ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

হালুয়াঘাটে উচ্ছেদ ঠেকাতে ৫ লাখ টাকার ফাণ্ড

সরকারী জমিতে অবৈধ স্থাপনা

প্রকাশিত: ২১:৩০, ৮ নভেম্বর ২০২০

সরকারী জমিতে অবৈধ স্থাপনা

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ হালুয়াঘাট বাজারে সরকারী জায়গা জবরদখল করে পাকা স্থাপনা নির্মাণের প্রতিযোগিতা চলছে। অভিযোগ রয়েছে, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গোপন আতাত করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসব স্থাপনা নির্মাণ করছেন। এসব স্থাপনা উচ্ছেদে একাধিকবার সিদ্ধান্ত হলেও পরে তা কার্যকর না হওয়ায় জনমনে দেখা দিয়েছে নানা সন্দেহ ও প্রশ্ন। এ নিয়ে ময়মনসিংহ সড়ক বিভাগ ও হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার পরস্পর বিরোধী কথা বলেছেন। ময়মনসিংহ সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আজিজুল হক জানান, জবরদখল করা সরকারী জায়গা থেকে নির্মাণাধীন পাকা স্থাপনা নিজ খরচে অপসারণের জন্য অবৈধ দখলদার যুবলীগ নেতা রিপন ও আবুল কালাম আজাদ গংদের নামে নোটিস দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অপসারণ করা না হলে ম্যাজিস্ট্রেটের সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে উচ্ছেদ করা হবে। আর উচ্ছেদের কঠোর সিদ্ধান্ত থেকে কিছুটা সরে এসে হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেজাউল করিম জানান, অবৈধ দখলদারদের বৈধতা দিতে বাৎসরিক নবায়নের ভিত্তিতে লাইসেন্স দেয়ার অফার করা হবে। তবে সরকারের প্রয়োজনে তাদের উচ্ছেদ করা হতে পারে বলেও জানান তিনি। স্থানীয় প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তার এমন নরম সুর নিয়ে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সরকার দলীয় স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। হালুয়াঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কবীর বেগ জানান, হালুয়াঘাট বাজারের প্রধান এই সড়কটির কামারপট্টি থেকে উত্তর বাজার পর্যন্ত সম্প্রসারণে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রের উপস্থিতিতে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এরপর বার বার মাপজোখ করে লাল চিহ্নরেখা দেয়ার পরও কেন উচ্ছেদ কার্যক্রম হচ্ছে না প্রশ্ন রেখে এই প্রবীণ নেতা মন্তব্য করেন ‘ডাল মে কুচ কালা হে’। প্রচার রয়েছে উচ্ছেদ ঠেকাতে জবরদখলকারীরা চাঁদা তুলে পাঁচ লাখ টাকার ফান্ড করেছে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, হালুয়াঘাট বাজারের কামারপট্টি থেকে উত্তর বাজার পর্যন্ত প্রধান সড়ক লাগোয়া প্রায় দেড় শতাধিক বাণিজ্যিক দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে সরকারের খাস খতিয়ান, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং জেলা পরিষদের জায়গার ওপর। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রভাবশালীরা কোন ধরনের বাধা-নিষেধ ছাড়াই সরকারী জায়গা জবরদখল করে গড়ে তুলেছে এসব স্থাপনা। শুরুতে অস্থায়ী কাঁচা স্থাপনা গড়ে তোলা হলেও কর্তৃপক্ষের নির্বিকার ভূমিকার কারণে দিন দিন স্থায়ী ও পাকা স্থাপনা গড়ে তোলার প্রতিযোগিতা চলছে এখন। সূত্রগুলো আরও জানায়, হালুয়াঘাট সীমান্তে রয়েছে দুটি স্থল বন্দর ও ইমিগ্রেশন। ফলে হালুয়াঘাট বাজারের প্রধান এই সড়কের ওপর এমনিতেই যানবাহনের চাপ বাড়ছে প্রতিনিয়ত। সময়ের বাস্তবতায় যেখানে বাজারের প্রধান সড়কটির সম্প্রসারণ প্রয়োজন, সেখানে উল্টো জবরদখলের কারণে দিন দিন সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়ছে। এমতাবস্থায় যান চলাচলে অনেকটাই অনুপযোগী হয়ে পড়ছে সড়কটি। অভিযোগ রয়েছে, সড়ক বিভাগ ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের নির্বিকার ভূমিকার কারণেই জবরদখলকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। খেয়াল খুশিমতো বিনা বাধায় গড়ে তুলছে স্থায়ী-অস্থায়ী নানা স্থাপনা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, জবরদখলকারীদের কারও কোন বৈধতা নেই। ফলে জবরদখলকারীদের কাছ থেকে বন্ধ রয়েছে খাজনা আদায়। যদিও জবরদখলকারীদের কেউ কেউ নিজ নামে বিআরএস রেকর্ড করাতে সক্ষম হন। এ নিয়ে মামলাও চলমান। হালুয়াঘাটের সাবেক নির্বাহী অফিসার আইয়ুব আলীর মেয়াদে অবৈধ জবরদখলকারীদের তালিকা তৈরি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল বলে জানান স্থানীয়রা। কিন্তু পরবর্তীতে রহস্যজনক কারণে এটি আর আলোর মুখ দেখেনি। প্রচার রয়েছে, তৎকালীন জেলা প্রশাসন ও সড়ক বিভাগের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে জবরদখলকারীরা তাদের অবৈধ স্থাপনা টিকিয়ে রাখে। পরবর্তীতে হালুয়াঘাটে দুটি স্থল বন্দর প্রতিষ্ঠা ও ইমিগ্রেশন পয়েন্ট চালুর কারণে প্রধান সড়কে যানবাহনের চাপ বাড়লে ফের সড়কটির সম্প্রসারণ প্রশ্নে দাবি উঠে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রমের। এ নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য জুয়েল আরেং ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেজাউল করিমসহ উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে সভায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। স্থানীয় সূত্রগুলোর দাবি, পৌর মেয়রের নেতিবাচক মনোভাবের কারণেই আলোর মুখ দেখছে না বহুল প্রত্যাশিত উচ্ছেদ কার্যক্রম।
×