ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পায়েল হত্যার রায়

প্রকাশিত: ২১:০৭, ৪ নভেম্বর ২০২০

পায়েল হত্যার রায়

বেসরকারী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান পায়েল হত্যা মামলায় হানিফ পরিবহনের একটি বাসের চালক ও তার দুই সহযোগীর মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছে ট্রাইব্যুনাল। বাস ড্রাইভার, সুপারভাইজার ও হেলপারের নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতার শিকার হয়ে পায়েলকে অকালে প্রাণ দিতে হয়েছে। দুই বছরেরও বেশি সময় আগের এই হত্যাকা- সমাজে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। দেশে প্রতিদিনই সড়কে হত্যাকা- সংঘটিত হচ্ছে। অদক্ষ চালক তার ভুলকে আড়াল করার জন্য অনেক সময় নির্মমমতার দৃষ্টান্তও রাখছেন। পায়েলের ক্ষেত্রে ঘটেছিল ভয়াবহ ঘটনা। বাস যানজটে পড়লে সে পেশাব করার জন্য বাস থেকে নেমে যায়। খানিক পরে বাস চলতে শুরু করলে সে দৌড়ে এসে বাসে উঠতে যায়। ওঠার সময় দরজার সঙ্গে ধাক্কা লেগে সংজ্ঞা হারায়। নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে দেখে তাকে হাসপাতালে নেয়ার বদলে তার মুখ থেতলে দিয়ে দায় এড়াতে ভাটেরচর সেতু থেকে নিচের খালে ফেলে বাস নিয়ে ঢাকায় চলে আসে আসামিরা। এই ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের চরম নিষ্ঠুরতার দিকটিই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যাকা- ঘটায় তারা করুণা পেতে পারে না। আমরা দেখি অনেক সময় সর্বোচ্চ শাস্তির বিধানও বদলে যায় নানা কারণে। এক্ষেত্রে তেমন ঘটবে না সেটাই প্রত্যাশা। হত্যাকারীদের মৃত্যুদ- কার্যকর হলে সড়কে যারা মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে তারা স্পষ্ট বার্তা পেয়ে যাবে। তাতে অপরাধ করার আগে তারা একটিবারের জন্য হলেও ভাববে যে, তাদেরও মৃত্যুদ- হতে পারে। সে কারণেই আমরা দৃষ্টান্তমূলক ও সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের নিশ্চয়তার কথা বলি। প্রসঙ্গত বলা দরকার, প্রচেষ্টা ও সক্রিয় উদ্যোগের কমতি নেই, তবু কিছুতেই সড়কে থামানো যাচ্ছে না মৃত্যুর মিছিল। অবৈধ, অপরিণত, অযোগ্য চালকদের হাতে গণপরিবহনের চাবি তথা মানুষ মারার লাইসেন্স তুলে দেয় কে? জেনে বুঝেই এই কাজটি করে থাকে পরিবহন মালিক এবং এক শ্রেণীর দায়িত্বপ্রাপ্ত দায়িত্বহীন অসাধু কর্মকর্তা। তাই যে কোন সড়ক দুর্ঘটনা, বলা ভাল সড়ক বিশৃঙ্খলা ও মানবহত্যার পেছনের মূল হোতা তারাই। অথচ এ জাতীয় ঘটনা ঘটলে শাস্তি পায় কেবল চালক। বেপরোয়া চালকদের পাশাপাশি মালিক ও রুট পারমিট দেয়ার সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরও শাস্তির আওতায় আনার বিষয়টি সময়ের দাবি। পরিবহন খাতে বিদ্যমান বিশৃঙ্খলার নেপথ্যের মূল কারিগর পরিবহন মালিক ও অসাধু কর্মকর্তারা যদি ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়, তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে কিভাবে? সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ট্রাইব্যুনাল পায়েল হত্যা মামলার রায়ে চারটি নির্দেশনাও দিয়েছে আদালত। এক নম্বরেই রয়েছে চালক মাদক সেবন করে গাড়ি চালাচ্ছেন কিনা সেটি জানার জন্য ডোপ টেস্টের কথা। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী এটি করার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনালের নির্দেশনা হলো- গাড়ির চালক, সুপারভাইজার, হেলপারদের গাড়ি চালাতে দেয়ার আগে তারা মাদক সেবন করেছে কিনা, জানার জন্য ডোপ টেস্ট করতে হবে। মহাসড়কে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে যানবাহন চলাচলের ওপর মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার কথাও বলা হয়েছে নির্দেশনায়। এতে অপরাধী শনাক্ত যে সহজ হবে তাতে সন্দেহ নেই। আমরা মনে করি প্রতিটি নির্দেশনাই বিবেচনার দাবি রাখে। তবে সব পক্ষের দায়িত্বশীলতা ও সচেতনতাই পারে সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে। সেই শুভবোধটি জাগিয়ে তোলার জন্য চাই কার্যকর সামাজিক আন্দোলন।
×