ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুজনেরই জয় দাবি ॥ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প-বাইডেন

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ৫ নভেম্বর ২০২০

দুজনেরই জয় দাবি ॥ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প-বাইডেন

তানিয়া হক ভূঁইয়া ॥ নজিরবিহীন পরিস্থিতির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষে এখন চলছে গণনা। ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগেই প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নিজেদের জয়ী দাবি করেছেন। নির্বাচনে বিজয়ী হতে হলে যেকোন প্রার্থীকে ২৭০ ইলেক্টোরাল ভোট নিশ্চিত করতে হবে। সর্বশেষ বুথ ফেরত জরিপে দেখা গেছে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেন এগিয়ে রয়েছেন। এদিকে মিশিগান, এ্যারিজোনা, নেভাদা ও উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে বাইডেন এগিয়ে। এই চার অঙ্গরাজ্যে যিনি জিতবেন তিনিই হবেন প্রেসিডেন্ট। যদিও দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত আট অঙ্গরাজ্যের ফল পেতে এখনও অপেক্ষা করতে হবে। সেখানেও বাইডেন এগিয়ে রয়েছেন। তবে ট্রাম্পও খুব একটা পিছিয়ে নেই। বিশেষজ্ঞদের অনুমানই শেষ পর্যন্ত সত্যি হতে চলছে। রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা নির্বাচনের প্রচার শুরুর পর থেকেই বলছিলেন, এবারের নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। সেটিই এখন দেখা যাচ্ছে। নির্বাচনের প্রাথমিক ফল ঘোষণা শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ দেখা যায়। এমনকি হোয়াইট হাউসের সামনেও তারা বিক্ষোভ করে। তারা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়ে মুখর করে রাখে সড়ক ও মহাসড়কগুলো। খবর বিবিসি, সিএনএন, ফক্স নিউজ, নিউইয়র্ক টাইমস, গার্ডিয়ান, রয়টার্স, ইউএসএ টুডে, লস এ্যাঞ্জেলেস টাইমস ও আলজাজিরার। মার্কিন নির্বাচনে শুধু প্রেসিডেন্টকে নির্বাচিত করা নয় বরং এর পাশাপাশি সিনেট ও হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ সদস্যদেরও ভোট দিয়ে নির্বাচিত করা হয়। তাই এই নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ দেশটির জন্য। সিনেটে ১০০ জন সিনেটর ও হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভে ৪৩৫ জন সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন। অপর ছয়জন সংরক্ষিত নিয়ে ৪৪১ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। এবারের নির্বাচন বিশেষ অর্থবহ এজন্য যে, মহামারী করোনার কারণে দেশটিতে ১০ কোটির বেশি মানুষ আগাম ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। নিবন্ধিত ১৯ কোটি ভোটারের মধ্যে ৯ কোটি ভোটার সরাসরি ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে যেকোন প্রার্থীকে ৫৩৮ ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের ২৭০ পেতে হবে। বাইডেন এগিয়ে ॥ সর্বশেষ মেইন এবং এ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের ফলে বিজয়ী হয়েছেন বাইডেন। সেজন্য মেইনের চারটি এবং এ্যারিজোনার ১১ ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটে বিজয়ী হয়ে বাইডেনের এখনও পর্যন্ত সংগ্রহ করেছেন ২৪৮ ইলেক্টোরাল ভোট। তারপরও ২১৪ ইলেক্টোরাল ভোট নিয়েই পড়ে আছেন রিপাবলিকান প্রার্থী এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। বুধবার সর্বশেষ মেইন ও এ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের ফল প্রকাশ করা হয়। দুটিতেই বিজয়ী হন বাইডেন। এর পাশাপাশি নেভাদা অঙ্গরাজ্যেও এগিয়ে আছেন বাইডেন। পেনসিলভানিয়া এবং জর্জিয়ায় এখনও এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। সব সমীকরণ ঠিকঠাক থাকলে উইসকনসিন এবং মিশিগান অঙ্গরাজ্য জয় করতে পারলে হোয়াইট হাউসের টিকেট পেয়ে যেতে পারেন বাইডেন। এদিকে, ২১৪ ইলেক্টোরাল ভোট নিয়ে থাকা ট্রাম্প বেশ ক্ষুব্ধ। এরই মধ্যে জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে নির্বাচনকে ‘জাতির সঙ্গে প্রতারণা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন তিনি। প্রয়োজনে সর্বোচ্চ আদালতে যাওয়ারও হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। সুপ্রীমকোর্টে যাওয়ার হুমকি ট্রাম্পের ॥ হোয়াইট হাউসের ইস্ট রুম থেকে দেয়া ভাষণের শুরুতেই নিজের পরিবার ও কোটি কোটি সমর্থককে তিনি ধন্যবাদ দিয়েছেন, যারা তাকে ভোট দিয়েছেন। নরম কণ্ঠে ট্রাম্প বলেন, বিরাট উদ্যাপনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা। আমরা সবকিছু জিতে নিচ্ছি। সত্যি এই নির্বাচনে জিতে গেছি আমরা। নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ এনে ট্রাম্প তার ভাষণে বলেছেন, আমেরিকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে একটা প্রতারণা হচ্ছে। এটা আমাদের দেশের জন্য লজ্জার। নির্বাচনের ফল নিয়ে লড়াই করতে তিনি সুপ্রীমকোর্টে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন বলেও জানিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য ফ্লোরিডায় জয়ের খবর সমর্থকদের দিয়ে খুশির সুরে তিনি বলেন, আমরা শুধু জিতিনি, বড় ব্যবধানে জিতেছি। পেনসিলভানিয়াতেও রিপাবলিকানদের এগিয়ে থাকার দাবি করেছেন ট্রাম্প, যদিও এর আগে তার প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেনও একই দাবি করেছেন। যেসব অঙ্গরাজ্যে এখনও ভোট গণনা চলছে সেগুলোকে ‘প্রতারণা’ দাবি করে প্রয়োজনে সর্বোচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। এ সময় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ট্রাম্প বলেন, এটা আমেরিকান জনগণের সঙ্গে প্রতারণা। এটা আমাদের দেশের জন্য বিব্রতকর। একই সঙ্গে বেশকিছু অঙ্গরাজ্যেও ভোট গণনাকে ‘অবৈধ’ বলেও দাবি করেছেন ট্রাম্প। ‘ব্যাটল গ্রাউন্ড’ হিসেবে বিবেচিত অঙ্গরাজ্যে এখনও পর্যন্ত তিনি যেগুলোয় এগিয়ে রয়েছেন সেগুলোর ভোট গণনা অব্যাহত রাখার পক্ষে তিনি। অপরদিকে এ্যারিজোনার ভোট পুনরায় গণনার দাবিও জানিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, আমরা সুপ্রীমকোর্টে যাব। সব ভোট গণনা বন্ধ হওয়া চাই। আমরা এই নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সত্যি করে বললে, এই নির্বাচন আমরা জিতেছিলাম। বাইডেনের আইনজীবীরা প্রস্তুত ॥ ভোট গণনা ঠেকাতে রিপাবলিকান দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্প সুপ্রীমকোর্টে যাওয়ার হুমকি দেয়ার পর ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রচার শিবির আইনজীবীদের একটি দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে। বুধবার বাইডেনের প্রচার শিবির বলছে, ভোট গণনা বন্ধের চেষ্টা করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি তার হুমকি অনুযায়ী সুপ্রীমকোর্টে যান; তাহলে সেটি মোকাবেলায় ডেমোক্র্যাট শিবিরের আইনজীবীরা প্রস্তুত আছেন। বাইডেনের নির্বাচনী প্রচার বিভাগের ব্যবস্থাপক জেন ও ম্যালি ডিলন এক বিবৃতিতে বলেছেন, যদি প্রেসিডেন্ট তার হুমকি অনুযায়ী ভোটের যথাযথ সারণী তৈরি ঠেকাতে আদালতে যান, তাহলে এই প্রচেষ্টা প্রতিরোধের জন্য আমাদের আইনী দল প্রস্তুত রয়েছে। নির্বাচনে আইনী লড়াইয়ের সম্ভাবনা ॥ যে আইনী লড়াইয়ের দুঃস্বপ্ন আর শঙ্কা নিয়ে ভোট শুরু করেছিল যুক্তরাষ্ট্র, তাই-ই এখন বাস্তবের দিকে যাচ্ছে। বাইডেন বলছেন তিনি জয়ের পথে আছেন, আর ট্রাম্প ভিত্তিহীনভাবে ভোট চুরির অভিযোগ করছেন। এরকম চলতে থাকলে শেষমেশ ফল আদালতে গড়ানো এবং পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠার বড় ধরনের আশঙ্কা আছে। ভোটের চূড়ান্ত ফল না আসলেও এটি পরিষ্কার যে, যুক্তরাষ্ট্রে এখনও চরম বিভক্তি থেকেই যাচ্ছে। আমেরিকান ভোটাররা ট্রাম্পকে জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যানও করেনি, আবার তার আশানুযায়ী বিপুল সমর্থনও দেয়নি। আর তাই নির্বাচনে যে-ই জয়ী হোক, রাজনৈতিক যুদ্ধ চলতেই থাকবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক ভাষণে নির্বাচনের ফলের প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, তিনি সুপ্রীমকোর্টে যাবেন। আর ডেমোক্র্যাটদের সম্পর্কে তার বক্তব্য ছিল, তারা জানে যে তারা জিততে পারবে না। আর তাই তারাও বলছে, আদালতেই যাই। ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারের সময়ও বিভিন্ন সমাবেশে আইনী পথে যাওয়া নিয়ে জোর গলাতেই কথা বলেছিলেন। কিন্তু তার প্রতিপক্ষ বাইডেনকে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে আইনী পথে যাওয়া নিয়ে সরাসরি কোন কথা বলেননি। বাইডেন কিছু না বললেও তিনি এ লড়াইয়ের জন্য তার আইনজীবীদের প্রস্তুত রেখেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী আইনানুযায়ী, সব অঙ্গরাজ্যেরই ভোট গণনা করা বাঞ্ছনীয়। অন্যবারের তুলনায় এ বছর করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে আগাম পোস্টাল ভোট এবং ভোটকেন্দ্রে গিয়ে মানুষ যে ভোট দিয়েছে সেগুলোরও অনেক ভোট গোনা এখনও বাকি। বাইডেন বলেছেন, ভোট গোনা বন্ধ করার চেষ্টায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি তার হুমকি মতো আদালতে যান, তাহলে তা মোকাবেলায় তার (বাইডেন) আইনজীবী দল প্রস্তুত আছে। ট্রাম্পকে রিপাবলিকান আইনজীবী ॥ ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগেই ট্রাম্পের বিজয় দাবি করাকে ভালভাবে দেখছেন না খোদ রিপাবলিকান পার্টির নির্বাচন সংক্রান্ত প্রবীণ আইনজীবী বেঞ্জামিন এল. জিন্সবার্গ। তিনি মনে করেন, সব ভোট গণনা শেষ হওয়া পর্যন্ত ট্র্রাম্পের অপেক্ষা করা উচিত ছিল। বুধবার প্রেসিডেন্সিয়াল কমিশন অন ইলেকশন এ্যাডমিনিস্ট্রেশনের কো চেয়ার জিন্সবার্গ এমন অভিমত প্রকাশ করেন। ট্রাম্পের দাবিতে খুশি নন আইনজীবী জিন্সবার্গ। সিএনএনের জেক ট্যাপারকে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, কোন নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যালট বা প্রক্রিয়া নিয়ে যদি আপনার আপত্তি থেকে থাকে, তবে প্রত্যেক অঙ্গরাজ্যেই আলাদা করে আইন রয়েছে। ফল যদি খুব কাছাকাছি হয়, তবে পুনর্গণনার আইনও আছে। তবে এগুলো বৈধভাবে দেয়া ভোট। অথবা এগুলো বৈধ ভোট কিনা তা নির্ধারণের দায়িত্বটা স্থানীয় কাউন্টি কিংবা অঙ্গরাজ্যের কর্মকর্তাদের। ওই বৈধ ভোটগুলো প্রেসিডেন্ট জালিয়াতি বলতে পারেন না। এটা সচরাচর ঘটতে দেখা যায় না। ক্ষণে ক্ষণে রং বদলাচ্ছে ॥ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। ভোট গণনাও প্রায় শেষ দিকে। আর মাত্র সাত অঙ্গরাজ্যে পপুলার ভোটে বিজয়ীর নাম জানা বাকি। এ অবস্থায়ও ক্ষণে ক্ষণে রং বদলাচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সংখ্যায় এগিয়ে থাকলেও তিন অঙ্গরাজ্যে জয় পেলেই বিজয়ী হবেন ট্রাম্প। পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, মিশিগান ও আলাস্কায় এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। এ সময় জল্পনার সবটুকু আলো কেড়ে নিয়েছে মিশিগান। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বদলাতে থাকে পরিস্থিতি। সন্ধ্যায় ৯১ শতাংশ ভোট গণনা শেষে মিশিগানে রিপাবলিকানরা এগিয়ে রয়েছে দেখা যাচ্ছিল। মাত্র ঘণ্টা দুয়েক পরেই ৯৪ শতাংশ ভোট গণনা শেষে দেখা যায়, ট্রাম্পকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছেন বাইডেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ ব্যাটল গ্রাউন্ডে বাইডেন পেয়েছেন ২৫ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৫ ভোট (৪৯ দশমিক ৪ শতাংশ)। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্প পেয়েছেন ২৫ লাখ ৮ হাজার ৫৯২ (৪৯ দশমিক ১ শতাংশ)। এ মুহূর্তে প্রায় ১৬ হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন। শেষ পর্যন্ত এ অবস্থান ধরে রাখতে পারলে মিশিগানের মহাগুরুত্বপূর্ণ ১৬ ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটই পক্ষে যাবে তার। মিশিগানে এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডেমোক্র্যাটদের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এগিয়ে থাকা বাকি দুটি অঙ্গরাজ্য নেভাদা ও উইসকনসিনে জেতাটাও। কারণ, এ দুটিসহ মিশিগানে জয় পেলেই বিজয়ী হতে আবশ্যক ২৭০ ইলেক্টোরাল ভোট পেয়ে যাবেন। এর মধ্যে একটি হাতছাড়া হলেই জিতবেন ট্রাম্প। এ পর্যন্ত নেভাদা ও উইসকনসিনে ট্রাম্পের চেয়ে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন। নেভাদায় ৫ লাখ ৮৮ হাজার ২৫২ (৪৯ দশমিক ২ শতাংশ) ভোট পেয়েছেন এ ডেমোক্র্যাট নেতা। সেখানে ট্রাম্প পেয়েছেন ৫ লাখ ৮০ হাজার ৬০৫ ভোট (৪৮ দশমিক ৬ শতাংশ)। অঙ্গরাজ্যটিতে এখন পর্যন্ত ৬৭ শতাংশ ভোট গণনা সম্পন্ন হয়েছে। ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে ছয়টি। উইসকনসিনে দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান আরও কম। সেখানে বাইডেন পেয়েছেন ১৬ লাখ ৩০ হাজার ৩৩৪ (৪৯ দশমিক ৬ শতাংশ) ভোট আর ট্রাম্প পেয়েছেন ১৬ লাখ ৯ হাজার ৫৮৬ (৪৮ দশমিক ৯ শতাংশ) ভোট। ভোট গণনা হয়েছে ৯৫ শতাংশ। সেখানে ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা ১০। অপরদিকে ট্রাম্প ২০ ইলেক্টোরাল ভোট থাকা ব্যাটল গ্রাউন্ড পেনসিলভানিয়ায় পেয়েছেন ২৯ লাখ ৬৫ হাজার ৬৩৬ (৫৫ দশমিক ৭ শতাংশ) ভোট। সেখানে বাইডেনের ঘরে গিয়েছে ২২ লাখ ৯০ হাজার ৬২৪ (৪৩ দশমিক ১ শতাংশ)। অঙ্গরাজ্যটিতে ভোট গণনা হয়েছে ৬৪ শতাংশ। অর্থাৎ এখনও বেশ কিছু ভোট বাড়তে পারে দুই পক্ষেরই। নর্থ ক্যারোলিনায় ট্রাম্প ২৭ লাখ ৩২ হাজার ১০৪ (৫০ দশমিক ১ শতাংশ) ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। বিপরীতে বাইডেন পেয়েছেন ২৬ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯২ (৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ)। এ অঙ্গরাজ্যটিতে ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা ১৫। আরেক ব্যাটল গ্রাউন্ড জর্জিয়াতেও এগিয়ে ট্রাম্প। ১৬ ইলেক্টোরাল ভোট থাকা তিনি পেয়েছেন ২৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৪৬ (৫০ দশমিক ৫ শতাংশ) ভোট। আর বাইডেন পেয়েছেন ২২ লাখ ৭৮ হাজার ১২৩ (৪৮ দশমিক ৩ শতাংশ)। আলাস্কায়ও বিপুল ভোটে এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প। সেখানে তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৮ হাজার ২৩১ (৬২ দশমিক ৯ শতাংশ) ভোট। আর বাইডেন পেয়েছেন ৫৬ হাজার ৮৪৯ (৩৩ শতাংশ) ভোট মাত্র। এ অঙ্গরাজ্যে ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে মাত্র তিনটি। এগিয়ে থাকা এ চার অঙ্গরাজ্যে জিতলে ট্রাম্পের মোট ইলেক্টোরাল ভোট হবে ২৬৭। ফলে নির্বাচনে জিততে তাকে এখন আশ্চর্যজনক কিছুই দেখাতে হবে। ইউরোপীয় নেতাদের সতর্ক প্রতিক্রিয়া ॥ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চূড়ান্ত ফল ঘোষণার আগেই ভিত্তিহীনভাবে নিজেকে জয়ী দাবি করেছেন ট্রাম্প। ভোটের পরদিন বুধবার ভোরে এমন দাবি জানানোর পর ইউরোপীয় রাজনীতিকরা তাকে সতর্কতার সঙ্গে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছে। বেশিরভাগ সরকারী নেতা নীরব ছিলেন। তারা অপেক্ষায় আছেন চূড়ান্ত ফল ঘোষণার। স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরঞ্চা গনজালেজ লায়া মার্কিন নেতাকে ভোট গণনা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন। জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী আনেগ্রেথ ক্রাম্প-কারেনবাউয়ের বলেছেন, এটি বিস্ফোরক পরিস্থিতি। বিশেষজ্ঞরা যথার্থই বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে এমন পরিস্থিতি যা সাংবিধানিক সঙ্কটের দিকে নিয়ে যেতে পারে। আর এমন কিছু আমাদের জন্য বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল বলেন, মার্কিন জনগণ তাদের রায় দিয়েছেন। আমরা যখন ভোটের ফলের অপেক্ষা করছি, ইইউ আমাদের মূল্যবোধ ও ইতিহাসের ভিত্তিতে দৃঢ় সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে প্রস্তুত আছে। রাজনীতিকরা বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করে সতর্ক করে বলছেন, ২০১৬ সালে ট্রাম্পের জয় কোন দুর্ঘটনা ছিল না। এমনকি যদি বাইডেন জয়ী হন তবু তিনি একজন দুর্বল প্রেসিডেন্ট হবেন। সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় তিনি অভ্যন্তরীণ চাপে অসহায় থাকবেন। জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেলের ঘনিষ্ঠ মিত্র পিটার আল্টমায়ের বলেন, আমি শঙ্কিত যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হলে দীর্ঘদিন তা নিয়ে আলোচনা চলবে। যিনিই জয়ী হোন না কেন, মার্কিন নির্বাচনের প্রচার ছিল মূলত যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ইস্যুকে ঘিরে, এটি ভাল না। ফ্লোরিডা, ওহাইও ও টেক্সাসে ট্রাম্পের জয় ॥ নির্বাচনে ব্যাটল গ্রাউন্ড হিসেবে বিবেচিত ফ্লোরিডা, ওহাইও ও টেক্সাসে জয় পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ট্রাম্প গুরুত্বপূর্ণ ওই তিনটি অঙ্গরাজ্যে জয় পাওয়ায় ফল আসার শুরুতেই তাকে হারানোর বাইডেনের স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে। বাইডেন এ্যারিজোনা ও রাস্ট বেল্টের ‘ব্লু ওয়াল’ হিসেবে পরিচিত তিন অঙ্গরাজ্যের ওপর ভর করে হোয়াইট হাউসের আশা এখনও টিকিয়ে রেখেছেন। রাস্ট বেল্টের তিন অঙ্গরাজ্য মিশিগান, পেনসিলভানিয়া ও ওহাইওর ইলেক্টোরাল ভোট নিয়ে তিনি হোয়াইট হাউস জয় করেবেন বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বাইডেন। রাস্ট বেল্টের ওই তিন অঙ্গরাজ্যেও ভোট গণনায় কয়েকদিন লেগে যেতে পারে। পাশাপাশি আরও দুটি ব্যাটল গ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্যে জয় পাওয়ায় হোয়াইট হাউসে ফেরার পথে ভালভাবেই টিকে রইলেন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ধৈর্য ধরার আহ্বান বাইডেনের ॥ ডাকযোগে ভোট ও বিপুলসংখ্যক আগাম ভোটের কারণে যুক্তরাষ্ট্রেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল পেতে তুলনামূলক বেশি সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করছেন বাইডেন। মঙ্গলবার রাতেই ডেলাওয়ারের উইলমিংটন শহরের চেস সেন্টারে দেয়া বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, বুধবার সকালে (যুক্তরাষ্ট্রের সময়) অথবা তারপরেও নির্বাচনের ফল নাও জানা যেতে পারে। নির্বাচনে ‘জয়ের পথে আছেন’ মন্তব্য করে ৭৭ বছর বয়সী বাইডেন সমর্থকদের ধৈর্য ধরারও আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা জানতাম, আমাদের অপেক্ষা দীর্ঘ হবে, আমরা জানতাম, হয়ত আমাদের সকাল পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে, কিংবা তারও বেশি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের যা অবস্থান, সেটা সন্তোষজনক। আজ রাতে আমি আপনাদের বলতে এসেছি, এই নির্বাচনে আমরা জয়ের পথেই আছি। প্রাথমিক ফল বাইডেনের চেয়ে পিছিয়ে থাকা ট্রাম্প ভোটের রাতে টুইট করে অভিযোগ করেছেন তার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। টুইটে তিনি লিখেছেন, আমরা আশাবাদী, কিন্তু তারা এ নির্বাচন চুরির চেষ্টায় আছে। সেটা আমরা তাদের কখনই করতে দেব না। নির্বাচন শেষ হয়ে যাওয়ার পর আর ভোট নেয়া যায় না! টুইটার কর্তৃপক্ষ অবশ্য ট্রাম্পের ওই টুইটে একটি লেবেল সেঁটে দিয়ে বলেছে, ওই বক্তব্য নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। টুইটার ব্যবহারকারীদের সঠিক তথ্য খুঁজে নেয়ার বিষয়ে সতর্কও করা হয়েছে সেখানে। ঈশ্বরের আশীর্বাদে হোয়াইট হাউসে ॥ ২০০৮ সালে গিয়েছিলেন নিজের শৈশবের জন্মভূমি স্কর‌্যান্টনে। এবার ফের ছোট শিল্প নগরীতে গেলেন। নির্বাচনের দিন ট্রাম্প ফিরে যান হোয়াইট হাউসে। আর বাইডেন গির্জায় প্রার্থনা শেষে স্কর‌্যান্টনে যান। সেখানেই মানুষ হয়েছিলেন তিনি। যেই বাড়িতে জন্মেছিলেন। সেই বাড়ি ছেড়ে ১০ বছর বয়সে, পাশের ডেলাওয়ারে পাড়ি জমিয়েছিল পরিবারটি। জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে শৈশবের সেই বাড়িতেই ফিরে এলেন বাইডেন। ড্রয়িং রুমে রাখা একটি ছবি তুলে সই করলেন নিজের নাম। লিখলেন, ‘ঈশ্বরের আশীর্বাদে এই বাড়ি থেকে হোয়াইট হাউস’। এবার দুই নাতনিকে নিয়ে গেলেন। তাদের বললেন, ‘আমরা বাড়ি যাচ্ছি।’ বাইডেনের আগমনে আপ্লুুত বাড়ির বর্তমান মালকিন এ্যান কিয়ার্নস। তিনি বললেন, আমি আপনাকে দেখে চলেছি। আমি গর্বিত আপনার জন্য। উচ্ছ্বসিত প্রতিবেশীরাও। অনেক পুরনো প্রতিবেশি ছুটে যান বাইডেনকে দেখে। তাদের সঙ্গে গল্প করে সময় কাটালেন ৩০ বছরের মার্কিন সিনেটর। করলেন ছোট বেলার গল্প। শেষে বিদায় জানিয়ে ফিরে গেলেন। জানিয়ে গেলেন, হোয়াইট হাউসে গিয়েও ভুলবেন না স্কর‌্যান্টনকে। স্কর‌্যান্টনেরও সেটাই প্রার্থনা। ফল যাচ্ছে কোন পক্ষে? ॥ মার্কিন নির্বাচনের পূর্বাভাসে এখন পর্যন্ত ট্রাম্প ও বাইডেনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মার্কিন গণমাধ্যমগুলোর পূর্বাভাস অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বাইডেন এগিয়ে। টেক্সাসে সবচেয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। টেক্সাস আবার লালে পরিণত হয়েছে। শুরুতে এ অঙ্গরাজ্যে বাইডেন এগিয়ে থাকলেও পরে ট্রাম্প ৩ পয়েন্টে জিতেছেন। ইলেক্টোরাল ভোটের হিসাবে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অঙ্গরাজ্য। সেখানে ইলেক্টোরাল ভোট ৩৮। সর্বোচ্চ ইলেক্টোরাল ভোট ক্যালিফোর্নিয়ায় অবশ্য ৫৫ ভোট। জিতেছেন বাইডেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোর পূর্বাভাস অনুযায়ী, মিশিগান, ওহাইও এবং পেনসিলভানিয়ার মতো ব্যাটল গ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্যগুলোয় বাইডেনের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প। রিপাবলিকান টমি টিউবারভিল আলবামা থেকে সিনেটর নির্বাচিত হয়েছেন। কানসাসের ৬ ইলেক্টোরাল ভোটও গেছে ট্রাম্পের ঝুলিতে। এ অঙ্গরাজ্য রিপাবলিকদের দখলে আগে থেকেই রয়েছে। তাড়া করছে হিলারি ও আল গোর অধ্যায় ॥ জনমত জরিপে প্রচারের শুরু থেকেই এগিয়ে ছিলেন বাইডেন। শেষ মুহূর্তেও ব্যাটল প্রাউন্ড হিসেবে পরিচিত সুইং স্টেটগুলোর অধিকাংশ এলাকায় এগিয়ে আছেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় ৩ নবেম্বর মঙ্গলবার ডেমোক্র্যাটিক দলের ভোটাররা ব্যাপকভাবে ভোট দিয়েছেন বাইডেনকে। এ ক্ষেত্রে বাইডেনের প্রতি সমর্থন যতটা, তার চেয়ে বেশি কাজ করেছে ট্রাম্পের চার বছরের শাসন নিয়ে চরম অসন্তোষ। ডেমোক্র্যাটরা বাইডেনকে ভোট দিতে ভোট কেন্দ্রগুলোয় এলেও তাদের তাড়া করছে এখনও নিকট অতীতের হিলারি ও আল গোর অধ্যায়। যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ইতিহাসে ডেমোক্র্যাটিক দলের আল গোর ও হিলারি ক্লিনটন বিপর্যয় ভুলে থাকা সম্ভব নয়। উভয় প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে মোট ভোট বেশি পেয়েছিলেন। ডেমোক্র্যাটদের অনেকের এখনও বিশ্বাস আল গোরকে নির্বাচনে হারানো হয়েছে আদালতে কারসাজির মাধ্যমে। হিলারির মতো প্রার্থীর জাতীয়ভাবে মোট ভোট বেশি পেয়েও ইলেক্টোরাল ভোটে হেরে যাওয়া এখনও মানতে পারেননি অনেকে। সব সম্ভবের দেশ মনে করা হয় যুক্তরাষ্ট্রকে। ট্রাম্প নিজেও হয়ত কোনদিন মনে করেননি, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হবেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের বেনিয়া গোষ্ঠীর প্রতিনিধি ট্রাম্প নিজেকে এর আগে রাজনীতির মঞ্চেই ছিলেন না। দ্রুতই তিনি ক্ষুব্ধ মানুষের ক্ষোভকে ধরতে পেরেছেন। উস্কে দিয়েছেন অজানা নানা ভয়কে। যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল লোকজনকে যেসব অজানা ভীতি তাড়া করছিল, তারই প্রতিনিধি হয়ে ওঠেন ট্রাম্প। এই মানুষেরাই ট্রাম্পকে তাদের ত্রাতা হিসেবে গ্রহণ করে। মার্কিন রাজনীতিতে ট্রাম্পের আবির্ভাব হঠাৎ করেই। চেনা যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তির সম্পূর্ণ বাইরে গিয়ে এক সদা ক্ষুব্ধ মানুষ হিসেবে ট্রাম্প একের পর এক হামলা করেছেন চিরচেনা নানা ব্যবস্থাকে। এ কারণেই ট্রাম্প সমর্থকেরা তাকে সমর্থন জানিয়ে আসছে। নির্বাচনের দিনও দেখা গেছে ট্রাম্প সমর্থকেরা দলে দলে ভোট দিতে ভোট কেন্দ্রে যাচ্ছেন। তাদের কাছে এ নির্বাচন করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্ক পরা-না পরার নির্বাচন নয়। ট্রাম্পের বিজয়ের সঙ্গে তাদের অস্তিত্বের যোগ রয়েছে বলে তারা মনে করেন। তাদের মতে, ট্রাম্প হেরে গেলে যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্তরাষ্ট্র থাকবে না; অভিবাসী আর অপরাধীদের অভয়ারণ্য হয়ে যাবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হবে, বেহাত হবে সব কর্মসংস্থান, জ্বালানি তেলের দাম বাড়বে। তাদের এসব ভীতির পেছনে কোন তথ্য-উপাত্ত বা যুক্তি নেই। নিছক বিশ্বাসের বশে তারা দাঁড়িয়ে আছেন ট্রাম্পের পক্ষে। গত চার বছরের বিশৃঙ্খলা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এবার বাইডেনের পক্ষে গণজোয়ার দেখা গেছে প্রচারের শুরু থেকেই। গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য নিউজার্সি, ক্যালিফোর্নিয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন ও শ্রেষ্ঠত্বের জন্য যে জনমিশ্রনকে বাহবা দেয়া হয়, সেসব এলাকায় বেশির ভাগ লোকের অবস্থান ভিন্ন। তারা মনে করেন, যথেষ্ট হয়েছে; আর নয়। যুক্তরাষ্ট্রকে যুক্তরাষ্ট্র হিসেবেই তারা দেখতে চান। যুক্তরাষ্ট্র একটি সহমর্মী দেশ। বিশ্বজুড়ে নানা অপকর্ম করে বেড়ালেও মার্কিন জনগণ নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে চায়। এই যুক্তরাষ্ট্রের চিরচেনা ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতেই মানুষ তাই মরিয়া হয়ে বাইডেনকে ভোট দিচ্ছেন। তাদের কাছেও এবারের মার্কিন নির্বাচন মাস্ক পরা বা না পরার নির্বাচন নয়। এ নির্বাচনে বাইডেনকে জয়ী দেখার জন্যই তারা ভোট দিয়েছেন। নানা আশঙ্কা তারা করলেও মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে টিভির সামনে সবাই অধীর আগ্রহে বসে আছেন। একটাই প্রত্যাশা হিলারি বা আল গোরের পরিণতি যেন না হয় বাইডেনের! ডাকযোগের সব ব্যালট পৌঁছানোর নির্দেশ ॥ মহামারীর কারণে এবার যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেকের বেশি ভোটার ডাকযোগে ভোট দিয়েছেন। পোস্টাল সার্ভিসকে এসব ব্যালট পেপার সময়মতো নির্বাচন কমিশনে পৌঁছানো নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন ওয়াশিংটনের এক ফেডারেল বিচারক। এবারের নির্বাচনে ডাকযোগে দেয়া ভোটের সংখ্যা ১০ কোটিরও বেশি। স্বাভাবিকভাবেই এই ভোট জয়-পরাজয় নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাই ডাকযোগে পাঠানো একটি ব্যাটল পেপারও যেন আগাম ভোট কেন্দ্রের বাক্সেও ভেতর পড়ে না থাকে তা নিশ্চিত করতে মঙ্গলবার দিনের শেষ ভাগে ওয়াশিংটন ডি সির ডিস্ট্রিক্ট জাজ এমমেট জি. সুলিভান ওই নির্দেশ দেন। ওই আদেশে পোস্টাল সার্ভিস কর্মীদের সেন্ট্রাল পেনসিলভানিয়া, ফিলাডেলফিয়া, ডেট্রয়েট, আটলান্টা, হিউস্টন, সাউথ ফ্লোরিডা, এ্যারিজোনাসহ আরও কিছু জায়গায় স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৩০ থেকে বিকেল তিনটার মধ্যে ডাকযোগে আগাম ভোটের ব্যালট পেপার জমা দেয়ার জায়গা ভাল করে পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে শুরু হওয়া এবারের নির্বাচনী প্রচারে শুরু থেকেই ডাকযোগে ভোট নিয়ে নানা আলোচনা, বিতর্ক ও অভিযোগ উঠেছে। এ বছর ডাকযোগে অনেক ভোট পড়বে জানার পরও যুক্তরাষ্ট্রের পোস্টাল সার্ভিসের খরচ কমাতে নানা ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। তাই কর্মীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় অন্যান্য বছর থেকে এবার চিঠিপত্র পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে। এ নিয়ে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, পোস্টাল সার্ভিস হয়ত ডাকযোগে পাঠানো অনেক ব্যালট পেপার ঠিক সময়ে নির্বাচন কমিশনের ঠিকানায় পৌঁছে দিতে সক্ষম হবে না। ফলে ভোটের প্রকৃত ফল নির্ধারণে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে। এ নিয়ে আদালতে কয়েকটি মামলাও হয়েছে। এমনই একটি মামলার রায়ে মঙ্গলবার বিচারক জি. সুুলিভান পোস্টাল সার্ভিসকে ওই আদেশ দেন। গত কয়েক মাসে যেসব এলাকায় চিঠিপত্র বিলি করতে দেরি হয়েছে সেসব জায়গাকে বিবেচনায় নিয়েই ওই আদেশ দেয়া হয়। এ বছর কিছু কিছু এলাকায় লাখ লাখ মানুষ কয়েক দিন এমনকি কয়েক সপ্তাহ ধরে কোন চিঠি পাননি। এক এক অঙ্গরাজ্য ডাকযোগে পাঠানো ভোট পৌঁছানোর জন্য এক এক ধরনের সময় বেঁধে দিয়েছে। কোথাও ভোটের পর তিনদিন পর্যন্ত ডাকযোগে আসা ব্যালট গ্রহণ করবে। আবার কোথা ভোটের দিনের পর আর কোন ব্যালট গ্রহণ করা হবে না। পোস্টাল সার্ভিসকে নির্দেশ দেয়ার সময় বিচারক এই বিষয়টিও বিবেচনায় রেখেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পোস্টাল সার্ভিস থেকে এখনও ওই রায়ের বিষয়ে কোন মন্তব্য করেনি।
×