ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মি. বেকারের বিরুদ্ধে ৮০ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির মামলা

প্রকাশিত: ২২:২৫, ৯ নভেম্বর ২০২০

মি. বেকারের বিরুদ্ধে ৮০ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির মামলা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশীয় কেক উৎপাদন ও বিক্রিয়কারী প্রতিষ্ঠান ‘মি. বেকারের’র বিরুদ্ধে ৮০ কোটি ১৬ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকির মামলা করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ২৬৫ কোটি টাকা বিক্রয় তথ্য গোপন করে ৩৪ কোটি ৬০ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দেয়ার তথ্য পাওয়ার পর এ মামলা করা হলো। রবিবার ভ্যাট গোয়েন্দা এ মামলা করে বলে নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান জানিয়েছেন। জানা গেছে- একজন ক্রেতাকে ভ্যাট চালান না দেয়ার অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়্ েএত বড় ভ্যাট ফাঁকির ঘটনা ফাঁস হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব আসিফ জামান গত ১৮ অক্টোবর তার নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর রোডে অবস্থিত ‘মি বেকারের’র বিক্রয় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ভ্যাট চালান না দেয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেন। তিনি ওই স্ট্যাটাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিমের কাছে প্রতিকার চেয়ে উল্লেখ করেন, ভোক্তারা ভ্যাট দিলেও তা সরকার পাচ্ছে না। এ অভিযোগ ও আরও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম অভিযোগটি তদন্তের জন্য ভ্যাট গোয়েন্দাকে নির্দেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০ অক্টোবর ভ্যাট গোয়েন্দার একটি দল রাজধানী তুরাগের ধোউড়ার মোকদাম আলী সরকার রোডে অবস্থিত ‘মি. বেকার কেক এ্যান্ড পেস্ট্রি শপ লিমিটেড’র কারখানা ও প্রধান কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে। প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে কেন্দ্রীয়ভাবে নিবন্ধিত (ভ্যাট নিবন্ধন নং : ০০০৯৬৪৬৮২-০১০২)। রাজধানীতে প্রতিষ্ঠানটির ২৯টি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে, এর মাধ্যমে কারখানায় উৎপাদিত পণ্য বিক্রয় করে থাকে। ভ্যাট গোয়েন্দার অভিযানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি কোন ধরনের হিসাব সংরক্ষণ ব্যতীত ব্যবসা পরিচালনা করছে বলে জানান মইনুল খান। অনুসন্ধানের স্বার্থে টঙ্গী এলাকায় তাদের নামে খোলা দুটি ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়। এতে তাদের ফিন্যান্সিয়াল প্রতিবেদন পাওয়া যায় এবং এগুলো পর্যালোচনায় তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্পর্কে একটি চিত্র উঠে আসে। অভিযানটির নেতৃত্ব দেন ভ্যাট গোয়েন্দার উপ-পরিচালক নাজমুন নাহার কায়সার এবং ফেরদৌসী মাহবুব। ভ্যাট গোয়েন্দা দলের আকস্মিক পরিদর্শনকালে প্রতিষ্ঠানটিতে ভ্যাট আইনের বাধ্যবাধকতা অনুসারে ক্রয় হিসাব পুস্তক (মূসক-৬.১) ও বিক্রয় হিসাব পুস্তক (মূসক-৬.২) পাওয়া যায়নি। ভ্যাট আইন অনুযায়ী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই দুটি হিসাব সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ বিষয়ে মইনুল খান জানান, পরিদর্শনকালে ভ্যাট সংক্রান্ত অন্যান্য দলিলাদি দেখাতে বলা হলে উপস্থিত মালিকপক্ষ তা দেখাতে পারেননি এবং এগুলো সংরক্ষণ না করার বিষয়ে তারা কোন সদুত্তরও দিতে পারেননি। প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে মালিকপক্ষ নিজস্ব বাণিজ্যিক দলিলাদিও রাখেন না। এতে ভ্যাট গোয়েন্দা দলের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, মনগড়া ও কাল্পনিক হিসাবের ভিত্তিতে ‘মি. বেকার’ স্থানীয় ভ্যাট সার্কেলে রিটার্ন দাখিল করে আসছে। এমনকি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে অভিযানের আগেরদিন যেসব পণ্য ফ্যাক্টরি থেকে বের করেছে তার মূসক-৬.৫ চালান দেখাতে বলা হলেও তারা তা দেখাতে পারেননি। অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি কেন্দ্রীয় নিবন্ধিত হওয়ায় মূসক-৬.৫-এর মাধ্যমে পণ্য ফ্যাক্টরি থেকে আউটলেটে নেয়ার বিধান থাকলেও তা পরিপালন করা হয় না। একইসঙ্গে তারা ভোক্তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা ভ্যাট সরকারী কোষাগারে যথাযথভাবে জমা দেয়নি। অভিযানে গোয়েন্দা দলের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে অবস্থিত অন্য একটি ভবনের বিভিন্ন তলায় ও ছাদে অবস্থিত কর্মচারীদের থাকার কক্ষ তলাশি করে তাদের পুরনো কিছু অসংগঠিত তথ্যাদি পায়। গোয়েন্দা দল সেখান থেকে এসব কাগজপত্র জব্দ করে। পরে জব্দ করা এবং অনুসন্ধানের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য ও দলিলাদির ভিত্তিতে ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত শুধু বিক্রয়ের ওপর ৩৪ কোটি ৬০ লাখ ৫৬ হাজার ৩৩৯ টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উদঘাটন করা হয়। এই ভ্যাটের ওপর মাসভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ২৫ কোটি ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার ৯১ টাকা সুদ প্রযোজ্য।
×