ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভিটামিন ডি-এর প্রয়োজনীয়তা

প্রকাশিত: ০০:০০, ১০ নভেম্বর ২০২০

ভিটামিন ডি-এর প্রয়োজনীয়তা

ভিটামিন ডি একটি চর্বিতে দ্রবনীয় যা শরীরের ক্যালসিয়াম, ফসফেট ইত্যাদির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ভিটামিন ডি অস্থির কাঠামো তৈরি এবং ঘনত্ব বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। নাম শুনে ভিটামিন মনে হলেও ভিটামিন ডি আসলে একটি স্টেরোয়েড হরমোন। অন্যান্য ভিটামিন যেখানে এন্টি অক্সিজেন বা কো-এনজাইম হিসাবে কাজ করে, ভিটামিন ডি (স্টেরোয়েড হরমোন) জিন এক্সপ্রেশন নিয়ন্ত্রণ করে অর্থাৎ দেহের প্রোটিন তৈরিতে নিয়ন্ত্রণকারীর ভূমিকায় থাকে। প্রাণীজ ও উদ্ভিদজাত স্টেরল ও ফাইটোস্টেরল হতে সূর্যালোকের অতি বেগুনী রশ্মি দ্বারা রূপান্তরিত হয়ে দেহে ভিটামিন ডি তৈরি হয়। ভিটামিন ডি-২ ও ভিটামিন ডি-৩ মানব দেহে থাকে। ভিটামিন ডি-এর অভাবে কি কি উপসর্গ দেখা যায় শিশুদের মধ্যে : গুরুতর ভিটামিন ডি-এর অভাবে রিকেটস রোগ (হাড় বাঁকা), শিশু পেশি খিঁচুনি, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা, হাঁপানি, চর্মরোগ এবং এসব শিশুদের ক্যালসিয়ামের স্বল্পতা ও দেখা দেয়, সে জন্য শীত প্রধান দেশের শিশুরা ৪০% বেশি আক্রান্ত হয় গ্রীষ্ম প্রধান দেশের চাইতে, তার কারণ সেখানের শিশুরা রৌদ্র থেকে ভিটামিন ডি যোগান খুব কম পায় বিধায় খাবার থেকে গ্রহণ করলে ও অনেক সময় ঠিকমতো হজম শক্তির অভাবে বণ্টিত হয় না (ব্রিটেনে প্রতি ৫ জনে একজন ভিটামিন ডি স্বল্পতায় ভোগে থাকেন) । তীব্রভাবে ভিটামিন ডি অভাব থাকলে শিশুদের যা হতে পারেÑ শিশুর মস্তিষ্কের খুলি, পায়ের হাড় নরম হয়ে বা বাঁকা হয়ে যাওয়া, সামান্য একটু চাপে পায়ের হাড়ের যন্ত্রণায় কাঁদে শিশুরা যা পেশি যন্ত্রণা বা পেশি দুর্বলতার লক্ষণ; ইহাই রিকেটস । রিকেটস : ভিটামিন ‘ডি’এর অভাব হলে এবং ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে ক্যালসিয়াম শরীরে শোষিত হতে না পারলে রিকেটস হয় কেননা হাড় গঠনের জন্য ক্যালসিয়াম এবং ফসফেট অতি প্রয়োজনীয় উপাদান কিন্তু ভিটামিন ডি তা ক্ষুদ্রান্ত্রে শোষণে সাহায্য করে বিধায় হাড়ের ভঙ্গুরতা বা ক্ষয় হওয়া অথবা নরম হওয়া থেকে রক্ষা করে । বিশেষ করে শিশুদের বেলায় জন্মের তিন মাস থেকে ১৮ মাস পর্যন্ত যদি তার শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি যোগান দেয়া না হয় তখন তার পা বা হাত বেঁকে যাওয়া বা ভঙ্গুর হওয়া দেখা দিতে পারে বিধায় শিশুদের ভিটামিন ডি জাতীয় খাবার দেয়া অত্যন্ত জরুরী এবং সেই সঙ্গে ভিটামিন ডি-৩ তে পৌঁছানোর জন্য প্রতিদিন সকালের রৌদ্রে ১৫/২০ মিনিট রাখা কর্তব্য। রিকেটসের লক্ষণ হিসাবে যা দেখা দিতে পারে। অনেক সময় ক্যালসিয়ামের ঘাটতি জনিত কারণে যদি খিঁচুনি দেখা দেয় তা হলে তাকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়া ভাল। অনেক সময় এ ধরনের শিশুদের দুর্বল হাড় বৃদ্ধির কারণে উচ্চতার চাইতে ওজন বেশি মনে করে শিশুরা হাঁটতে অনিচ্ছুক থাকে বা হাঁটতে বিলম্ব হতে পারে (অনেকে বলেন মাথা বড় হওয়ায় হাটতে দেরি হইতেছে ইত্যাদি তাও ভুল )। তেমনই, দাঁত উঠতে বিলম্ব হতে পারে। শিশুদের শ্বাস-প্রশ্বাস ও চর্ম রোগজনিত অসুখ বেশি হতে দেখা যায় ভিটামিন ডি অভাবে (শীত প্রধান দেশে প্রতি ৫ জনে একজন শিশুর ভিটামিন ডি অভাব মনে করা হয় বা শিশুরা বেশির ভাগ হাঁপানি জনিত অসুখের শিকার হয় যে কারণে তার মধ্যে ভিটামিন ডি জনিত ঘাটতি অন্যতম ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল)। অন্য এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে গর্ভবতী মায়েরা ভিটামিন-ডি পর্যাপ্ত পরিমাণে খেলে জন্মের তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে সন্তানদের এ্যাজমা হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৪০ শতাংশ কম থাকে। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ভিটামিন ডি-এর অভাবে যা দেখা দিতে পারে সাধারণ গ্লানি বা ক্লান্ত বোধ এবং অস্পষ্ট ব্যথা-যন্ত্রণাটি মাংসপেশি না হাড়ের মধ্যে করে তা অনেক সময় বয়স্ক রোগীর বেলায় বুঝাতে খুব কষ্ট হয়, তবে গুরুতরভাবে ভিটামিন ডি’র অভাব দেখা দিলে অস্টিওমেলাসিয়া জাতীয় আসুখ হবেই ইহা নিশ্চিত। সাধারণভাবে যা দেখা যায় পেশির দুর্বলতা, সিঁড়ি আরোহণ করতে কষ্ট অনুভব, মেঝে বা চেয়ার থেকে উঠতে বসতে ভীষণ কষ্ট পাওয়া, বিশেষ করে উরু ও পায়ের মাংসপেশিসমূহ হাড়ের সঙ্গে জড়িয়ে ধরার মতো মনে হয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক ইত্যাদি অন্যান্য অসুখে ভিটামিন ডি’র যে যোগসূত্র আছে। হাড়ের ক্ষয় হওয়া জনিত অসুখে শুধু মাত্র ভিটামিন ডিকে একা ব্যবহার করলে একেবারেই কাজ করে না বলে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ভিটামিন ডিসহ একত্রে চিকিৎসা দিলে কয়েক বছরের জন্য কিছুটা রোধ করা সম্ভব। পুরুষের বয়স ৫৫ অতিরিক্ত পৌঁছে গেলে তিনি যদি তখন থেকেই ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস জাতীয় খাবারের দিকে একটু বেশি গুরুত্ব দেন তাহলে আরও ১২/১৫ বছর হাড়ের দুর্বলতা জাতীয় আসুখ হবে না। মহিলাদের রজঃনিবৃতির পর হতে হাড়ের ঘনত্ব কমতে শুরু করে তখন যদি তিনি ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস জাতীয় খাবারের দিকে গুরুত্ব দেন তা হলে কয়েক বছরের জন্য প্রতিহিত করা সম্ভব। এর পরেও যদি না সারে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবস্থা নিতে পারেন। কিন্তু ভিটামিন ডি বা ক্যালসিয়াম ইত্যাদি, কিডনির অসুখ বা হার্টের অসুখ অথবা যকৃতের কোন সমস্যা থাকলে অনেক সময় দুর্ভাগ্যবসত তা ব্যবহার করতে চাইলে ও সে জাতীয় ওষুধ সেবন করতে পারবেন না, কেননা সে সময় ৬০% বেলায় এসব অসুখ থাকার কথা; তাই শরীর ভাল থাকতেই শরীরের রিজার্ভ পদার্থ সমূহের দিকে একটু লক্ষ্য রাখা উচিত । তখন খাবারের মাধ্যমেই ভিটামিন ডি বা অন্যান্য খনিজ পদার্থ গ্রহণ করতেই হবে । ভিটামিন ডি ওষুধ হিসাবে খেতে হতে পারে কাদের? ১. নবজাতক যারা শুধুই মায়ের দুগ্ধ পান করছে ও যারা ১০০০ মিলিলিটারের কম শিশু খাদ্য গ্রহণ করে। ২. শিশু-কিশোর যারা অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা নগরে বা অস্বাস্থ্যকর শহরে (ঢাকা অন্যতম) বসবাস করছে। ৩. দৈহিক স্থ’ল শিশু-কিশোর যাদের ত্বেেকর বিভিন্ন অংশে মকমলের মতো কালো অংশ দেখা দিচ্ছে। ৪. ধর্মীয় বা অন্য কারণে পোশাকে প্রায় সারাদেহ আবৃত শিশু-কিশোর। ৫. খাদ্য নালীর সমস্যার কারণে হজম ও বিপাকীয় কার্যক্রম হ্রাস পেলে। ৬. প্রাতিষ্ঠানিক জীবনযাপন (হেস্টেল, হাসপাতাল বা অফিস) যাতে রোদে যাবার সুযোগ কমে যায়। ৭. এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়েছে, এমন হলে। ভিটামিন ডি-র ঘাটতি খুব বেশি হলে ৪০ হাজার আইইউ সপ্তাহে এবং পরবর্তীতে মাসে একটি করে ভিটামিন ডি ক্যাপসুল খেয়ে যেতে হবে। ঘাটতি কম হলে ২০ হাজার ক্যাপসুল যথেষ্ট হতে পারে। ভিটামিন ডি-র ঘাটতি থাকলে তো বটেই, অন্য ক্ষেত্রেও, সকলকে সূর্যালোকে যেতে হবে নিয়মিত। ডাঃ শাহজাদা সেলিম
×