ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গ্রামকে শহরে রূপান্তর করতে পাইলট প্রকল্প

পাল্টে যাচ্ছে গ্রামীণ জনপদ

প্রকাশিত: ২১:৩৬, ৮ নভেম্বর ২০২০

পাল্টে যাচ্ছে গ্রামীণ জনপদ

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন ‘গ্রাম হবে শহর’ শতভাগ বাস্তবায়ন করতে তৃণমূল পর্যায়ের সাধারণ মানুষের সেবাদানের জন্য সরকারের অন্যতম প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদ। তাই ইউনিয়ন পরিষদকে শক্তিশালী ও কার্যকর সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের বিষয়টি বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান বিবেচনায়। এজন্য ইউনিয়ন পরিষদকে দিতে হবে ক্ষমতা ও আর্থিক স্বাধীনতা। যার জন্য প্রয়োজন পরিষদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও জনগণের বাস্তব অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। সে লক্ষ্যে দেশের মধ্যে সর্বপ্রথম সিরাজগঞ্জ জেলায় প্রথম শুরু হয় ‘সিরাজগঞ্জ লোকাল গবর্ন্যান্স ডেভেলপমেন্ট ফান্ড প্রজেক্ট (এসএলজিডিএফপি) পাইলট প্রকল্প’। ওই পাইলট প্রকল্পের অভিজ্ঞতার আলোকে স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রকল্পের সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ২০১১ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত ‘দ্বিতীয় লোকাল গবর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট (এলজিএসপি-২) বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা হয়। এ প্রকল্পটির মাধ্যমে সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদের একাউন্টে সরকারের থোক বরাদ্দ দিয়ে স্থানীয় জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ফলে ইউনিয়ন পরিষদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ পরিষদের জবাবদিহিতা ও কাজের স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পেয়েছে তৃণমূল পর্যায়ের জনগণের মধ্যে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এলজিএসপি-২ প্রকল্পের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হয়েছে পাঁচ বছর মেয়াদী এলজিএসপি-৩ প্রকল্প। যা শেষ হবে আগামী ২০২১ সালের জুন মাসে। সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন ‘গ্রাম হবে শহর’ বাস্তবায়নে ব্যতিক্রম এ প্রকল্পের মাধ্যমে ইতোমধ্যে পাল্টে যেতে শুরু করেছে এক সময়ের অবহেলিত গ্রামীণ জনপদ। যার সুফল ভোগ করতে শুরু করেছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাসিন্দারা। জানা গেছে, ইতোমধ্যে দেশের ৪ হাজার ৫৫৩টি ইউনিয়ন পরিষদকে এলজিএসপি কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়েছে। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার পাঁচ শ’ ৩৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের তিন হাজার ১৫৩ কোটি টাকা এবং বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তা বাবদ দুই হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। তারই ধারাবাহিকতায় বরিশাল জেলার দশ উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদে এলজিএসপি-৩ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, জনগণের চাহিদা অনুযায়ী গ্রামীণ এলাকায় নির্মিত হচ্ছে রাস্তা, কালভার্ট, ব্রিজ, বাজার উন্নয়ন, প্রাথমিক শিক্ষা, পানি, স্যানিটেশন, কমিউনিটি ক্লিনিক মেরামত, মানবসম্পদ উন্নয়নসহ নানা উন্নয়নমূলক কর্মকা-। এসব উন্নয়নের ফলে ইতোমধ্যে বদলে যেতে শুরু করেছে অতীত সরকারের সময়ে অবহেলিত গ্রামীণ জনপদের পুরনো চেহারা। এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের জেলা পর্যায়ে দায়িত্বে থাকা জেলা সহায়ক (ডিএফ) মোঃ মিজানুর রহমান জানান, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দুই কিস্তিতে জেলার দশ উপজেলার ৮৮টি ইউনিয়ন পরিষদের অনুকূলে মোট ১৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা পরিষদের ব্যাংক হিসাবে সরাসরি বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এরমধ্যে আগৈলঝাড়া উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের ব্যাংক হিসাবে সরাসরি ১ কোটি ২২ লাখ ১৪ হাজার ১১ টাকা। বাবুগঞ্জ উপজেলার ছয় ইউনিয়নে ১ কোটি ২০ লাখ ১৯ হাজার ৯৭২ টাকা। বাকেরগঞ্জ উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে ২ কোটি ৮২ লাখ ৮৭ হাজার ১২৪ টাকা। বানারীপাড়া উপজেলার আটটি ইউনিয়নে ১ কোটি ৩২ লাখ ২০ হাজার ৪০৩ টাকা। গৌরনদী উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ১ কোটি ৫৪ লাখ ৭৬ হাজার ৫৬১ টাকা। হিজলা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৬১ হাজার ৮৪৭ টাকা। সদর উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ১ কোটি ৯২ লাখ ৯১ হাজার ৬৯৮ টাকা। মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে ২ কোটি ৫১ লাখ ১২ হাজার ৮৩৩ টাকা। মুলাদী উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ১ কোটি ৪৩ লাখ ৮৯ হাজার ৩২৩ টাকা ও উজিরপুর উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের অনুকূলে সরাসরি ১ কোটি ৯৮ লাখ ৮৯ হাজার ৮৯৮ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
×