ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভাতা বন্ধ হচ্ছে ৭৫০ সুবিধাভোগীর

প্রকাশিত: ২১:২২, ৪ নভেম্বর ২০২০

ভাতা বন্ধ হচ্ছে ৭৫০ সুবিধাভোগীর

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ সরকার নির্ধারিত বয়স না হলেও দীর্ঘদিন ধরে তারা বয়স্ক হিসেবে ভাতা পেয়ে আসছিলেন। তবে সরকার বয়স যাচাইয়ের জন্য ডিজিটাল সফটওয়্যার চালু করলে কপাল পোড়ে তাদের। ধরা পড়ে তাদের বয়স বাড়ানোর প্রতারণা। বয়স জালিয়াতি করে তালিকাভুক্ত হওয়া রাজশাহীর বাগমারার এ রকম ৭৫০ সুবিধাভোগী এবার ভাতা হারাচ্ছেন। তাদের বাদ দিয়ে বঞ্চিতদের ভাতাভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা বা টাকা ফেরত নেয়া হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ বলেছে, আইনগত বা অর্থ ফেরতের নির্দেশনা না থাকায় ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। জেলার বাগমারা উপজেলা সমাজসেবা দফতর সূত্রে জানা যায়, বয়স্কদের জন্য চালু হওয়া মাসিকভাতা ভোগীদের নির্বাচিত করার জন্য স্থানীয় কমিটির মাধ্যমে ভাতাভোগীদের নির্বাচিত করা হয়। সে ক্ষেত্রে তাদের সরকার নির্ধারিত বয়সকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। সরকার নির্ধারিত বয়স অনুসারে পুরুষদের সর্বনিম্ন বয়স হতে হবে ৬৫ এবং নারীদের ৬২ বছর। বয়স প্রমাণের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধন সনদকে গ্রহণযোগ্য হিসেবে নেয়া হয়। এই সুযোগে স্থানীয় কমিটির সদস্য ও দায়িত্বপ্রাপ্তদের মাধ্যমে সাড়ে সাত শ’ জন তাদের বয়স জালিয়াতি করে ভাতাভুক্ত হয়েছেন। তারা জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্ম তারিখে ঘষামাজা অথবা ভুয়া জন্মসনদ তৈরি করে বয়স বাড়িয়ে ভাতাভুক্ত হয়েছেন। তবে জন্মজনদের বিধান সম্প্রীতি বাতিল করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা মাসিক ৫০০ টাকা ভাতা গ্রহণ করে আসছেন। তাদের এই কাজে সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত জনপ্রতিনিধিরা জড়িত। এদিকে সুবিধাভোগী এসব ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা শুরু হলে তাদের জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। গত দুই মাস ধরে চলা এই যাচাই-বাছাই কার্যক্রমে উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও দুইটি পৌরসভার মোট ১২ হাজার ২৮৮ ভাতাভোগীর মধ্যে ৭৫০ জনের বয়স জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়েছে। এই ৭৫০ ব্যক্তি নিজেদের বয়স ৮-১০ বছর বাড়িয়ে ভাতার তালিকাভুক্ত হয়েছেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে এই অবৈধ সুবিধা গ্রহণ করে আসছেন। ইতোমধ্যে বয়স জালিয়াতি করা এসব ভাতাভোগীর নাম তালিকা থেকে বাদ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাদের নাম বাতিল করে নতুনদের তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার বয়স্ক এবং ভাতাবঞ্চিতদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে ইউনিয়ন কমিটি থেকে উপজেলা কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। এর ফলে বঞ্চিত সাড়ে সাত শ’ জনের ভাগ্য খুলে যাচ্ছে। উপজেলায় তালিকাভুক্ত ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও সমাজসেবা দফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে বয়স জালিয়াতি করে এসব ব্যক্তি তালিকাভুক্ত হয়ে ভাতা পেয়ে আসছিলেন। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে এই ভাতা চালু হয়। পরবর্তীতে এর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। প্রথম দিকে বয়স প্রমাণের জন্য কোন প্রমাণপত্র প্রয়োজন না হলেও পরে জন্মসনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্রকে প্রাধান্য দেয়া হয়। গত পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যে অনিয়ম বেশি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেন, তারা ভাতা পাওয়ার উপযোগী হলেও জাতীয় পরিচয়পত্রে তাদের বয়স কম দেখানো হয়েছে। ওই সময়ে যারা ভোটার তালিকা করেছেন তারাই বয়স বসিয়ে দিয়েছেন এই কারণে তারা জন্মসনদে সঠিক বয়স দিয়ে ভাতার তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন। তবে জাতীয়পত্রে বয়স কম থাকার কারণে তালিকা থেকে বাদ পড়ছেন বলে শুনেছেন বলে জানিয়েছেন। বয়স জালিয়াতি করে ভাতার তালিকাভুক্ত হওয়া একাধিক নারী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। তারা কিছুই জানেন না। উপজেলা গোবিন্দপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান বিজন কুমার সরকার বলেন, তার ইউনিয়নে ৪৭ জন বয়স জালিয়াতি করে ভাতাভুক্ত হয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধের মাধ্যমে তারা জালিয়াতি করে ভাতার তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন। তাদের বাদ দিয়ে নতুন করে ৪৭ জনের নাম ও বয়সের প্রমাণপত্রসহ উপজেলা কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। উপজেলার অন্য চেয়ারম্যানেরাও জানান, যারা ভাতার জন্য আবেদন করেন, মূলত তারাই জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপিতে ঘষামাজা করে জমা দেন। সে অনুসারে তাদের নামে ভাতার প্রস্তাব করে উপজেলা কমিটিতে পাঠানো হয়। সেখানেই অনুমোদন দেয়া হয়। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবদুল মমিন বলেন, নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই-বাছাইয়ে ৭৫০ জনের বয়স কমের বিষয়টি ধরা পড়ে। তাদের বাদ দিয়ে নতুনদের তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা বা টাকা ফেরতের নির্দেশনা নেই।
×