ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মুনতাহা ইসলাম

উৎসব নয় সীমিত পরিসরে বিয়ে

প্রকাশিত: ২০:২৯, ৯ নভেম্বর ২০২০

উৎসব নয় সীমিত পরিসরে বিয়ে

উত্তরের হিমেল হাওয়া জানান দিয়ে যাচ্ছে শীত এসে গেছে। আকাশে বাতাসে এখন শীতের ঘ্রাণ। তবে এবার শুধু শীত একা আসে নি, সঙ্গে এনেছে করোনা নামের এক মহামারী রোগকে। বছরের ঠিক এই সময়টা বিশেষভাবে পরিচিত বিবাহ উৎসবের কারনে। তবে এবার আর পরিস্থিতি অনুকুলে নেই, উৎসব ছাড়াই সীমিত পরিসরে চলছে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। সানাইয়ের সুর কানে ভেসে আসলেই মনের জানালায় ফুটে ওঠে বিয়ের আয়োজন। উঁকি দেয় নানা উৎসবমুখর আয়োজনের স্মৃতি। নারী পুরুষের দুটি হৃদয়ের মেলবন্ধনের নামই বিয়ে। সূত্রপাত হয় নিবিড় এক সম্পর্কের। যে সম্পর্ক দিয়েই পাড়ি দিতে হয় জীবনের বাকি পথ। আস্থা আর নির্ভরতার মধ্য দিয়েই এগিয়ে যায় সম্পর্ক। উৎসবপ্রিয় বাঙালী জাতি যে কোন উৎসব পেলেই যেন জাতি ধর্ম নির্বিশেষে এক হয়ে যায়। ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে উৎসবকে সম্পন্ন করতেই যেন ব্যস্ত থাকে সবাই। এ ঐতিহ্য বাঙালীর হাজার বছরের। কিছু কিছু উৎসবের আবেশ যেন ছড়িয়ে যায় বহুদূর। রঙিন হয়ে ওঠে উৎসবের আকাশ। তেমনি এক উৎসব হচ্ছে বিয়ে। একেক জাতি কিংবা একেক ধর্মাবলম্বী একেক স্টাইলে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে থাকলেও উৎসবের আমেজ যেন একই। আনুষ্ঠানিকতার ভিন্নতা লক্ষ্য করা গেলেও উৎসবের ধরন একই রকম। বর-কনে নিয়ে মাতামাতি নিয়ে ব্যস্ত থাকে সবাই। সবচেয়ে বেশি উৎসুক দৃষ্টি থাকে কনের সাজ নিয়ে। বিয়ের শাড়ি গয়নার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কনের সাজ কেমন হলো এ নিয়ে জল্পনা কল্পনার যেন শেষ নেই। একটা সময় ছিল যখন কনের সাজ বাড়িতেই সম্পন্ন হতো। কালের আবহে পাল্টে গেছে দিন, পাল্টে গেছে ক্ষণ। এখন ঘরে বসে কনের সাজের দিন আর নেই। অপরূপ কনের সাজ তুলে ধরতে সৃষ্টি হয়েছে বিউটি সেলুনের। যারা রীতিমতো গবেষণা করে কনেকে সাজিয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, একেক অনুষ্ঠানের সাজ পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর একেক রকম হয়ে থাকে। অর্থাৎ গায়ে হলুদ, বিয়ে এবং বৌভাতের সাজ একেক স্টাইলের হয়ে থাকে। কোনটার সঙ্গে কোনটার মিল নেই। আর মিল থাকার কথাও নয়। সঙ্গত কারণেই তিনটি উৎসবের বৈশিষ্ট্য ভিন্ন রকমের। মানুষ আগের তুলনায় অনেক বেশি সচেতন। আর এ সচেতনতার প্রভাব পড়েছে বিয়ে-শাদিতে। যে কারণে এখন আকদ-এর মতো অনুষ্ঠানে কনে বিউটি সেলুনে এসে সেজে যায়। এটা অবশ্যই একটা ইতিবাচক দিক। আকদ-এর সাজ : দিন যতই গড়াচ্ছে মানুষ তত বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। আর এ ব্যস্ততা নিজের প্রতি যত্ন নেয়ার অবসরটুকু দেয় না। যে কারণে বিশেষ কোন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিতে মেয়েরা ভিড় জমায় বিউটি পার্লারে। যার ফলশ্রুতিতে আকদ-এর সাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে পার্লারে। তবে আকদ-এর সাজ গায়ে হলুদ, বিয়ে কিংবা বৌভাতের তুলনায় হাল্কা হয়ে থাকে। সাজের সব উপকরণ ব্যবহৃত হলেও ভারি সাজের প্রভাব তাতে থাকে না। একটু খোলা চুল কিংবা কার্লি স্টাইলে রাখা হয় চুলের সাজ। শাড়ি এবং জুড়ির ওপর বেজ মেকআপ করা হয়ে থাকে। হাল্কা সাজের প্রতিবিম্ব দেখা যায় বিয়ের আসরে। অর্থাৎ আকদ-এর দেখে সবাই সবাই ধারণা করে নেয় বিয়ের সাজে কনেকে কেমন লাগবে। হলুদের সাজ : হলুদের সাজে এক ধরনের ফ্লাওয়ারিশ ভাব লক্ষ্য করা যায়। অর্থাৎ হলুদের প্রতিটি পদক্ষেপে ফুলের প্রাধান্য বিদ্যমান। এ কারণেই হলুদের সাজে ফুলের প্রভাব লক্ষণীয়। হলুদে কনেকে সাজানো হয় ফুলের গহনায়। আর ফুলের গহনা কি রঙের তার ওপর নির্ভর করে হলুদের সাজ। সেই সঙ্গে শাড়ির রঙ তো রয়েছেই। কেউ বাসন্তি কিংবা গাড়ো হলুদ রঙের শাড়ি কিংবা হালকা হলুদ রঙের শাড়ি পড়ে থাকে। যে কারণে রঙ অনুযায়ী সাজও ভিন্ন হয়ে থাকে। হলুদে চোখের সাজ বলতে একটু লাইনার কিংবা কাজল টেনে দেয়া। পাপড়িতে ফ্লাওয়ার বেজ হালকা শেড। বিয়ে : প্রথাগত বিয়ের সাজের বাইরে এখন সাজানো হয় কনেকে। বিশেষ করে থিম বেজ সাজ। যেমন পিকক কিংবা ফেয়ারি সাজ। পিকক থিম বেজ বলতে স্টেজ থেকে শুরু করে বর কনের বসার জায়গা পর্যন্ত সবকিছুতেই থাকছে ময়ূরের সাজ। আর এর ওপর নির্ভর করেই সাজানো হয় কনেকে। শাড়ি গয়না এবং স্টেজ সবকিছুর বর্ণনা দেয়া থাকলে সাজটা হয় পারফেক্ট। সহজেই মানিয়ে যায় এবং দ্রুত দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম। লুকটা হয়ে থাকে একদম ডিফারেন্ট। তবে এসব বিষয় না জানা থাকলে ট্রেডিশনাল মেকআপ অথবা শাড়ি গয়নার ওপর বেজ করে মেকআপ করা হয়ে থাকে। থিম বেজ ছাড়া কেউ কেউ বিয়েতে মডার্ন লুক ডিমান্ড করে। তখন সেভাবেই সাজানো হয় কনেকে। এটা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে কনের চাহিদার ওপর। বৌভাত : বিয়ে-শাদির আনুষ্ঠানিকতায় সবচেয়ে সুন্দর সাজ হয়ে থাকে বৌভাতে। কারণ বৌভাতে শাড়ি কিংবা গয়নার রঙের কোন বাধ্যবাধকতা থাকে না। যে কারণে সাজটাও হয় ডিফারেন্ট। এ পর্বে বর এবং কনে উভয়ই বেশ রিলাক্স মুডে থাকে। যে কারণে সাজের আবহটা বজায় থাকে। এ কারণেই পুরো অনুষ্ঠানেই এক ধরনের রিফ্রেশমেন্ট কাজ করে। বিয়ে এবং বৌভাতে চুলের সাজে বড় রকমের ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। চোখের শেড এ ভারি কাজ বেশ মানিয়ে যায়। বিশেষ টিপস : অনেকেই বিয়ের আগে মেনিকিউর পেডিকিউরসহ অন্য যেসব রূপচর্চা আছে তা একবারে সেরে নেয়। যদিও সময়ের অভাবে অনেকে তা করে থাকেন। তবে সবচেয়ে ভালো হয় বিয়ের কয়েক মাস আগে থেকে শুরু করলে। এতে বিয়ের সময় বেশ রিফ্রেশ লাগে। ত্বকের উজ্জ্বলতাও বৃদ্ধি পায় বহুগুণে। এছাড়া হেয়ার ট্রিটমেন্ট কিংবা ওয়াস্টিন বা লোমের ট্রিটমেন্ট আগে থেকে করিয়ে নিলে তাড়াহুড়ার মধ্যে পড়তে হয় না। আমাদের দেশে বরের সাজের ব্যাপারে তেমন কেউ আগ্রহ প্রকাশ করে না। এটা ঠিক নয়। বরের জন্যও হালকা, প্রয়োজনভেদে ভারি মেকআপের প্রয়োজন রয়েছে। ভারি মেকআপ করা পরিপাটি কনের পাশে মেকআপ ছাড়া বরের ছবি যেন অনেকটাই ম্লান। যে কারণে বরের বেসিক মেকআপের প্রয়োজন রয়েছে। এখন অবশ্য বিয়ের আগে পাত্র নিজেই চলে আসে নিজেকে পরিপাটি করতে। এটা অবশ্যই একটা ইতিবাচক দিক। একটা বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত সবারই, সেটা হলো বিয়ের অনেকেই কারণে অকারণে কনেকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করে থাকে। দেখা গেছে ৩-৪ ঘণ্টা মেকআপের বড় একটা সময় ব্যয় হয় ফোন রিসিভ করা নিয়ে। আবার বিয়ের আসরে অনেকেই বিভিন্ন ইনফরমেশন দিয়ে টেনসে ফেলে দেয় কনেকে। যেটা কনেকে না দিলেও চলে। যেমন বর পক্ষের কোন মন্তব্য, কিংবা পারিবারিক ইস্যু যেটা গার্ডিয়ানরা সমাধা করতে পারে সেরকম কোন তথ্য কেউ কনের কানে দিয়ে তাকে ডিস্টার্ব করা হয়। যার প্রভাব পড়ে চেহারায়। বিয়ের মতো নির্মল এক আনন্দঘন অনুষ্ঠানে সতেজ থাকাটাই সবার কাম্য। সঠিক মেকআপই পারে সে সতেজতা অনেকখানি তুলে ধরতে। মডেল : রুমি ও বর্ষা, মেকআপ : সিগনেচার লুক বাই সামিয়া ছবি : সাজ্জাদ, ড্রেস : ফিওনা, গহনা : ট্রেনডি
×