ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আজ সেই ভয়াল ১২ নবেম্বর

আজও কাঁদায় স্বজনহারা উপকূলবাসীকে

প্রকাশিত: ২১:২৬, ১২ নভেম্বর ২০২০

আজও কাঁদায় স্বজনহারা উপকূলবাসীকে

নিজস্ব সংবাদদাতা, ভোলা, ১১ নবেম্বর ॥ সেই ভয়াল ১২ নবেম্বর। ভোলাসহ উপকূলবাসীর বিভীষিকাময় এক দুঃস্বপ্নের দিন। এক এক করে ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও কান্না থামেনি স্বজনহারা মানুষের। রয়ে গেছে সেই ক্ষতস্মৃতি। ১৯৭০ সালের এই দিনে বিস্তীর্ণ এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়ে ধ্বংসলীলায় পরিণত হয়। মুহূর্তের মধ্যেই প্রলয়ঙ্করি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস ক্ষতবিক্ষত করে দেয় স্থানীয় জনপথ। ওই ঝড়ে ভোলায় হারিয়ে যায় দেড় লক্ষাধিক প্রাণ। নিখোঁজ হয় সহস্রাধিক মানুষ। দুর্গম এলাকায় হতদরিদ্রদের একমাত্র আয়ের উৎস গবাদিপশুগুলো ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সেই ঝড় আজও কাদায় দ্বীপবাসীকে। এদিকে ১২ নবেম্বরের ঝড়ের নিহতদের স্মরণে উপকূলবাসীদের পক্ষ থেকে ১২ নবেম্বর উপকূল দিবস ঘোষণার দাবি উঠেছে। তৎকালীন পূর্বদেশ পত্রিকার প্রত্যক্ষদর্শী ভোলার সাংবাদিক ও বর্তমানে ভোলা প্রেসক্লাব সভাপতি এম হাবিবুর রহমান জানান, ১৯৭০ সালের ১২ নবেম্বর দিনভর ছিল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাস। সন্ধ্যার পর মুহূর্তের মধ্যেই ভয়ানক রূপ ধারণ করে। গভীর রাতে শুরু হয় ঝড়ের তা-ব। হারিকেনরূপী জলোচ্ছ্বাসের সময় ঝড়টি ভোলাসহ উপকূলীয় ১৮টি জেলায় আঘাত হানে। তখন তথ্যপ্রযুক্তি অনেক দুর্বল থাকায় উপকূলে অনেক মানুষই ঝড়ের পূর্বাভাস পায়নি। এই সময় দ্বীপজেলা ভোলায় জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল ৮/১০ ফুট উচ্চতায়। তখন বাঁচতে কেউ গাছের ডালে, কেউ উঁচু ছাদে আশ্রয় নিয়ে কোনমতে প্রাণে রক্ষা পেলেও কয়েক দিন পর্যান্ত তাদের অর্ধাহারে অনাহারে অভুক্ত কাটাতে হয়েছে। হাতিয়া নিজস্ব সংবাদদাতা হাতিয়া থেকে জানান, সারা রাত কোনমতে কলাগাছ ধরে বেঁচে থাকলেও ভোর হতেই দেখি পরিবারের ১০ সদস্যের মধ্যে ৬ জনই ভেসে গেছে বানের পানিতে। চোখের সামনেই ভেসে গেছে পরিবারের ৬জন। কিছুই করতে পারিনি। সেদিন মানুষ আর পশুর লাশ মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। একটি লাশও পাইনি কবর দিতে। আপনজন হারানোর দুঃখ বুকে চেপে রেখে গ্রামবাসীর লাশ কবর দেয়া আর ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধারে নেমে পড়তে হয়েছে পরেরদিন। সে সময় হাতিয়ার হরনী ইউনিয়নের নিলক্ষী গ্রামের বসবাস করা অমূল্য চন্দ্র দাস (৮০) এভাবেই ১৯৭০’র ১২ নবেম্বরের ভয়াল রাতে ঘূর্ণিঝড় ‘গোর্কী’র ভয়াবহতার বর্ণনা দেন। ঘূর্ণিঝড়ের ৫ বছর পর বাড়িটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে তিনি বসবাস করেন হাতিয়ার চরঈশ্বর ইউনিয়নে। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ১ম বর্ষের ছাত্র ছিলেন হাতিয়ার চানন্দী ইউনিয়নের মাইজচরা গ্রামের সৌরহাজী বাড়ির তরুণ রফিকুল আলম।
×