলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করার চিন্তাভাবনা চলছে। বুধবার করোনাকালীন অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম বিষয়ক এ জরিপের রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিষ্ঠান খোলাসহ এ সংক্রান্ত নানা ইস্যুতে খোলামেলা কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। বাংলাদেশ এডুকেশন রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) পরিচালিত এ জপির রিপোর্টে উঠে এসেছে করোনাকালীন শিক্ষার বিভিন্ন দিক। আলোচনায় আরও ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ আমিনুল ইসলাম খান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মোঃ গোলাম ফারুক। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে নগরভিত্তিক জরিপ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ এডুকেশন রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মোস্তফা মল্লিক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এস এম আববাস। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মোস্তফা মল্লিক ও সাধারণ সম্পাদক এসএম আব্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক নুর এ আলম প্রমুখ। গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছিলেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে সিদ্ধান্ত দু’একদিনের মধ্যেই জানাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘উনি কেন দু’একদিন বলেছেন আমি অবশ্য জানি না।’ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ১৪ তারিখ পর্যন্ত বন্ধ রেখেছি। ১৫ তারিখ থেকে খুলবে কিনা, নাকি এই ছুটিটি আরও বাড়বে নাকি কোন কোন ক্লাসের জন্য আমরা সীমিত আকারে শুরু করতে পারব- এসব বিষয় নিয়ে এখনও কাজ করছি। ১৪ তারিখের আগে চেষ্টা করব আপনাদের জানিয়ে দিতে। কাল বা পরশুর মধ্যে আমাদের একটা সিদ্ধান্ত জানাতেই হবে। আজ জানাতে পারছি না। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সঙ্কটের মধ্যেও আমরা পড়াশোনা চালিয়ে নিতে পেরেছি, চালিয়ে যাচ্ছি, অবশ্যই এটি আমাদের কোন আদর্শ পরিস্থিতি নয়। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তার মধ্যে আমরা চেষ্টা করছি। এই চেষ্টাটি চালিয়ে যেতে হবে, এটিকে আরও কত ভাল করা যায়, কারণ করোনা কতদিনে যাবে, কতদিনে সত্যিকার অর্থে আমরা আসলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরি খুলে দিতে পারবো, সে বিষয়গুলো কিন্তু এখনও বেশি অনিশ্চিত। সামনেই এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা আছে, সেগুলো নিয়েও আমরা বিভিন্নভাবে ভাবছি যে কী করে তাদের পরীক্ষার আগে সিলেবাস পুরোপুরি শেষ করতে পারে, এসব নানান জিনিস আমরা ভাবছি। জরিপ রিপোর্ট : রিপোর্টে দেখা গেছে, মাধ্যমিকে ৪২ শতাংশ, উচ্চ মাধ্যমিকে ৫৮ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রমে নিয়মিত অংশ নিচ্ছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে নিয়মিত অংশ নিচ্ছে মোট ৬৩ শতাংশ। আর অংশ নিতে পরেনি ৩৭ শতাংশ। ভিডিও মাধ্যমে শিক্ষা নিয়েছে ৬১ শতাংশ, অংশ নেয়নি ৩৯ শতাংশ। ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে শিক্ষা নিচ্ছে ৩৫ শতাংশ, নেয়নি ৬৫ শতাংশ। অন্য মাধ্যমে (ই-মেইল, হোয়াটসএ্যাপ, ভাইবার ইত্যাদি) শিক্ষা নিচ্ছে ২১ শতাংশ আর নেয়নি ৭৯ শতাংশ। ইন্টারনেট ব্যয় ৫০১ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে ৫৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর। ইন্টারনেট ব্যয় ৭০ থেকে পাঁচশ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে ১০ শতাংশ শিক্ষার্থীর। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে মন্তব্য করেনি ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। আর ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী সহযোগিতা পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। স্মার্টফোন আছে ৯৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর। স্মার্টফোন নেই ছয় শতাংশ শিক্ষার্থী। শিক্ষকরা যোগাযোগ করেছেন ৬৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর সঙ্গে। আর যোগাযোগ করেনি ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর সঙ্গে। টেলিভিশন আছে ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী বাড়িতে, নেই ২ শতাংশ শিক্ষার্থীর বাড়িতে। শহরে টেলিভিশনের চিত্র এমন হলেও গ্রাম পর্যায়ে অসমাপ্ত জরিপ অনুযায়ী গ্রামে টেলিভিশনের সংখ্যা কম হবে বলে এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে জানা গেছে। সংসদ চ্যানেলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়, এটি জানে ৯৪ শতাংশ, আর জানে না ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। সংসদ চ্যানেলের অনুষ্ঠান দেখে ১১ শতাংশ, দেখে না ৮৯ শতাংশ। তবে এটা মূলত নগরকেন্দ্রিক শিক্ষার্থী। যারা মূলত অনলাইনে নিজ প্রতিষ্ঠানের ক্লাসেই বেশি যুক্ত। তবে টিভি যারা দেখে তাদের মধ্যে উপকৃত হচ্ছে ৬৭ শতাংশ, উপকৃত হচ্ছে না ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থী।
×