ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দুই পণ্যের দাম কমাতে কঠোর অবস্থানে সরকার

কালো তালিকাভুক্ত হচ্ছে অসাধু ভোজ্যতেল ও আলু ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: ২২:২৪, ৯ নভেম্বর ২০২০

কালো তালিকাভুক্ত হচ্ছে অসাধু ভোজ্যতেল ও আলু ব্যবসায়ীরা

এম শাহজাহান ॥ অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে অস্থির ভোজ্যতেলের বাজার। নির্ধারিত দামের চেয়ে ১০ টাকা বেশি দরে ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি আলু। সম্প্রতি লিটারপ্রতি ২ টাকা দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা। কিন্তু তারা (ব্যবসায়ীরা) প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করে উল্টো দাম বাড়িয়েছেন প্রতিলিটারে ৫ টাকা পর্যন্ত। গত একমাসে প্রকারভেদে প্রতিলিটার ভোজ্যতেলে ১০-১৫ টাকা দাম বেড়েছে। ভোজ্যতেল ও আলুতে অতিরিক্ত মুনাফা করা হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। এ কারণে দ্রুত এ দুটো নিত্যপণ্যের দাম কমাতে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার। ভোজ্যতেলের অসাধু মিলমালিক ও আমদানিকারকদের কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। এছাড়া হিমাগারে মজুদকৃত আলু বাজারে নিয়ে আসতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অসাধু হিমাগার মালিক ও পাইকারি আলু ব্যবসায়ীদেরও কালো তালিকাভুক্ত করে শাস্তির আওতায় আনা হবে। জানা গেছে, দেশের খুচরা বাজারে প্রতিলিটার ভোজ্যতেল সয়াবিন লুজ ৯৮-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সয়াবিন তেল পাঁচ লিটারের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বোতল ৫০০-৫৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। পামওয়েল লুজ প্রতিলিটার ৮৮-৯০ এবং পামওয়েল সুপার ৯০-৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের ঘোষণা অনুযায়ী, এখন মিলগেটে খোলা সয়াবিন তেল ৯০ ও পামতেল ৮০ টাকা দরে বিক্রি হওয়ার কথা। তবে নির্ধারিত এই দাম কার্যকর করেনি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা। ফলে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। কয়েক মাস আগেও ভোজ্যতেলের দাম স্বাভাবিক ছিল। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে কিনে খুচরায়ও বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। গত এক বছরের মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের ভোজ্যতেল। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, ভোজ্যতেল বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে। আর এ কারণেই সম্প্রতি ভোজ্যতেলের আমদানিকারক ও মিলমালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেই বৈঠকে লিটারপ্রতি ২ টাকা দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বাজারে ভোজ্যতেল বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এটা কাম্য নয়। অন্যদিকে আলুর বিপণনের বিষয়টি দেখভাল করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ৩৫ টাকা দাম নির্ধারণ করে দেয়া হলেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি দামে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। জানা গেছে, ভোজ্যতেলের আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের একটি তালিকা তৈরি করছে সরকার। এছাড়া আলু সংরক্ষণের হিমাগার মালিকদেরও একটি তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে। সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা দাম বাড়ানোর কারসাজির সঙ্গে জড়িত অসাধু ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কালো তালিকাভুক্ত করে নজরদারি বাড়ানো হবে। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যে বৈঠক করা হয় তাতে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া দাম বাড়ানোর পেছনে অসাধু ও মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের কারসাজির প্রমাণ পেয়েছে ট্যারিফ কমিশন। আলুর দাম কমাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর থেকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয়। ইতোমধ্যে শতাধিক ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হলেও তাতেও বাজারে এর কোন প্রভাব পড়েনি। বরং আলু আগের বাড়তি দাম ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। এ কারণে অসাধু ও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কালো তালিকাভুক্ত করে কিভাবে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়েও নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, ভোজ্যতেল ও আলুর দাম নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষা করেছে। নির্ধারিত দাম কার্যকর করা হয়নি। ফলে ভোজ্যতেল, আলুসহ প্রায় অধিকাংশ নিত্যপণ্য এখন বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের এসব ব্যবসায়ীকে নিয়ন্ত্রণ করতে বিশেষ কৌশল গ্রহণ করা হবে। একদিকে করোনা অন্যদিকে চলছে রোজার প্রস্তুতি। এ অবস্থায় অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে বাজার পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
×