ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আপনার আসন ছিল পরম আস্থার

প্রকাশিত: ২৩:৩৬, ৬ নভেম্বর ২০২০

আপনার আসন ছিল পরম আস্থার

পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদকদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ সীমিত। দেশের বাইরে থাকার কারণে সামনাসামনি পরিচিত সম্পাদকের সংখ্যা খুবই কম। সহৃদয় কেউ লেখা চাইলে, যদি সম্ভব হয় তবে লেখা পাঠাই। এমন অবস্থায়ও একমাত্র হাসনাত ভাইয়ের সঙ্গে বাড়তি যোগাযোগ তৈরি হয়েছিল। ছ’মাস ন’মাসে ফোনে সংক্ষিপ্ত কথা হতো। শুরু থেকেই উনি এত পরিশীলিত স্নেহভরে কথা বলতেন যে শ্রদ্ধায় অবনত হয়ে যেতে হতো। তাঁর সম্পাদনায় আমার বেশ ক’টি গল্প মাসিক কালি ও কলম এ প্রকাশিত হয়েছে। লেখা ই-মেইল করলে বলতেন, ছাপা হবে। ঐটুকুই। তারপর প্রকাশিত হতো। কখনো কোন লেখায় একটি শব্দও অদল বদল করতে বলেননি। লেখা ছাপানোর জন্য তাঁকে ফিরতি ইমেইলএ কখনো ধন্যবাদটুকুও দেয়া হয়নি। হাসনাত ভাই বুঝিয়ে দিতেন যে লেখকের যেমন লেখা ছাপানোর জন্য পত্র পত্রিকার প্রয়োজন, একজন সম্পাদকেরও তেমন মানসম্মত সাহিত্য পাতার জন্য ভাল লেখা প্রকাশ দরকার। বিষয়টা এত পারস্পরিক যে বাড়তি কথার অর্থ নেই। একবারই তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছে, ২০১১ সালে। আমার প্রথম গল্পের বই ‘পৃষ্ঠাগুলো নিজের’ অন্তর্ভুক্ত বেশ কটি গল্প কালি ও কলমে ছাপা হয়েছিল। বইটি প্রকাশের কথা শুনে তাঁর অফিসে যেতে বললেন। উত্তরা আমার পরিচিত জায়গা না, তবু গেলাম। ভেবেছিলাম চারদিকে কাগজপত্র ছড়ানো এলোমেলো অফিস হবে, কিন্তু খুব গোছানো অফিস। বেশ অনেকক্ষণ গল্প করলেন। রাকীর এর চিত্রকলা নিয়ে কথা হলো। ওর সঙ্গে ২০০৭ সালে আড্ডা দিয়েছেন, সেখানে কবি রফিক আজাদ, রবিউল হুসাইন, কবি সম্পাদক মারুফ রায়হান ছিলেন সেকথাও বললেন। পত্রিকা উপহার দিলেন। ফেরার সময় জানতে চাইলেন কি করে যাব। আমার সঙ্গে গাড়ি নেই। উনি ফোনে তার ড্রাইভারকে ডাকলেন। নিচে নেমে ড্রাইভারকে বলে দিলেন আমাকে পৌঁছে দিতে। আপাত কঠিন একটা ব্যক্তিত্বের খোলসে তাঁর স্নেহপ্রবণ মন এবং নারীর প্রতি সম্মানের বিষয়টি সত্যি আপ্লুত করেছিল। আমার লেখার সম্মানীগুলো নিতে বিশেষ করে বললেন। আমার পক্ষে তাদের অফিসে আবার আসা সম্ভব হবে না বলায়, বললেন যে আমি যেন বেঙ্গল প্রকাশন্সের বইমেলার স্টল থেকে তা সংগ্রহ করে নেই। বইমেলায় স্টলে গিয়ে আমার নাম বলতেই খাম বন্দী লেখার সম্মানী রশীদসহ পেয়েছি। আমার উপন্যাস বিসর্গ তান বেঙ্গল প্রকাশনী থেকে বেরিয়েছিল। যথারীতি আমি মন্ট্রিয়ালে, আমি বইয়ের প্রুফ দেখে দিতে চাইলাম। উনি সানন্দে রাজি হলেন। তাদের প্রুফরিডার এর সঙ্গে ফোনে আলাপ করিয়ে দিলে সে কাজটি সহজ হয়ে গিয়েছিল। দু’বার প্রুফ দেখেছি, ইমেলগুলো হাসনাত ভাইয়ের মাধ্যমে যেত। সময়মতো উত্তর দিতেন। ডাকযোগে বই প্রকাশের চুক্তিপত্র পাঠিয়েছেন, এবং আমি তা সই করে ফেরত পাঠিয়েছি। তখন তার পেশাদারিত্ব, দায়িত্ববোধ এবং ধৈর্য দেখে চমৎকৃত হয়েছি। দেশের বাইরে থেকে সাহিত্য চর্চার প্রধান অসুবিধা যোগাযোগ। হাসনাত ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগে সেটা অনুভব করিনি। নিউইয়র্কে এসেছেন জেনে কথা বললাম একদিন। মন্ট্রিয়ালে আসবার কথা বলেছিলেন। রাকীব এবং আমার দু’জনের সঙ্গেই ফোনে কথা বললেন। আপনার তো আসা হলো না হাসনাত ভাই! আর ফোনে, ইমেইলে যোগাযোগ হবে না ভাবতে কষ্ট হচ্ছে। লেখালেখির মতো একাকী জার্নিতে আপনি ছিলেন পরম আস্থার জায়গা। প্রাণে আত্মীয়বিয়োগের ব্যথা অনুভব করছি। ওপারে ভাল থাকুন।
×