ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জোর প্রস্তুতি কলকারখানা শপিংমল চালু থাকবে দ্রুত আমদানি বাড়ানোর পরামর্শ মূল্য নিয়ন্ত্রণে ওয়ার্কিং গ্রুপ

অর্থনীতিতে করোনার সম্ভাব্য দ্বিতীয় ধাক্কা সামাল দিতে

প্রকাশিত: ২৩:০০, ৫ নভেম্বর ২০২০

অর্থনীতিতে করোনার সম্ভাব্য দ্বিতীয় ধাক্কা সামাল দিতে

এম শাহজাহান ॥ করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ধাক্কা থেকে সামগ্রিক অর্থনীতি সামলাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। অন্যান্য দেশের মতো লকডাউনের অনুরূপ পদক্ষেপে না গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কলকারখানা, মার্কেট ও শপিংমল চালু রাখার বিষয়ে একটি নির্দেশিকা তৈরি করা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে পণ্য উৎপাদন ও বিপণনে বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ে সমন্বয়ে গাঠন করা হয়েছে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ। স্বল্প আয়ের মানুষের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি অব্যাহত রাখবে সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবি। এছাড়া ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগেভাগে পণ্যসামগ্রী আমদানি বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আসন্ন শীতে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় প্রস্তুতি সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বৈঠকে শিল্পোদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী, ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারক, পোশাক শিল্পের রফতানিকারকহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীদের ডাকার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহে বৈঠকটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। মানুষের জীবন রক্ষায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যে লকডাউন শুরু করেছে। করোনা সংক্রমণ বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায়। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সবদিক বিবেচনায় আসন্ন শীতে বাংলাদেশেও করোনার সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে এই আশঙ্কার কথা বলেছেন। একইসঙ্গে তিনি প্রস্তুতির কথাও বলেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনা বৃদ্ধির আশঙ্কায় রোগীদের চিকিৎসার জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এ অবস্থায় করোনা বেড়ে গেলে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকা- কিভাবে চলবে সে বিষয়ে প্রস্তুতিমূলক কর্মসূচী গ্রহণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছে স্বাস্থবিধি মানার ওপর। বিশেষ করে বাইরে বের হলে মাস্ক, স্যানিটাইজার ব্যবহার এবং বাসাবাড়িতে হ্যান্ডওয়াস ও সাবান ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের অধিভুক্ত সকল জেলা চেম্বার ও খাতভিত্তিক এ্যাসোসিয়েশনগুলোকে এ ব্যাপারে দিক নির্দেশনামূলক গাইড লাইন দেবে সরকার। যেমন-বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ’র অধীনে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কলকারখানায় ৫০ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন। এসব কারখানায় যাতে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পণ্যসামগ্রী উৎপাদন করা হয় সে বিষয়ে নজর দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা সামলানোর জন্য সরকার সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে। এতে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর। যাতে দেশের প্রতিটি মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বাভাবিক কর্মকা- চালিয়ে যেতে পারেন। তিনি বলেন, অনেক দেশ লকডাউনে গেলেও আমাদের দেশে বাণিজ্য কর্মকা- পুরোপুরি চালু থাকবে। এজন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি কার্যক্রম বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া পণ্য উৎপাদন ও বিপণনে বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় একযোগে কাজ করবে। এজন্য একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। এই গ্রুপের কো-চেয়ার হচ্ছেন দুই মন্ত্রণালয়ের সচিব। শীতকালে কোন পণ্যের দাম আর বাড়বে না। ইতোমধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি হয়ে গেছে। এছাড়া শীতের সবজির আসা শুরু হয়েছে। পণ্যসামগ্রীর বিপণন যাতে ভালভাবে হয় সেদিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা সামলাতে বাণিজ্য সংগঠনগুলোকে কাজে লাগাতে চায় সরকার। সংগঠনগুলোর এপেক্স বডি ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইকে একটি নির্দেশনামূলক গাইড লাইন দেবে মন্ত্রণালয়। এফবিসিসিআই তার অধিভুক্ত সকল সংগঠনগুলোকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পণ্যসামগ্রী উৎপাদন ও বিপণনের জন্য বলবে। এছাড়া পণ্যসামগ্রী আমদানি-রফতানি সংক্রান্ত বিষয়েও আলোচনা করা হবে। আগামী সপ্তাহে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক করতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পোশাকখাতের রফতানি ধরে রাখা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য ইতোমধ্যে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি অবশ্য আগে-ভাগে স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর তাগিদ দিয়েছে। সম্প্রতি সংগঠনটির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, বিশ্বে দ্বিতীয় দফায় করোনার সংক্রমণ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে শীত মৌসুম আসছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে সবাইকে মাস্ক পরার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সামনে শীতে করোনার সংক্রমণ বাড়তে পারে, এমন আশঙ্কায় সরকার ‘মাস্ক নাই, সেবা নাই’ নীতি বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ও সরকারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে দোকান মালিকরাও বলছেন, এ মুহূর্তের ভ্যাকসিন, মাস্ক দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে নিন। এবার কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে দেশবাসীকে। এরপরও কোন কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে প্রথমদিকে গণপরিবহন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হতে পারে। এরসঙ্গে বন্ধ থাকবে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। দোকানপাট, শপিংমল, কারখানা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান-যেমন ব্যাংক, বীমা, শেয়ারবাজার খোলা রাখা হবে। সরকারী-বেসরকারী অফিস-আদালতও খোলাই থাকবে। তবে কঠোরভাবে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি।
×