ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষ চালক সঙ্কটে নিরাপদ হচ্ছে না সড়ক

এক দশকে যানবাহন বেড়েছে তিন গুণ

প্রকাশিত: ২২:৪৬, ১২ নভেম্বর ২০২০

এক দশকে যানবাহন বেড়েছে তিন গুণ

রাজন ভট্টাচার্য ॥ সরকারী হিসাব অনুযায়ী গত এক দশকে দেশে যানবাহন বেড়েছে তিনগুণ। অথচ যানবাহনের তুলনায় বাড়েনি চালকের সংখ্যা। বিশেষ করে বাস-ট্রাকসহ ভাড়ি যানবাহনের চালক সঙ্কট সবচেয়ে বেশি। দক্ষ চালক সঙ্কটের কারণে দুর্ঘটনা যেমন বাড়ছে তেমনি সড়ক নিরাপত্তার জন্য উদ্যোগ থাকলেও তা কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। বিআরটিএর তথ্যানুযায়ী গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৪৫ লাখ ৬৪ হাজারের বেশি। আর এই সময় পর্যন্ত বৈধ চালকের সংখ্যা ২৭ লাখ ৬৭ হাজার। অর্থাৎ রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত যানবাহনের তুলনায় চালকের সংখ্যা কম ১৮ লাখের বেশি। অথচ দেড় বছরের বেশি সময় দরপত্র জটিলতায় চালকদের জন্য লাইসেন্স প্রিন্টের কার্ড ছাপানো সম্ভব হচ্ছে না। বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ বলছেন, কার্ড ছাপা হলে আরও নয় লাখের বেশি ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রিন্ট দেয়া হবে। সব মিলিয়ে তখন ৯ লাখের মতো চালক সঙ্কট থাকবে। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো সারাদেশে বৈধ চালকের সংখ্যা সাড়ে ২৭ লাখের বেশি। এর মধ্যে রেজিস্ট্রেশনভুক্ত মোটরসাইকেলের সংখ্যাই ৩০ লাখ ৬২ হাজার ছাড়িয়েছে। নিবন্ধিত মোটরসাইকেল থেকেও বৈধ চালকের সংখ্যা কম! পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী দূরপাল্লার যাতায়াতে যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহনে একাধিক চালক রাখা বাধ্যতামূলক। শ্রম আইন অনুযায়ী একটানা পাঁচ ঘণ্টা একজন চালক গাড়ি চালাতে পারবেন। আর সারাদিনে পারবেন সাত ঘণ্টা। এই হিসাব অনুযায়ী মোট যানবাহনের অন্তত দ্বিগুণ বৈধ চালক থাকা আবশ্যক। কিন্তু তা দেখা যাচ্ছে না। বরং অনেক কম। এটা সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা। চালকের কর্মঘণ্টা ও বিশ্রামের দায়িত্ব মালিকের। এর কোনটাই হচ্ছে না। তাছাড়া সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে উদ্যোগের দুর্বলতা, পেশাকে মর্যাদার জায়গায় নিয়ে যেতে না পারায় অনেকে চালকের পেশায় আসতে নারাজ। এজন্য চালকদের আর্থিক ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিআরটিএ এর তথ্যানুযায়ী, ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে ৪৩৪টি যানবাহন নিবন্ধিত হয়। যার মধ্যে মোটরসাইকেল ২৭২টি এবং ব্যক্তিগত গাড়ি ৪১টি। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী ইতোমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দুটি আধুনিক বিশ্রামাগার নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। ২০১৮ সালের জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে চালকদের কর্মঘণ্টা মানা ও বিশ্রামাগার নির্মাণের নির্দেশ দেন। এজন্য শিক্ষিত ও দক্ষ চালক তৈরির তাগিদ দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চালকের পেশায় শিক্ষিতদের আনতে হলে মালিকদের পক্ষ থেকে নিয়োগপত্র, অবসরকালীন সুবিধা, উৎসব বোনাসসহ আর্থিক বিষয়ে বিভিন্ন প্রণোদনা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। নতুন সড়ক পরিবহন আইনে এসব অনেক বিষয় উল্লেখ থাকলেও তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। পুরোপুরিভাবে আইনও কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে চালক বাড়ছে না। দুর্ঘটনাও একেবারে নিয়ন্ত্রণে আসছে তাও বলা মুশকিল। বিআরটিএর পরিচালক (অপারেশন) সিতাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, চালক বাড়াতে সরকারীভাবে বিআরটিসিকে নিয়ে একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দুই লাখের বেশি দক্ষ চালক তৈরি হবে। ভাড়ি যানবাহনসহ সকল প্রকার যানবাহন থেকে চালক বেশি থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, চালকের পেশায় সাধারণ মানুষ আসতে খুব একটা আগ্রহ প্রকাশ করেন না। প্রয়োজনীয় আর্থিক সুবিধা না পাওয়া ও সামাজিক মর্যাদা না বাড়ায় অনেকে এ পেশাকে বেছে নিতে চান না। অনেক পরিবহন মালিক চালকসহ পরিবহন শ্রমিকদের নিয়মিত বেতনও দিতে চান না। শ্রম আইন থেকে শুরু করে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী চালক নিয়োগ নিশ্চিত করা গেলে হয়তো অনেকেই উৎসাহ বোধ করবেন এ পেশায় আসতে। সম্প্রতি সড়ক নিরাপত্তা প্রসঙ্গে এক অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নিরাপদ ও ভ্রমণবান্ধব সড়ক গড়ে তোলা সরকারের অগ্রাধিকার। আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশের সড়ক নেটওয়ার্কে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে। উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে চালু করা হয়েছে রোড সেফটি অডিট। সম্প্রতি ব্র্যাক ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় মন্ত্রী বলেন, পুরুষদের তুলনায় নারী গাড়িচালকরা অধিক সাবধানী ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই সরকার নারী গাড়িচালক তৈরির সুযোগ বাড়াচ্ছে। সরকার আরও বেশি বেশি নারী চালকের সংখ্যা বাড়াতে চায়। এ লক্ষ্যে ব্র্যাককেও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ জানান তিনি। সেতুমন্ত্রী বলেন, সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী উদ্যোগ যুক্ত হলে এসব সেক্টরে যে কোন লক্ষ্য অর্জন সহজতর হবে। এসডিজি অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনা ৫০ ভাগ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এবং জাতিসংঘ ঘোষিত দ্বিতীয় বারের মতো ডিকেড অব এ্যাকশন ফোর রোড সেফটির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আইনগত কাঠামো শক্তিশালী করা হয়েছে। তিনি বলেন, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণে প্রয়োজন দক্ষ ও প্রশিক্ষিত চালক এ বাস্তবতা উপলব্ধি করে সরকার পেশাজীবী গাড়ি চালকদের প্রশিক্ষণ সুবিধা বাড়ানোর কাজ করছে। ‘সড়ক নিরাপত্তা সহযোগিতা : ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা মৃত্যু ৫০ শতাংশ হ্রাস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে আরও বলা হয়, ২০৩০ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫০ শতাংশ মৃত্যু কমানোর জন্য কাজ করবে বিশ্বব্যাংক। গবেষণায় বলা হয়, বিশ্বে প্রতি বছর সাড়ে ১৩ লাখ মানুষ সড়ক দুর্ঘটনা মারা যান। বাংলাদেশে ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা। এখানে দুর্ঘটনায় আক্রান্তদের ৬৭ শতাংশই ১৫ থেকে ৪৯ বছর। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনা ও চালক বাড়ানো প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আগামী এক দশকের মধ্যে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুহার অর্ধেকে নামিয়ে আনতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সড়ক সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পথচারীদের অধিকতর সচেতন করা, চালকদের প্রশিক্ষণ দেয়া এবং উন্নত রাস্তা তৈরি সব মিলিয়ে একটি বিশাল উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নারী গাড়ি চালকদের প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের ব্যাপারে তার মন্ত্রণালয় সার্বিক সহায়তা করবে বলেও আশ্বস্ত করেন মন্ত্রী। বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, সড়ক নিরাপত্তা যে কোন দেশের জন্য অর্থনৈতিক ও উন্নয়নের অগ্রাধিকারে পরিণত হয়েছে। একটি জাতীয় সড়ক সুরক্ষা কর্মসূচীর মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সরকারকে সহায়তা করতে পেরে আমরা গর্বিত। জানতে চাইলে বিআরটিএ সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান খান বলেন, লার্নার লাইসেন্স ফরমের শর্ত অনুযায়ী বিআরটিএ নিবন্ধিত ট্রেনিং সেন্টার থেকে শিক্ষানবিস চালকদের প্রশিক্ষণ নেয়ার কথা। বাস্তব চিত্র হলো তা কার্যকর হচ্ছে না। এটা দেখভালেরও কেউ নেই। বেশিরভাগ চালক ওস্তাদের কাছ থেকে ট্রেনিং নেয়। এজন্য গাড়ি চালাতে সাইন-সিগন্যালসহ রাস্তার ভাষা শিখতে পারে না। তিনি বলেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী যাদের হালকা তাদের মিডিয়াম, যাদের মিডিয়াম রয়েছে তাদের ভাড়ি লাইসেন্স দেয়ার কথা ছিল। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা গেলে ভাড়ি যানবাহনের চালক বাড়ত। এরসঙ্গে বাড়ত সরক নিরাপত্তাও। হেভি লাইসেন্স দেয়ার আগে সরকার নির্ধারিত ট্রেনিং সেন্টারে অন্তত ১৫ দিন চালকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার পরামর্শ দিয়ে বিআরটিএ সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, এই প্রশিক্ষণটি বাধ্যতামূলক করতে হবে। এতে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তিনি বলেন, এই প্রশিক্ষণের খরচ প্রয়োজনে সরকারকেই বহন করতে হবে। কারণ সরকার দেশে বেকার সমস্যা দূর করতে সরকার বিভিন্নভাবে টাকা খরচ করছে। কারিগরি প্রশিক্ষণ সেন্টারগুলোও সরকারী অর্থায়নে চলছে। তাই দক্ষ চালক তৈরিতে সরকারী প্রণোদনা বাড়লে অনেকেই এ পেশায় আসতে উদ্বুদ্ধ হবেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ লাখ দক্ষ চালক তৈরির পরিকল্পনাও কার্যকর হয়নি। এ পরিকল্পনা কার্যকর করা গেলে দেশে দক্ষ চালক সঙ্কট অনেকটাই কমে আসত বলে মনে করেন তিনি। সেইসঙ্গে মহাসড়কে অনুমোদনহীন যানবাহন উচ্ছেদ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, অদক্ষ চালক সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। দক্ষ চালক তৈরি করতে না পারায় সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আসছে না বলেও মনে করেন এই পরিবহন বিশেষজ্ঞ। এক দশকে যানবাহন বেড়েছে তিনগুণ ॥ জানা গেছে, ১৯৮৭ সালে বিআরটির যাত্রার শুরুতে যানবাহনের সংখ্যা ছিল এক লাখ ৭৫ হাজার। তখন চালকের সংখ্যা ছিল এক লাখ ৯০ হাজার। গাড়ি চেয়ে ১৫ হাজার বেশি চালক ছিল। পরিবহন মালিক-শ্রমিকসহ বিআরটিএ সূত্র বলছে, গত এক দশকে দেশে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে তিন গুণের বেশি। ২০১০ সালে সারাদেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৫ লাখ। তখন চালক ছিল ১৪ লাখের বেশি। কিন্তু গত এক দশকে যে হারে গাড়ি রেজিস্ট্রেশন হয়েছে সে হারে চালক বাড়ানো সম্ভব হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নত শহরগুলোতে জরিপ করে যানবাহন রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়। যেমন একটি শহরে রাস্তার পরিমাণ কত। আর মোট সড়কে কত গাড়ি নিরাপদে চলাচল করতে পারবে। সেদিক বিবেচনায় নিয়ে গাড়ি রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়। আমাদের দেশে এরকম কোন চিন্তা নেই। ইচ্ছেমতো রেজিস্ট্রেশন দেয়া হচ্ছে। কোন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়নি। চোখের দেখায় ফিটনেস মিলছে ॥ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয় বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই) বলছে, চালক না বাড়লেও ১৯৯৮-২০১৮ সাল পর্যন্ত চালকদের বেপরোয়া মনোভাব ও গাড়ির গতির কারণে ৯০ ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদন বলছে, গত পাঁচ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ৩৭ হাজারের বেশি মানুষ। সড়কে দুর্ঘটনার পেছনে শুরু চালক কম থাকা প্রধান কারণ নয়। জানা গেছে, বিআরটিএ মিরপুর কার্যালয়ে দিনে ৪০০ চালকের লাইসেন্স পরীক্ষা হয়। ফিটনেস সনদ দেয়া হয় কমপক্ষে ৬০০ যানের। কিন্তু ফিটনেস দিতে হলে অন্তত ৬০ ধরনের কারিগরি ও বাহ্যিক দিক পরীক্ষা করা আবশ্যক। সময়ের কারণে এর কোনকিছুই করা সম্ভব হয় না। জানা গেছে, লাইসেন্স সনদ ও ফিটনেস দিতে মিরপুর বিআরটিএ প্রধান কার্যালয়ে মাত্র আটজন মোটরযান পরিদর্শক আছেন। সব মিলিয়ে চোখের দেখায় মিলছে গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট। অভিযোগ এমনও আছে বিআরটিএতে গাড়ি না এনেই ফিটনেস সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেন পরিবহন মালিকরা। প্রায় পাঁচ লাখ ফিটনেসবিহীন যানবাহন ॥ বিআরটিএ তথ্য বলছে, অক্টোবর পর্যন্ত ফিটনেসবিহীন যানবাহনের সংখ্যা চার লাখ ৮৪ হাজার ৫৩৬। এর মধ্যে বাস ও মিনিবাসের সংখ্যা ২৫ হাজার। যদিও সারাদেশে রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত বাস ও মিনিবাসের সংখ্যা ৮০ হাজারের কিছু বেশি। মোট বাস-মিনিবাসের মধ্যে তিন ভাগের এক ভাগের ফিটনেস নেই। এসব যানবাহন সড়ক দুর্ঘটনার বড় কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের মধ্যে ৬০ হাজারের ফিটনেস নেই। সারাদেশে নিবন্ধিত ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের সংখ্যা এক লাখ ৯০ হাজারের বেশি। পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে এসব যানবাহন ব্যবহার হয়। জানতে চাইলে নৌ সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, আমাদের দেশে বিশেষ করে হাইওয়েতে যাত্রীবাহী বাসের ক্ষেত্রে যেসব দুর্ঘটনা ঘটে থাকে এর মধ্যে একটা বড় অংশ বাসের ফিটনেস থাকে না। অর্থাৎ সড়ক মহাসড়কে দাবড়ে বেড়াচ্ছে লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা যান। ফলে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু বাড়ছে। সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে এসব যানবাহন চলাচল বন্ধে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিলেন এই বিশেষজ্ঞ। ১২ পয়েন্ট কাটা যাচ্ছে না ॥ সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ তে উন্নত দেশের মতো আমাদের দেশের চালকদের পয়েন্ট যুক্ত করা হয়েছে। প্রতি চালকের জন্য বরাদ্দ ১২ পয়েন্ট। অপরাধ করলে পয়েন্ট কাটা যাবে। অপরাধ যত বাড়বে তত পয়েন্ট কাটা যাবে। এভাবে অপরাধের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পয়েন্ট কাটতে কাটতে এক সময় শূন্য হলে লাইসেন্স বাতিল হওয়ার কথা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লাইসেন্স বাতিলের এই ধারা বাস্তবায়ন সম্ভব হলে চালকরা অনেকটাই সতর্ক হয়ে গাড়ি চালাবেন। ফলে দুর্ঘটনাও অনেক ক্ষেত্রে কমে আসবে। মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সরাসরি চালক তৈরির কোন সুযোগ নেই একথা জানিয়ে সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে চালক তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য আমরা বহুবার বিআরটিএ, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়সহ বিআরটিসিকে চিঠি দিয়েছি। ঢাকা যানবাহন সমন্বয় বোর্ডকেও বিষয়টি অবহিত করেছি। অনেক চিঠি চালাচালির পর সরকারের পক্ষ থেকে ৩ লাখ চালক তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়। এর মধ্যে একটি বড় অংশকে ভাড়ি লাইসেন্স দেয়ার কথা ছিল। করোনার আগে নতুন চালকদের জন্য প্রশিক্ষণ শুরু হলেও করোনার জন্য এখন পুরো প্রকল্পের কাজ বন্ধ। তিনি বলেন, নতুন চালক না আসার কারণে আমরা সরকারের কাছে পূর্বাচলে একটি ট্রেনিং ইনস্টিউটের জন্য জমি চেয়েছিলাম। কথা ছিল সিটি কর্পোরেশন বা ডিটিসিএ এই ইনস্টিটিউট পরিচালনা করবে। মালিক সমিতির পক্ষ থেকে চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হবে। অর্থাৎ আমরা জায়গাটুকু ব্যবহার করব। তা হয়নি। বিআরটিসির ২২টির মতো ট্রেনিং সেন্টার এমনিতেই পড়ে আছে। প্রয়োজনীয় কাজে লাগানো যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে চালক প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত সরকারী-বেসরকারী সকল প্রতিষ্ঠানকে একযোগে কাজে লাগানো সম্ভব হলে চলমান চালক সঙ্কট হয়তো অনেকাংশেই নিরসন সম্ভব হবে।
×