ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্র পরিবেশ দূষণের ধারে কাছেও নেই

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ১ নভেম্বর ২০২০

পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্র পরিবেশ দূষণের ধারে কাছেও নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের (আইএফসি) নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে পয়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রে ১৩ থেকে ৬২ শতাংশ কম পরিবেশ দূষণকারী উপাদান বাতাসে ছাড়ছে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি উৎপাদনে আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) এ খবর জানিয়েছে। শনিবার বিকেলে পাক্ষিক এনার্জি পাওয়ার আয়োজিত সেমিনারে বিসিপিসিএল-এর তরফ থেকে এ কথা জানানো হয়েছে। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিদ্যুত জ্বালানি খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, কিছু লোক বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণের সময় বলত এখানে কেন্দ্র নির্মাণ করলে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ মারা যাবে। ভবিষ্যতে এখানে কারও সন্তান হবে না। বিভ্রান্তিকর এসব তথ্য যারা ছড়িয়েছে তাদের নিয়ে এখন কেন্দ্রটি দেখানো উচিত। তারা চাইলে নিরপেক্ষ পরামর্শক নিয়োগ দিয়েও দেখতে পারেন। পরিবেশ দূষণকারী উপাদান নির্ধারিত মাত্রার মধ্যেই ছড়ানো হচ্ছে কি না। প্রতিমন্ত্রী বলেন, একটি প্রকল্প নির্মাণে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা থাকে। এর মধ্যে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয় এমন তথ্য ছড়িয়ে দেশের উন্নয়নে বাধা দিতে চেয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের বুয়েটসহ অন্য বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেন কেন্দ্রটি পরিদর্শন করতে পারেন সে উদ্যোগ আমরা নিচ্ছি। একটি কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র প্রতি ঘনমিটার বাতাসে কি পরিমাণ সালফার ডাই অক্সাইড (সক্সস), নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড (নক্সস) এবং ছাই বা এ্যাশ এবং অন্যান্য উপাদান কি পরিমাণ ছাড়বে তার একটি নির্ধারিত মাত্রা রয়েছে। বিশ^ব্যাংকের প্রতিষ্ঠান আইএফসি এটি নির্ধারণ করে থাকে। বিশ^ব্যাপী এই মাত্রা মেনে চলা হয়। এ ছাড়া প্রতিটি দেশের পরিবেশ অধিদফতরও এটি নির্ধারণ করে থাকে। পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র আইএফসি এবং বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদফতরের নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে অনেক কম মাত্রায় পরিবেশ দূষণকারী উপদান ছাড়ছে। পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক শাহ আব্দুল মওলা জানান, পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র প্রতি ঘনমিটার বাতাসে সক্সস ছাড়ছে সর্বনিম্ন ৩২ দশমিক ৩৪ মিলিগ্রাম থেকে সর্বোচ্চ ১২৪ দশমিক পাঁচ মিলিগ্রাম। এখানে আইএফসির বেঁধে দেয়া মাত্রা প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ২০০ মিলিগ্রাম। অর্থাৎ সর্বোচ্চ সক্সস ছাড়ার হিসাব ধরলেও আইএফসির বেঁধে দেয়া মাত্রার চেয়ে ৬২ ভাগ কম সক্সস ছাড়া হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদফতরের সক্সস ছাড়ার কোন নির্ধারিত মাত্রা নেই। অন্যদিকে নক্সস কেন্দ্রটি প্রতি ঘনমিটারে ৭১ দশমিক ১৭ থেকে ২৫৬ দশমিক ৬৩ মিলিগ্রাম। যেখানে আইএফসির বেঁধে দেয়া মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ৫১০ মিলিগ্রাম। আইএফসির হিসাবে ৫১ ভাগ কম নক্সস ছাড়ছে কেন্দ্রটি। অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদফতরের বাতাসে নক্সস ছাড়ার মাত্রা আইএফসির তুলনায় আরও ১০০ মিলিগ্রাম বেশি। অর্থাৎ প্রতি ঘনমিটারে ৬০০ মিলিগ্রাম। আইএফসি কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের এ্যাশ ছাড়ার মাত্রা বলছে ৫০ মিলিগ্রাম প্রতি ঘনমিটারে। আর পরিবেশ অধিদফতর বলছে, এই মাত্রা ১৫০ মিলিগ্রাম প্রতি ঘনমিটারে। সেখানে পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র সর্বনিম্ন এক দশমিক ৮২ থেকে ছয় দশমিক ৭১ মিলিগ্রাম ছাই এবং অন্যান্য উপাদান বাতাসে ছাড়ছে। অর্থাৎ এখানেও আইএফসির বেঁধে দেয়া মাত্রার চেয়ে ১৩ গুণ কম উপাদান বাতাসে ছাড়া হচ্ছে। অন্যদিকে পরিবেশ অধিদফতরের হিসেবে এটি ৪০ ভাগের কাছাকাছি। পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বলছে, দূষণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৮০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ করা হয়েছে। যাতে বাতাসে কোন ধরনের দূষণ না ছড়ায়। পরিবেশ রক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক ম তামিম বলেন, এত সুন্দর একটি কাজ হয়েছে যা না দেখলে কেউ বিশ^াস করবেন না। সঙ্গত কারণে যারাই সমালোচনা করেন তাদের নিয়ে দেখাতে হবে। কিভাবে কাজ করতে হয় তাদের বোঝাতে হবে। ম তামিম বলেন, এখানের সব কাজই খুব ভাল হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র নজির স্থাপন করেছে। বিসিপিসিএল-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম বলেন, বিদ্যুত কেন্দ্রটির জন্য কয়লা পরিবহন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আমরা এটি অতিক্রম করতে পেরেছি। তিনি বলেন, বিদ্যুত কেন্দ্রটি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে শতভাগ দেশীয় প্রকৌশলীরা পরিচালনা করবেন। এই লক্ষ্য মাথায় রেখে আমরা কাজ করছি। পরিচালনা এবং সংরক্ষণে যারা এখন কাজ করছেন তাদের আমরা বলেছি প্রতি বছর ২০ ভাগ আমাদের দেশীয় প্রকৌশলী এখানে কাজে যোগ দেবে। এভাবে পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের প্রকৌশলীদের হাতেই কেন্দ্রটি ছেড়ে দিতে হবে। তিনি বলেন, প্রচলিত বিদ্যুত কেন্দ্রে ৪০ দিনের কয়লা মজুদের ব্যবস্থা থাকে কিন্তু আমরা ৫৫ দিনের মজুদ রাখছি। এজন্য ঢাকনাযুক্ত কোল ডোম নির্মাণ করা হয়েছে। যাতে শুরুতেও কয়লা থেকে পরিবেশ দূষণ না হয়। এ সময় এনার্জি এ্যান্ড পাওয়ারের সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদের সঞ্চালনায় সেমিনারে পিডিবি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী অধ্যাপক ফিরোজ আলম, বুয়েটের সহযোগী অধ্যাপক ড. কাজী বায়জিদ কবীর ও খনি প্রকৌশলী ড. মুশফিকুর রহিম বক্তব্য রাখেন।
×