ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মামলার দীর্ঘসূত্রতা কমানোর উপায় বের করুন

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ৫ নভেম্বর ২০২০

মামলার দীর্ঘসূত্রতা কমানোর উপায় বের করুন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মামলার দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে দ্রুততম সময়ে মধ্যে বিচার নিশ্চিত করার উপায় বের করতে বিচারক ও আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, অল্প সময়ে, স্বল্প খরচে ভোগান্তিমুক্ত বিচার প্রাপ্তি মানুষের অধিকার। যদি দ্রুত সময়ে ও অল্প খরচে বিচার দিতে পারেন তাহলে মানুষের একটা আস্থা, বিশ্বাসও বাড়বে। যদিও আমাদের মানুষের এবং আমাদের সকলের আস্থা, বিশ্বাস আছে। তারপরও বলব এই ব্যাপারে সবাইকে একটু বিশেষ নজর দিতে। এর জন্য যদি কোন রকমের কিছু সহযোগিতা প্রয়োজন হয়, সরকারের পক্ষ থেকে সেটা আমরা নিশ্চয়ই করব। কিন্তু এত মামলা এভাবে পড়ে থাকুক সেটা আমরা চাই না। বুধবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা জেলার নবনির্মিত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আদালতের রায় বাংলায় লেখার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রয়োজনে এক্ষেত্রে ট্রান্সলেটর নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিচার বিভাগের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, রায় যদি কেউ বাংলায় লিখতে না পারেন, ইংরেজীতে লেখেন- কোন আপত্তি নেই। কিন্তু সেই রায়টা বাংলায় ট্রান্সলেশন করে যেন প্রচার হয় সেই ব্যবস্থাটা করে দিতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে মামলার রায়গুলো ইংরেজীতে দেয়া হয়। অনেকে সেই রায়টা বুঝতে না পারায় আইনজীবীরা যেভাবে বোঝান সেভাবে তাদের বুঝতে বা জানতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে ইংরেজীতে লিখতে লিখতে অনেকে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। তাই, বাংলাতেই রায় লিখতে হবে, এ ধরনের চাপ প্রয়োগ ঠিক নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে আমি বলব, এগুলো ট্রান্সলেশন করা এমন কোন কঠিন কাজ নয়, অনেক প্রফেশনাল ট্রান্সলেটর আছেন। তাদেরও আপনারা প্রশিক্ষণ দিয়ে নিতে পারেন। চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন উদ্বোধনের পর সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশা এর ফলে আমাদের দেশের মানুষের বিচার চাওয়ার ক্ষেত্রে ভোগান্তিটা অন্তত কমে যাবে। তারা যেন ন্যায়বিচার পায়। আমাদের মতো যেন কাউকে এই বিচারহীনতায় ভুগতে না হয়। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর জনসন রোডস্থ আদালতপাড়ায় ঢাকা জেলার নবনির্মিত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবনের মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। আইন সচিব গোলাম সারোয়ার অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে আইন সচিব গোলাম সারোয়ার মূল অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত থেকে ভবনের ফলক উন্মোচন করেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে ঢাকা জেলার নবনির্মিত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবনের একটি রেপ্লিকাও উপহার দেন। মামলার দীর্ঘসূত্রতা কমানোর উপায় বের করতে বিচারক ও আইজীবীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জুন, ২০২০ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন আদালতসমূহে ৩৭ লাখ ৯৪ হাজার ৯০৮টা মামলা বিচারাধীন আছে। এইসব মামলার দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে দ্রুততম সময়ে রায় প্রদানের উপায় বের করবার জন্য আমি সব বিচারক এবং আইনজীবী সকলের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, এত মামলা যেন এভাবে জমে না থাকে। আপনারা কিভাবে দ্রুতবিচার সম্পন্ন করা যায়, অবশ্যই সেই ব্যাপারে একটু আন্তরিক হবেন এবং ব্যবস্থা নেবেন এবং এর জন্য যদি কোন রকমের কিছু সহযেগিতা প্রয়োজন হয়, সরকারের পক্ষ থেকে সেটা আমরা নিশ্চয়ই করব। ন্যায়বিচার নিশ্চিতে সরকার প্রয়োজনীয় সব করতে প্রস্তুত মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে- আমরা যেহেতু আইন সভার সদস্য, সেখানে আইন প্রণয়ন বা আইন সংস্কার বা যেখানে যা করা দরকার সেগুলো সব করতে আমরা প্রস্তুত। সরকার হিসেবে আমাদের যা দায়িত্ব সে দায়িত্বও আমরা সব সময় পালন করতে প্রস্তুত। যেন বাংলাদেশের মানুষ ন্যায়বিচার পায়, দেশের মানুষ ভাল থাকে, স্বস্তিতে থাকে, শান্তিতে থাকে, নিরাপদে থাকে, উন্নত জীবন পায়। আর এভাবেই যেন আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারি, সে লক্ষ্য নিয়েই সরকার কাজ করে যাচ্ছে। সরকারপ্রধান এ সময় সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান এবং সকলেই আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। আবার ১৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবে।’ কিন্তু তিনি এবং তার বোন (শেখ রেহানা) জাতির পিতার হত্যাকা-ের বিচার চাইতে পারেননি, ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে জিয়াউর রহমান সে বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার মাধ্যমে এদেশের মানুষের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার কেড়ে নেয়া হয়। প্রতিষ্ঠা করা হয় বিচারহীনতার সংস্কৃতি। ১৫ আগস্ট আমরা যারা আপনজন হারিয়েছিলাম আমাদের কিন্তু বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না। বিচার চাইতে পারি নাই। ১৯৮১ সালে যখন দেশে ফিরে আসি, এই হাইকোর্ট ভবনে বহুবার গেছি। বিচারের বাণীতে নির্ভৃতে কেঁদেছে, আমরা বিচার চাইতে পারিনি। যেখানে সংবিধানের প্রতিটি ক্ষেত্রে বলা আছে যে, সকলে বিচার পাওয়ার অধিকার রাখে, আমরা কিন্তু বঞ্চিত থাকলাম। আমরা এ জঘন্য হত্যাকা-ের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছি। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের সময়ে চাঞ্চল্যকর ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাকা-ের বিচার, নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত ৭ খুনের মামলা এবং হলি আর্টিজেন হত্যাকা-ের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাসহ সব চাঞ্চল্যকর মামলার বিচার সম্পন্ন করা কথা উল্লেখ করে এজন্য সংশ্লিষ্ট সব বিচারকগণকে ধন্যবাদও জানান প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগ সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জন্য সমতার ভিত্তিতে সুবিচার নিশ্চিত করা এবং বিচার ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আমাদের সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইংরেজীর পাশাপাশি মামলার রায় বাংলায়ও প্রচারের ব্যবস্থার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে এখন হয়ত লেখাপড়া একটু বাড়ছে, তারপরও অনেকে সেই রায়টা বুঝতে পারে না। এক্ষেত্রে ট্রান্সলেটরদের কাজ হবে যেটাই লেখা হোক সব ট্রান্সলেশন হয়ে যাবে এবং সেটাই প্রচার হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষও জানতে পারবে। ফলে, বিচারের কি রায় হলো তারা সেটা নিজে দেখে বুঝতে পারবে, জানতে পারবে। এ সময় প্রধান বিচারপতিকেও অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রধান বিচারপতিকেও অনুরোধ করব, এখানে আইনমন্ত্রীও আছেন, আপনারা কিছু ব্যবস্থা নেন। কারণ এটা জুডিসিয়াল ব্যাপার। এর অনেক কথা, শব্দ, টার্মস যেগুলো আমাদের সাধারণক্ষেত্রে ব্যবহার হয় না, সেগুলোর অনুবাদ যদি সহজভাব করা যায়। এ ব্যাপারে যদি কোন ফান্ড লাগে সেটারও ব্যবস্থা করব। কিন্তু আমি চাই, এটা যেন হয়। সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারাবদ্ধ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার জন্য সমতার ভিত্তিতে সুবিচার নিশ্চিত করা এবং বিচার ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আমাদের সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ ও এজলাস সঙ্কট নিরসনের পাশাপাশি মামলা ব্যবস্থাপনার দিকে বিশেষ নজর দেয়া হয়েছে। ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১১ বছরে অধঃস্তন আদালতে এক হাজার ১২৬ জন বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া, দরিদ্র-অসহায় ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের সরকারীভাবে আইনী সহায়তা প্রদান করার লক্ষ্যে দেশের ৬৪ জেলা সদরে এবং সুপ্রীমকোর্টে লিগ্যাল এইড অফিস স্থাপন করা হয়েছে। ২০০৯ থেকে জুলাই ২০২০ পর্যন্ত জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার মাধ্যমে সর্বমোট ৫ লাখ ২৫ হাজার ৩০ জনকে বিনামূল্যে আইনী সেবা প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশে একটি স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়ই আন্তরিক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর পরই ‘দি কোড অব ক্রিমিন্যাল প্রসিডিউর (সংশোধন) আইন, ২০০৯’ পাশের মাধ্যমে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের কাজটিকে স্থায়ী রূপ দিয়েছে। অধঃস্তন আদালতের বিচারকদের জন্য পৃথক বেতন স্কেল বাস্তবায়ন, বিচারকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জুডিসিয়াল ভাতা প্রদানসহ বিচার বিভাগের বিভিন্ন উন্নয়নের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ৪২ জেলায় চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জন্য ৮-১০ তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ২৯ জেলায় নবনির্মিত আদালত ভবন উদ্বোধন করা হয়েছে। এসব ভবনে স্থাপিত আদালতে এখন উন্নত পরিবেশে বিচারিক কাজ চলছে। অবশিষ্ট জেলাগুলোতেও চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকা চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবনের উদ্বোধন করা হলো। আমার প্রত্যাশা, এ ভবন নির্মাণের মধ্য দিয়ে জনগণের বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ভোগান্তি অনেকাংশে কমবে। সন্ত্রাসবিরোধী মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ৭টি সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল স্থাপন, ৭টি বিভাগীয় শহরে সাইবার ট্রাইব্যুনাল স্থাপন, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ২০১৮ সালে ৪১টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের পর ২০২০ সালে আরও ৬টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া ৭টি মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়েছে বলেও অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেন তিনি। সরকারপ্রধান আরও বলেন, ধর্ষণের মামলায় ধর্ষকদের কঠোর শাস্তি প্রদানের জন্য মৃত্যুদ-ের বিধান রেখে তার সরকার ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২০’ প্রণয়ন করেছে এবং মাদক সংক্রান্ত মামলাগুলোর দ্রুতবিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ প্রণয়ন করেছে। তিনি বিচারপতি এবং আইনজীবীদের কল্যাণ কামনা করে তারা যেভাবে মানুষের পাশে রয়েছেন সেভাবেই তাদের মানুষের পাশে থাকার আহ্বান জানান। তার সরকার দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে এবং শিক্ষার হার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রম, সামাজিক খাতে নিরাপত্তা বিধান এবং দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের উদ্ভুদ পরিস্থিতিতে ন্যায়বিচার প্রদান অব্যাহত রাখতে ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনার জন্য ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার, আইন ২০২০’ প্রণয়ন করা হয়েছে। কেরানীগঞ্জের কারাগারে এ ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দাগী আসামিদের বিচারের ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে দেশের সব কারাগারেই ভার্চুয়াল কোর্টের ব্যবস্থা রাখতে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় করোনাভাইরাসে সাবেক এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমসহ দেশ বিদেশে যারা মারা গেছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী। যতদিন পর্যন্ত এর ভ্যাকসিন না আবিষ্কার হবে বা সহজলভ্য হবে সে পর্যন্ত এর সুরক্ষা অত্যন্ত কঠিন আখ্যায়িত করে তিনি সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং বাইরে বের হলে বা কর্মক্ষেত্রে গেলে মাস্ক ব্যবহারের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, এই করোনাভাইরাস থেকে নিজেকে এবং অপরকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় জাতির পিতার ভাষণের একটি অংশ উদ্বৃত করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হইবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা, যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক অধিকার, রাজনীতি, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে।’ তিনি বলেন, এটা কিন্তু সংবিধানেরও কথা, সংবিধানের প্রস্তাবনায় কিন্তু এই কথাগুলো উল্লেখ রয়েছে। সেখানে আইনের শাসন এবং সুবিচারের কথা বারবার উল্লেখ করা আছে। সরকারপ্রধান আরও বলেন, প্রত্যেকটা মানুষেরই বিচার পাওয়ার এবং বিচার চাওয়ার অধিকার আছে। সংবিধানে আমরা দেখি প্রতিটি মানুষের যে মৌলিক চাহিদাগুলো সেই চাহিদাগুলো কিন্তু বিস্তারিতভাবে দেয়া আছে। একটা রাষ্ট্র পরিচালনা কীভাবে হবে, তারপর মানুষের অধিকার কীভাবে নিশ্চিত হবে- সে কথাও কিন্তু সেই সংবিধানে রয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘একটা ঘটনা আপনারা জানেন কি না? পাকিস্তান আমলে আমাদের দেশে সেখানে কিন্তু একটা বিষয় নিষিদ্ধ ছিল যে, বিচার বিভাগে কোন নারী সেখানে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। স্বাধীনতার পর কিন্তু জাতির পিতা সেটা সংশোধন করে দিয়ে নারীদেরও বিচার বিভাগে আসার সুযোগ করে দিয়েছেন। আমারও সৌভাগ্য, আমি ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর আমাদের উচ্চ আদালতে তখনকার যিনি রাষ্ট্রপতি ছিলেন তাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করে উচ্চ আদালতে যাতে আমাদের নারীরা আসতে পারেন সেই ব্যবস্থাটা করে দিয়েছিলাম। কারণ রাষ্ট্রপতি পারে বিচারক নিয়োগ দিতে।’
×