ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

জনবল ও দক্ষতা বাড়েনি প্রশাসনে ॥ তিন দশকে কর্মপরিধি বেড়েছে কয়েক গুণ

প্রকাশিত: ২২:২২, ৯ নভেম্বর ২০২০

জনবল ও দক্ষতা বাড়েনি প্রশাসনে ॥ তিন দশকে কর্মপরিধি বেড়েছে কয়েক গুণ

তপন বিশ্বাস ॥ গত তিন দশকে প্রশাসনের কর্মপরিধি বেড়েছে কয়েকগুণ। বেড়েছে দেশের জনসংখ্যা। সে অনুপাতে বাড়েনি প্রশাসনিক জনবল ও দক্ষতা। সীমিত প্রশাসনিক কাঠামোতে একদিকে যেমন জনসেবা বিঘিœত হচ্ছে, অন্যদিকে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে উন্নয়ন কর্মকা-। যথাযথ প্রশাসনিক গতিতে জনসেবা নিশ্চিত এবং উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনায় আরও দক্ষ জনবলের প্রয়োজনের কথা বলছেন বিশেষজ্ঞ মহল। গত ৩৩ বছরে দেশের জনসংখ্যা হয়েছে দ্বিগুণ। উন্নত বাংলাদেশ গড়তে বর্তমান সরকারের বহুমুখী উদ্যোগের কারণে কর্মপরিধি বেড়েছে কয়েক গুণ। প্রশাসনের পরিধি কিছুটা বাড়লেও কাজের পরিধি বেড়েছে তার চেয়ে বেশি। সিভিল প্রশাসনে জনবল বেড়েছে মাত্র ২৭ শতাংশ। এছাড়া যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব এবং বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির কারণে অপেক্ষাকৃত কম মেধার লোকেরা প্রশাসনে ঢুকে ক্যাডার সার্ভিসের গতি মন্থর করছেন। অপ্রতুল জনবল দিয়ে বিশাল এই জনগোষ্ঠীর সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন সিভিল প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বর্তমান সরকার গত ১২ বছরে শাসনে উন্নত সেবা এবং মানসম্মত উন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছে। ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য সামনে নিয়ে সাজিয়েছে সব উন্নয়ন পরিকল্পনা। স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে কাজের পরিধি। লক্ষ্য অর্জনে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হচ্ছে প্রশাসন যন্ত্রকে। দক্ষতার অভাবে এক্ষেত্রে প্রায়ই নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে উন্নত সেবা এবং মানসম্মত উন্নয়নের জন্য অবশ্যই সরকারের সব স্তরের কর্মচারীর দক্ষতা বাড়াতে হবে। এ জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে ১৯৮৭ সালে সিভিল প্রশাসনে সব মিলিয়ে (প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণী মিলে) জনবল ছিল ১০ লাখ ৯০ হাজার ৩৩৩। বর্তমানে সব মিলিয়ে সিভিল প্রশাসনে জনবল রয়েছে ১৩ লাখ ৮২ হাজার ৩৯৩। সে হিসেবে বিগত ৩৩ বছরে জনবল বেড়েছে ২ লাখ ৯২ হাজার ৬০ জন। এই সময়ে প্রশাসনের জনবল বেড়েছে মাত্র দশমিক ২৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকসের তথ্য অনুয়ায়ী ১৯৮১ দেশের জনসংখ্যা ছিল ৮ কোটি ৯৯ লাখ ১২ হাজার। ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এই জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১১ কোটি ১৪ লাখ ৫৫ হাজারে। বর্তমানে দেশের জনবল প্রায় ২০ কোটি (জনশ্রুত)। সে হিসেবে ৩৩ বছরে দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১১ কোটি। যা দ্বিগুণের চেয়েও বেশি। জনসংখ্যা দ্বিগুণের চেয়ে বেশি বাড়লেও সে তুলনায় বাড়েনি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। এই সময়ে কর্মচারী বেড়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ। শুধুমাত্র জনসংখ্যা বৃদ্ধি নয়, আধুনিকায়ন হওয়ায় কাজের পরিধি বেড়েছে বেশি। এই জনবল দিয়ে বিপুল এই জনগোষ্ঠীর সেবা দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন যন্ত্র। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, প্রশাসন এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং, ব্যাপকতাও বেশি। প্রশাসন এখন জনগণের দোরগোড়ায় যাচ্ছে। সেবাও দিচ্ছে। সেবার মান ও সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। প্রশাসনও সেভাবে কাজ করছে। তিনি বলেন, সেবা দিতে জনবল বৃদ্ধিরও কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশে ৫০ হাজার জনবল বাড়ানোর অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনের নিরিখে জনবল দেয়া হচ্ছে। বিপুল এই জনগোষ্ঠীর সেবা দিতে প্রশাসনের সব স্তরে ব্যাপক জনবলের প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রয়োজন দক্ষতারও। এ লক্ষ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের শীর্ষ এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, প্রশাসন এখন আগের চেয়ে বেশি গণমুখী। সরকারী কাজ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। আগে প্রশাসন যা করত তাই হতো। তাদের কাজের বিরুদ্ধে বলার লোক তেমন ছিল না। যে কারণে তাদের বেশি দক্ষ বলে মনে হতো। এখন উপজেলার চেয়ারম্যান, এমপিসহ জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করতে হয়। এখন একটা কাজ করতে গেলে অনেক ভিন্ন মত থাকে। এগুলো ম্যানেজ করে কাজ করা অনেক চ্যালেঞ্জিং। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসকদের অনেক দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে হয়। প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলেন, আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিশ্ব দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগুচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্ব আধুনিকায়ন হওয়ায় কাজের পরিধি বেড়েছে কয়েকগুণ। সে তুলনায় বাড়েনি জনবল। এখন প্রায়ই বলতে শোনা যায় সিএসপিরা (সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান) অনেক দক্ষ অফিসার ছিলেন। এ প্রসঙ্গে কর্মকর্তাদের বক্তব্য তারা ইংরেজী মাধ্যমে পড়াশোনা করে এসেছিলেন। সে কারণে তারা ইংরেজীতে তুলনামূলকভাবে বেশি দক্ষ ছিলেন। তবে বর্তমান আমলের মতো তাদের ওপর কোন চাপ ছিল না। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারতেন, যেটা এখন সম্ভব নয়। এখন কর্মকর্তাদের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়ে। সে আমলে প্রশাসনের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব তেমন একটা ছিল না। এখন সহকারী কমিশনার থেকে সচিব পর্যন্ত সর্বত্রই রাজনৈতিক চাপ নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। সে আমলে সার্কেল অফিসার ছিলেন দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা। তারা এসডিওদের অধীনে কাজ করতেন। এসডিওরা ছিলেন ক্যাডার অফিসার (সিএসপি)। এতে দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তারা যে কোন আদেশ গুরুত্ব সহকারে মান্য করতেন। বর্তমানে ওই পদে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) রয়েছেন। আর এসডিও পদে রয়েছেন ডিসিরা (জেলা প্রশাসকরা)। বর্তমান প্রশাসনিক এই বিন্যাসে ইউএনও ও ডিসিরা সকলেই প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। ভাল মন্দ সবকিছু বিবেচনার ক্ষমতা তাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে। তাই যা কিছু চাপিয়ে দিলেই তারা করতে চান না। এ জন্য সমন্বয় করতে হয় সকলকে। বর্তমানে ইউএনওকে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মিলে মিশে কাজ করতে হয়। নানা প্রতিকূলতা মাড়িয়ে কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে হয়। তখন জনগণও ছিল অনেক সহজ-সরল। এখন শিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি সমাজের এক শ্রেণীর দুষ্টু লোকের মোকাবেলাও করে কাজ করতে হয়। এদের মোকাবেলা করতে গিয়ে কোথাও কোথাও এই কর্মকর্তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও হতে হচ্ছে। এমনিক কোথাও কোথাও মামলাও শিকার হতে হচ্ছে জনগণের জন্য কাজ করতে গিয়ে। সিএসপিদের আমলে বিশ্বে কাশ্মীর ও ইসরাইল সমস্যা ছাড়া অন্য কোন সমস্যা ছিল না। বর্তমানে বিশ্বে সমস্যা। ঘরে-বাইরে সমস্যা। এগুলো মাথায় নিয়ে কাজ করতে হয় কর্মকতাদের। আগে সব বিভাগ প্রশাসনের কাছে সরাসরি দায়বদ্ধ ছিল। তখন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা স্থানভেদে অন্য কর্মকর্তাদের এসিআর লিখতেন। তাতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ মানতে তারা বাধ্য ছিল। প্রশাসন ক্যাডারের কাছ থেকে ম্যাজিস্ট্রেসি কেড়ে নেয়া হয়েছে। মোবাইল কোর্ট থাকলেও তাতে রয়েছে নানা প্রতিকূলতা। তার মধ্যেও এই মোবাইল কোর্ট জনগণকে অনেক সেবা দিচ্ছে। জাটকা নিধন বন্ধে মোবাইল কোর্ট দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দেশের মানুষ এখন বড় ইলিশ মাছ খেতে পারছে। সম্প্রতি ভেজাল বিরোধী অভিযানে মোবাইল কোর্ট কাজ করছে। যদিও তা অপ্রতুল। এখন অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাধীন করে দেয়া হয়েছে। এতে কেউ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশ মানতে চান না। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কথা না শুনলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার মতো কোন সুযোগ নেই তাদের হাতে। প্রশাসন আরও ভোতা হয়ে পড়েছে। অথচ কোথাও কিছু হলে তার জন্য জবাবদিহি করতে হয় এই প্রশাসনকেই। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য সব মিলিয়ে রয়েছে মাত্র ১০ মাসের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা। ছেলেদের ক্ষেত্রে রয়েছে আরও ২৮ দিনের একটি প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা রয়েছে ১০ মাস ২৮ দিনের। এর মধ্যে ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য সর্ব প্রথম প্রশিক্ষণ হলো বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ। নিয়োগের পর পর্যায়ক্রমে সব কর্মকর্তাদের এই প্রশিক্ষণ নিতে হয়। সাভারে পিএটিসিতে একসঙ্গে মাত্র ২৫০ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব। সব ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য এই প্রশিক্ষণটি বাধ্যতামূলক হওয়ায় কোন এক বিসিএসের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হওয়ার আগেই অপর এক ব্যাচের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দেন। যে কারণে এই প্রতিষ্ঠান কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হিমশিম খাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক যুগ্ম সচিব জনকণ্ঠকে বলেন, পিএটিসির অবকাঠামোগত উন্নয়নের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। এ প্রশিক্ষণ অপ্রতুল আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এই প্রশিক্ষণের মেয়াদ চার মাস থেকে বাড়িয়ে ছয় মাস করার প্রস্তাব করেছি। তার আগে পিএটিসির অবকাঠামোগত উন্নয়ন হওয়া দরকার। সেখানে এক ব্যাচে ২৫০ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা আছে। সর্বোচ্চ ২৬০ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া যায়। সব ক্যাডার মিলে এক সঙ্গে প্রায় দেড় হাজার নিয়োগ দেয়া হয়। অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হলে এদের প্রশিক্ষণ দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। সিএসপি কর্মকর্তাদের জন্য এই বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ ছিল এক বছর মেয়াদের। সে ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়াতে এই প্রশিক্ষণের মেয়াদ বাড়ানো হবে কী না জানতে চাইলে যুগ্ম সচিব বলেন, আমরা এই মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠিয়েছি। তিনি বলেন, আমাদের যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে তাই ঠিকমতো দিতে পারছি না। বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ ছাড়াও প্রশাসন ক্যাডারের জন্য বর্তমানে প্রশিক্ষণের মধ্যে রয়েছে বিসিএস প্রশাসন একাডেমির আইন ও প্রশাসন কোর্স। এই কোর্সের মেয়াদকাল চার মাস। এর পরে রয়েছে ‘সার্ভে এ্যান্ড সেটেলমেন্ট’ কোর্স। এর মেয়াদকাল দুই মাস। আর পুরুষ কর্মকর্তাদের জন্য রয়েছে অতিরিক্ত বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি কোর্স। এই কোর্সের মেয়াদ মাত্র ২৮ দিন। সিএসপি কর্মকর্তাদের এই প্রশিক্ষণের মেয়াদ ছিল সব মিলিয়ে দুই বছর। এর মধ্যে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ ছিল এক বছর মেয়াদের। এছাড়া ‘সার্ভে এ্যান্ড সেটেলমেন্ট’ কোর্স এবং মিলিটারি একাডেমি কোর্সের মেয়াদ ছিল বাকি এক বছর মেয়াদের। তখন বিসিএস একাডেমিও ছিল না। আর ছিল না এই কোর্সও। তবে এক বুনিয়াদি প্রশিক্ষণেই কর্মকর্তাদের আরও দক্ষ করে তুলত। বর্তমানে দায়সারা প্রশিক্ষণ হয় এই কোর্সে। এ প্রসঙ্গে ওই যুগ্ম সচিব বলেন, তখন মোট কর্মকর্তাদের সংখ্যা হতো ৩০ থেকে ৪০। তাদের দীর্ঘসময় ধরে ভালভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব হতো। বর্তমানে এক বিসিএস-এ প্রায় দেড় হাজার কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়ে থাকেন। যে কারণে আগের মতো দীর্ঘসময় ধরে প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব হয় না। এক প্রশ্নের জবাবে যুগ্ম সচিব বলেন, এছাড়াও প্রকল্পের মাধ্যমে বছরে ৫০ কর্মকর্তার বিদেশে এমএস করার সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি আরও ২০ কর্মকর্তা বিদেশে ডিপ্লোমা করতে পারেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এছাড়া কেউ অন্য কোন ডিগ্রী নিতে চাইলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সরকারের অনুমতি নিয়ে তা সংগ্রহ করতে পারে। কিন্তু এই সংখ্যাও সীমিত। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার জনকণ্ঠকে বলেন, আগের তুলনায় জনবল কম হলেও এখন প্রশিক্ষণের মান বেড়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। বর্তমান অনেক কর্মকর্তাদের মধ্যে ইংরেজী জ্ঞানের ঘাটতি আছে স্বীকার করে তিনি বলেন, আগে ইংরেজী মিডিয়ামে পড়াশুনা করত। সঙ্গত কারণে তাদের ইংরেজীতে বেশি দখল ছিল। এছাড়া বর্তমানে অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইংরেজী চর্চা কম হয়। এ ঘাটতি মেটাতে ট্রেনিংয়ের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। সব প্রশিক্ষণ ইংরেজী মাধ্যমে করা হচ্ছে। ম্যাট (ম্যানেজিং এ্যাট দ্য টপ) ট্রেনিংটা খুবই কার্যকর ছিল বলে মন্তব্য করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। প্রকল্পটির অর্থায়ন করে ডিএফআইডি। প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়াতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়। জানা গেছে, ডিএফআইডি প্রকল্পের মেয়াদ আর বাড়াচ্ছে না। সাবেক সিনিয়র সচিব শাহ কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে পদ এবং কর্মকর্তার সংখ্যা বাড়ানো দরকার। এখন অনেক ক্ষেত্রে আইটি সেবা চালু হয়েছে। সে ক্ষেত্রে নতুন পদ সৃষ্টি করে জনবল নিয়োগ দেয়া দরকার। শুধু জনবল নিয়োগ দিলেই হবে না। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিয়োগকৃত এই জনবলকে মানবসম্পদে পরিণত করতে হবে। জনসেবায় যথাসময়ে পদ পূরণ করতে হবে। নিয়োগ এবং পদোন্নতির মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। তা হলে মাঠপর্যায়ে সেবার ঘাটতি হবে না। জনবল বাড়ালে সরকারের ব্যয়ও বেড়ে যাবে। এটি মাথায় নিয়ে প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে হবে। প্রতিটি কর্মকর্তাকে দক্ষ করে তুলতে হবে। এতে কম জনবল দিয়েও অধিক সেবা পাওয়া যেতে পারে। সাবেক সচিব মোশারফ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বর্তমান সরকার কিছু সেক্টরে জনবল বাড়িয়েছে। তবে প্রতিনিয়ত সরকারের কার্যক্রম বাড়ছে। সে ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য আরও জনবল বাড়ানো দরকার। তিনি বলেন, প্রায় সব ক্ষেত্রের কার্যক্রম ডিজিটালাইজড হওয়াতে সেবা প্রদান অনেক সহজ হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে কাজের তুলনায়, জনবল বেশি, আবার কোন কোন ক্ষেত্রে কাজের তুলনায় জনবল কম রয়েছে। যে ক্ষেত্রে বেশি, তা কমানো যেমন দরকার, তেমনি যেখানে কম আছে সেখানে জনবল বাড়ানো দরকার। সব মিলে সব ক্ষেত্রে যৌক্তিক পর্যায়ে জনবল রাখতে হবে। সর্বোপরি আরও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে হবে।
×