ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মানসিক হাসপাতালটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে

এএসপি আনিসুল হত্যায় কাউকেই ছাড়া হবে না ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২২:৪৬, ১২ নভেম্বর ২০২০

এএসপি আনিসুল হত্যায় কাউকেই ছাড়া হবে না ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চিকিৎসার নামে সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুল ইসলাম শিপনকে পিটিয়ে হত্যার সঙ্গে জড়িত কাউকেই ছাড়া হবে না। এ সংক্রান্ত মামলায় ইতোমধ্যেই এগারোজন গ্রেফতার হয়েছে। এর মধ্যে দশজনকে সাতদিনের রিমান্ডে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তদন্তে আর কারও জড়িত থাকার প্রমাণ মিললে তাদের গ্রেফতার করা হবে। এ ধরনের অবৈধ হাসপাতালের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে ধারাবাহিক অভিযান চালানো হবে। মামলাটি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। পুলিশ সদর দফতর ও ঢাকা মহানগর পুলিশের তরফ থেকে তদন্তের বিষয়ে নজরদারি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই সব রোগী চলে যাওয়ার পর হাসপাতালটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার ঘটনায় জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও গাজীপুরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। তারা হত্যাকারীদের দ্রুততার সঙ্গে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার ঘটনায় বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এএসপি আনিসুল হত্যায় জড়িতদের কাউকে ছাড়া হবে না। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ মোতাবেক ধস্তাধস্তি ও মারধরের এক পর্যায়ে আনিসুলের মৃত্যু হয়। মন্ত্রী আরও বলেন, মানসিক হাসপাতালটি যথাযথ কোন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই চলছিল। যেসব হাসপাতালের অনুমোদন নেই এবং অনিয়ম হচ্ছে তার একটি ফিরিস্তি তৈরি করা হবে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে অবৈধ হাসপাতালগুলোতে অভিযান চালানো হবে। এদিকে বুধবার এক বার্তায় পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, পুলিশ কর্মকর্তা হত্যাকা-ের ঘটনাটি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয়, সে বিষয়টি মাথায় রেখেই কাজ চলছে। পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক গোলাম মনোয়ার কামাল স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করার জোর দাবি জানানো হয়। বিগত কয়েক দশকে দেশে বেসরকারী পর্যায়ে অনেক মানসিক হাসপাতাল গড়ে উঠেছে, যা এ সংক্রান্ত চিকিৎসা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ইতিবাচক অগ্রগতি। তবে এসব হাসপাতালের সেবার মান ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানা প্রশ্ন বা অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান রয়েছে, যা এ ঘটনায় আরও দৃশ্যমান হয়ে উঠল। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে পরিবারের অভিযোগ খতিয়ে দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়। এছাড়া মানসিক চিকিৎসা সেবা প্রদানের সঙ্গে জড়িত হাসপাতালগুলোর সেবা কার্যক্রম নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। গাজীপুর থেকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার জানান, বুধবারও পুলিশ কর্মকর্তার বাসায় শত শত মানুষ ভিড় করেছেন পরিবারকে সমবেদনা জানাতে ও সান্ত¡না দিতে। পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ নিহতের সহপাঠী, বন্ধুবান্ধব ও স্বজনরাও ছিলেন। ডিএমপি তেজগাঁও জোনের উপপুলিশ কমিশনার হারুন-অর রশিদ পুলিশের নিহত সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপনের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে বুধবার সকালে গাজীপুরে আসেন। তিনি শহরের বরুদা এলাকায় নিহতের বাসায় যান। তিনি নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন ও খোঁজখবর নেন এবং সান্ত¡না দেন। পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় নিহতের স্ত্রী, বাবা ও ভাই-বোনসহ স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সময় পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপন হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আইজিপির হস্তক্ষেপ কামনা করেন নিহতের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফাইজুদ্দিন আহমেদ ও বড় ভাই রেজাউল করিম সবুজ। পাশাপাশি স্ত্রী সন্তানসহ নিহতের অসহায় পরিবারের পাশে থাকার জন্য অনুরোধ জানান তারা। এ সময় নিহতের বাবা ও বড় ভাই ছাড়াও বোন শামসুন্নাহার সুমন ও ডাঃ উম্মে সালমা এবং স্ত্রী শারমিন সুলতানাসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তার সঙ্গে নিহতের ব্যাচমেট পুলিশের ৩৫ কর্মকর্তাসহ সহকর্মীরা, কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আমানত হোসেন খান, গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট রীনা পারভীন ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান আজমল ভুইয়াসহ বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। পরে তারা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কেন্দ্রীয় কবরস্থানে যান। সেখানে তারা নিহতের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং কবর জিয়ারত ও দোয়া করেন। এর আগে গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার নিহত এএসপি আনিসুল করিম শিপনের বাসায় যান এবং স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি নিহতের পরিবারকে সমবেদনা জানান। এ সময় তার সঙ্গে গাজীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রাসেল শেখ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) শহীদুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একেএম জহিরুল ইসলাম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আমিনুল ইসলামসহ পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। নিহত পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপনের হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও অপরাধীদের বিচারের দাবিতে মঙ্গলবার ঢাকায় বিক্ষোভ হয়। সেই ধারাবাহিকতায় বুধবারও সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ও নিহতের বাসার পার্শ্ববর্তী হাড়িনাল সড়কে পৃথক মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়েছে। এ সময় তারা বিক্ষোভ করে। বুধবার সকালে গাজীপুর শহরে নিহতের সহপাঠী, বন্ধুবান্ধব ও এলাকাবাসী এ মানবন্ধন পালন করে।
×