ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাড়ে ৪ বছরেও হস্তান্তর হয়নি

প্রকাশিত: ২১:২৪, ১২ নভেম্বর ২০২০

সাড়ে ৪ বছরেও হস্তান্তর হয়নি

নীতিশ চন্দ্র বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ ॥ গোপালগঞ্জের ঘোনাপাড়া এলাকায় প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম ‘শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান’। এটির উদ্বোধন হয়েছে সাড়ে চার বছর আগে। মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন ২০১৬ সালের এপ্রিলে। অথচ নির্মাণ বাস্তবায়ন সংস্থা গণপূর্ত বিভাগ অদ্যাবধি প্রতিষ্ঠানটি হস্তান্তর করতে পারেনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও এ ব্যাপারে রয়েছে সম্পূর্ণ উদাসীন। অভিযোগ উঠেছে, নিজের সুবিধার জন্যই প্রতিষ্ঠানটির হস্তান্তর গ্রহণ করছেন না প্রতিষ্ঠানের পরিচালক প্রফেসর ডাঃ সাইফুদ্দিন আহমেদ। নিয়ম-বহির্ভূতভাবে তিনিসহ অনেকেই সেখানকার সরকারী আবাসন-সুবিধা ভোগ করেন; কিন্তু কর্তন করান না কোন বাড়িভাড়া। বিদ্যুত বা পানির বিলও তারা পরিশোধ করেন না। পরিচালক নিজেই বিদ্যুত বিল বাদে ১০ লক্ষাধিক টাকা রাজস্ব (বাড়িভাড়া) ফাঁকি দিয়েছেন। অথচ অধিকাংশ স্টাফই সেখানকার সরকারী আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। যেসব ভবন শুরু থেকেই ফাঁকা পড়ে আছে, অযতœ অবহেলা আর অব্যবহারে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সেসব ভবনসহ সরকারের কোটি কোটি টাকার সম্পদ। পরিচালক প্রতিষ্ঠানটির হস্তান্তর গ্রহণ না করায় বিগত সাড়ে চার বছরে এ প্রতিষ্ঠান থেকে শুধু বাড়িভাড়া খাতেই সরকার রাজস্ব হারিয়েছে ১০ কোটি টাকার উর্ধে। আর এসবের প্রভাব পড়ছে সেখানকার চিকিৎসা সেবায়ও। গোপালগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগ জানিয়েছে, ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ও গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া সড়কের কেন্দ্রস্থল ঘোনাপাড়া এলাকার ১৫ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম এ চক্ষু হাসপাতালটি। ১’শ ৪৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠানটির নির্মাণ-কাজ শেষ হয় ২০১৪ সালের ’জুনে। নির্মিত হয় একাডেমিক ভবন, দু’হাজার কেভি’র সাবস্টেশন ও পাম্প এবং আবাসিক ভবনসহ ২১টি অবকাঠামো। আবাসিক ভবনগুলোতে পরিচালক, উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক, ডাক্তার-নার্স, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীসহ মোট ৩শ’ ৪৯ জনের কোয়ার্টার, ডরমেটরি ও হোস্টেলের ব্যবস্থা রয়েছে; যাদের কাছ থেকে বাড়িভাড়া খাতেই সরকারের রাজস্ব আয় হতে পারত বছরে অন্তত আড়াই কোটি টাকা। গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত কুমার বিশ্বাসের সঙ্গে আলাপকালে জানান, প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের ৯ মাস আগেই প্রতিষ্ঠানটির চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম শুরু হয়। উদ্বোধনের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির পরিচালককে ভবনগুলো বুঝে নেয়ার জন্য বহুবার চিঠি দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সমন্বয় কমিটির সভায়ও বিশদ আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তিনি কোনকিছুরই ভ্রুক্ষেপ করেননি। হস্তান্তর গ্রহণ না করায় একদিকে যেমন প্রকল্পের অবকাঠামো মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ কোন অর্থ-বরাদ্দ হচ্ছে না; অন্যদিকে কোয়ার্টার-ডরমেটরিসহ আবাসিক ভবনগুলোতেও কোন বাসা বরাদ্দ দেয়া হয়নি। এতে সরকার প্রতি মাসে প্রচুর রাজস্ব প্রাপ্তি থেকেও বঞ্চিত হয়েছে। তারপরও প্রতিষ্ঠানটি জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় বিভিন্ন সময় চাহিদার ভিত্তিতে গণপূর্ত দফতরের এপিপি বরাদ্দ থেকে জরুরী মেরামত কাজগুলো সম্পন্ন করা হয়েছে। এদিকে চক্ষু হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডাঃ সাইফুদ্দিন আহমেদ তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়গুলো এড়িয়ে গিয়ে বলেন, প্রতিষ্ঠানটি উদ্বোধনের আগেই প্রকল্পের নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এজন্য তৎকালীন প্রকল্প-পরিচালক গণপূর্ত বিভাগের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানটি বুঝে নেননি। উদ্বোধনের পর প্রতিষ্ঠানের মূল ভবনে চিকিৎসা সেবাসহ অন্যান্য কার্যক্রম চালু হয় ঠিকই; কিন্তু নির্মাণগত কিছু ত্রুটির কারণে ভবনগুলো বুঝে নেয়া হয়নি। এ ব্যাপারে পরামর্শের জন্য পরিকল্পনা অধিদফতরে চিঠিও দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের কোয়ার্টারে নিজের অবৈধভাবে থাকার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তিনি আরও বলেন, বরাদ্দ ছাড়াই যারা কোয়ার্টার বা ডরমেটরিতে উঠেছে তাদের দ্রুত নামিয়ে দেয়া হবে।
×