ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় ঈদ-ই মিলাদুন্নবী (সা) পালিত

প্রকাশিত: ২৩:০২, ১ নভেম্বর ২০২০

সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় ঈদ-ই মিলাদুন্নবী (সা) পালিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ র‌্যালি, আলোচনা সভা ও দেয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালিত হয়েছে পবিদ্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.)। গত শুক্রবার ছিল মহানবী হযরত মুহম্মাদ (সা.) এর জন্ম ও ওফাত দিবস। এ উপলক্ষে সারাদেশে বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচী পালন করে। বায়তুল মোকাররমসহ বিভিন্ন মসজিদে আলোচনা সভা ও দোয়ার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে র‌্যালি বের করা হয়। এসব র‌্যালি ও আলোচনা সভায় ফ্রান্সে হযরত মুহাম্মদ সা. নিয়ে কার্টুন আকার প্রতিবাদের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। শুক্রবার জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বিশেষ দোয়া ও মুনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া ও মুনাজাত পরিচালনা করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান। অন্যদের মধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মুহাম্মদ মহীউদ্দিন মজুমদার, মোঃ আনিছুর রহমান সরকারসহ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণ মুসল্লিরা মুনাজাতে অংশগ্রহণ করেন। বিশেষ মোনাজাতে মুসলিম বিশ্বের শান্তি এবং সমৃদ্ধি কামনা করা হয়। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি পবিত্র ঈদ-ই মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। ১৫ দিনব্যাপী ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিল, ইসলামী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, সেমিনার, কিরাত মাহফিল, হামদ-না’ত ও স্বরচিত কবিতা পাঠের আসরের আয়োজন করেছে ইফা। এদিকে আশেকানে গাউছিয়া রহমানীয়া মইনিয়া সহিদীয়া মাইজভান্ডারীয়ার উদ্যোগে ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী উপলক্ষে ফ্রান্সে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)-কে ব্যঙ্গ করার প্রতিবাদে শুক্রবার সকালে গুলিস্তান মহানগর নাট্যমঞ্চে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলহাজ শাহ্সূফী মাওলানা সৈয়দ সহিদ উদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারীর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু। শাজাহান খান মহানবী (সা.) এর তাৎপর্যপূর্ণ জীবনী তুলে ধরে বলেন, ‘সন্ত্রাস করে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে না, ভালবাসার মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এর মাধ্যমে জনমতও সৃষ্ট হবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু হযরত মুহম্মদ (সা.) এর জীবনী ও জন্মদিনের তাৎপর্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। করোনাভাইরাস যাতে বাংলাদেশসহ বিশ্ব থেকে বিদায় নেয় সেই প্রার্থনাও করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ সারাবিশ্বের মুসলিম উম্মাহ তথা মানুষের কল্যাণ কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করেন সংগঠনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক আলহাজ শাহ্সুফী সৈয়দ সহিদ উদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী। এদিকে ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আঞ্জুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভান্ডারীয়া রাজধানীতে বর্ণাঢ্য র‌্যালিতে আয়োজন করে। এতে হাজারো মুসল্লি অংশ নেন। তারা সারা বিশ্বে ইসলামবিরোধী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে সেøাগান দেয়া হয়। র‌্যালিটি রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন থেকে বের হয়ে শাহবাগ মোড় প্রদক্ষিণ করে। এ সময় সারা বিশ্বে ইসলাম ধর্ম ও বিশ্বনবীকে নিয়ে কটূক্তি বন্ধের দাবি জানান মুসল্লিরা। তারা বলেন, আশাকরি ফ্রান্সের সরকার তাদের ভুল বুঝতে পারবে। মুসলমানদের হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ ও ক্ষোভকে তাঁরা প্রশমিত করবে এবং সারা পৃথিবীর মানুষকে সম্প্রীতির বন্ধনে তারা ঐক্যবদ্ধ করবে। পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী উপলক্ষে সারাদেশে এদিন মুসলমানরা নানা ইবাদত বন্দেগী করেন। দিনটি উপলক্ষে মিলাদ মাহফিল, আলোচনা, কোরআন খতমসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল, মসজিদ ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে আরব মরুর বুকে জন্ম নেন মানবতা মহান এই মুক্তির দূত শেষ নবী হযরত মুহম্মাদ (সা.)। আল কোরআনে হযরত মুহম্মাদ (সা.)-কে উদ্দেশে করে বলা হয়েছে রহমাতুল্লিল আলআমিন। বা বিশ্বের রহমত স্বরূপ তাঁকে সৃষ্টি করা হয়েছে। ৫৭০ সালে তিনি এই ধরার বুকে আগমন করেন। সেদিন ছিল ১২ রবিউল আউয়াল মাস। সোমবার দিন তিনি জন্মগ্রহণ করেন। আরবের বুকে সব ধরনের কুসংস্কার, অনৈসলামিক প্রথা দূর করে তিনি বিশ্বের বুকে একটি আলোকিত সমাজ উপহার প্রদান করেন। তাঁর প্রচারিত এই বিধান বিশ্বের বুকে ধ্বংসের আগ পর্যন্ত বজায় থাকবে। তাঁর দীর্ঘ ৬২ বছরের জীবনে মুসলিম উম্মার জন্য বিভিন্ন দিক নির্দেশনা প্রদান করে অবশেষে ৬৩২ সালে একই দিনে মৃত্যুবরণ করেন। এ কারণে ১২ রবিউল আউয়ালকে বিশ্বের মুসলমানরা গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অতিবাহিত করেন। চট্টগ্রামে জশনে জুলুস ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, উৎসবমুখর পরিবেশে শুক্রবার বন্দরনগরী চট্টগ্রামে পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন জশনে জুলুসের আয়োজন করে। এর মধ্যে প্রধান আয়োজন ছিল আঞ্জুমানে রাহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া ট্রাস্টের উদ্যোগে। সংক্ষিপ্তভাবে আয়োজনের আহ্বান থাকলেও এদিন সকার থেকে দুপুর পর্যন্ত ধর্মানুরাগী মানুষের হাতে ছিল লাল সবুজের পতাকা, মুখে ছিল ইয়া রাসুলুল্লাহ ধ্বনি। এছাড়া মাই দিয়ে হামদ, নাত ও দরুদ পেশ করা হয়। নগরীর ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন আলমগীর খানকা এ কাদেরিয়া সৈয়দিয়া, তৈয়বিয়া থেকে শুরু হয়ে ঐতিহ্যবাহী জশনে জুলুস পুনরায় মাদ্রাসা মাঠে সমবেত হয়। সকাল ৮টার পর বের হওয়া জুলুসটি বিবিরহাট, মুরাদপুর হয়ে প্রধান সড়ক দিয়ে দুই নম্বর গেট, জিইসি মোড় ও ওয়াসা পর্যন্ত গমন করে। এরপর ১০টার আগে ফিরে যায় জামেয়া মাঠে এ জুলুস। বৈশি^ক মহামারী করোনার কারণে সকল আয়োজন সংক্ষিপ্ত করা হলেও বিপুলসংখ্যক মানুষের সমাগম ঘটে এ জুলুসে। জুলুসে নেতৃত্ব দেন আঞ্জুমানের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোঃ মহসিন, সেক্রেটারি আনোয়ার হোসেন, গাউসিয়া কমিটির চেয়ারম্যান পেয়ার মোহাম্মদ জামেয়ার অধ্যক্ষ মুফতি অছিউর রহমান কাদেরী প্রমুখ। জুলুসকে ঘিরে বিভিন্ন পয়েন্টে নানা রকম পণ্য বিক্রির আয়োজন হয়। বিশেষ করে ডাব, শসা, পাঞ্জাবি, আতর, টুপি, মাস্ক, স্যানিটাইজারসহ নানা রকম পণ্য বিক্রি হয়। উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতি বছর ১২ রবিউল আউয়াল আঞ্জুমানে রাহমানিয়া, আহমদিয়া, সুন্নীয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় এ ধরনের জুলুস হয়ে আসছে। অপরদিকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায়ও অনুরূপ জুলুস বের করা হয়েছে এবং উৎসবমুখর পরিবেশে মহানবীর পৃথিবীতে আগমন ও বিদায়ের দিনটি মর্যাদার সঙ্গে পালন করা হয়েছে। জশনে জুলুসকে ঘিরে পুলিশী নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ছিল। নিয়মিত পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশও মোতায়েন করা হয়।
×