ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শেয়ারবাজারের দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়, স্টক এক্সচেঞ্জেরও

প্রকাশিত: ২২:৪২, ১ নভেম্বর ২০২০

শেয়ারবাজারের দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়, স্টক এক্সচেঞ্জেরও

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান বলেছেন, প্রাথমিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। শেয়ারবাজারের দায়িত্ব শুধু সরকার, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিএসইসির, আর স্টক এক্সচেঞ্জ শুধু বসে থাকবেন তা না। তাদেরও শক্তিশালী হতে হবে। স্টক একচেঞ্জকেই কারসাজি ধরতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সেইসঙ্গে শেয়ারবাজার পড়ে গেলে সরকারকে দোষারোপের ধারা থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। শনিবার বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) ও ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত শেয়ারবাজারের সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং টেকসই উন্নয়ন নিয়ে ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্যে তিনি এ দাবি জানান। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএসইসির চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম এবং ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ অংশ নেন। সেখানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএমবিএ’র ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মোঃ মনিরুজ্জামান। সালমান এফ রহমান বলেন, শেয়ারবাজারে যদি কোন কারসাজি হয়ে থাকে সেটা পুরো পৃথিবীতেই সবার আগে স্টক এক্সচেঞ্জ ধরে। বিএসইসি তো অনেক পরের বিষয়। প্রথমেই ধরবে স্টক এক্সচেঞ্জ। তাদের ওখানেই তো প্রতিদিন লেনদেন হয়। যে কোন ধরনের অনিয়মের লেনদেন দেখলে বুঝতে পারা যায়। কিন্তু এখনও আমাদের শেয়ারবাজারে যে কোম্পানি বন্ধ এবং সবাই সেটা জানি, তারপরও সেই কোম্পানির দর বাড়ে। কারা এসব কোম্পানির শেয়ার কিনে এবং কারা বিক্রি করে তা স্টক এক্সচেঞ্জ জানে। এখানে যে কারসাজি হচ্ছে এবং খোলামেলাভাবে হচ্ছে, লুকিয়ে কেউ করছে না। কিন্তু যখনই সূচক নামতে থাকে তখনই রাস্তায় লোকজন নেমে সরকারকে দোষারোপ করে। বিএসইসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, এই যে প্রতিদিন স্টক এক্সচেঞ্জের চোখের সামনে দিয়ে ও নাকের নিচে কারসাজি করা হচ্ছে, তারা কি এ্যাকশন নিয়েছে। তাদেরই তো ব্রোকাররা এসব করে আসছে। তো কি ব্যবস্থা নিয়েছে? তাই সরকারকে দোষারোপের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন আনতে হবে। পরিপক্ব বাজারের দিকে যেতে হলে স্টক এক্সচেঞ্জকেই শক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের শেয়ারবাজার উন্নতির পথে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই বাজার নিয়ে আমরা আশাবাদী। এক্ষেত্রে সবাই যেভাবে কাজ করছে, একইভাবে ডিএসইকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, রিটেইল ইনভেস্টরদের প্রটেকশন দেয়ার দায়িত্ব সরকারের, এই মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আপনি বিনিয়োগ করেছেন, আপনাকেই জেনে-শুনে করতে হবে। লাভ-লোকসান আপনার। আমার কাছেও অনেক লোক বলে লোকসান করেছি, ওই সময় আমি বলি আপনি কত মুনাফা করেছেন, তা বলেন। বিও এ্যাকাউন্ট চাই বিশ্লেষণের জন্য। তখন বলি আপনি কি শুধুই লস করেছেন, আপনি তো যখন লাভ ছিল তখন বিক্রি করেন নাই, লোভের বশবর্তী হয়ে আরও মুনাফার আশায় বসেছিলেন। যাতে বাজার পড়ে গিয়ে এখন লোকসানে চলে এসেছেন। এখন সরকারের দোষ দেন। এই মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা থেকে আমাদের বের হতে হবে। যারাই বিনিয়োগ করবে তাদের জেনে-শুনে বিনিয়োগ করতে হবে। আমাদের বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী নাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা বড় দুর্বলতা। রিটেইল ইনভেস্টর বেশি। স্টক এক্সচেঞ্জে ৮০-৮৫ শতাংশই রিটেইল বিনিয়োগকারীরা লেনদেন করে থাকে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অবদান খুবই কম। আর বাজারে মিউচুয়াল ফান্ডের অংশ ৩ শতাংশ বলা হলেও লেনদেনে আরও নেই। আইসিবি ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী নেই বললেই চলে। কিন্তু একটি বাজার তো একমাত্র আইসিবি দিয়ে চলতে পারে না। তিনি বলেন, আমাদের এখানে ধারণা হয়ে গেছে বিনিয়োগ করেছি মানেই লভ্যাংশ পাব। অন্যান্য বাজারে এমনটি নেই। কিন্তু অন্যান্য দেশে বড় আইটি কোম্পানিগুলো কোন লভ্যাংশ দেয় না। তারপরও নিয়মিত শেয়ার দর বাড়ছে। এতে করে ক্যপিটাল গেইন হচ্ছে। কিন্তু আমাদের এখানে রিটেইল ইনভেস্টরদের প্রটেক্ট করার জন্য লভ্যাংশ দেয়ার জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরি করে দিয়েছি। কমিশন বন্ড মার্কেট উন্নয়নে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটা খুবই দরকার। আমি দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি শুধু ইক্যুইটিভিত্তিক দিয়ে হবে না, ডেবট মার্কেটও গড়ে তুলতে হবে। আমাদের এখানে ডেবট মার্কেট নেই। তবে পুঁজিবাজারকে পরিপক্ব করতে ডেবট মার্কেট দরকার। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে বিও এ্যাকাউন্ট ডিজিটালাইজেশন করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ব্রোকারদের বিদেশে শাখা খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এর ফলে এনআরবিরা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে। তাদের আগ্রহকে কাজে লাগানোর জন্য ডিজিটাল মাধ্যমে বিও এ্যাকাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বলেছেন, বিএসইসির কার্যক্রমের মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় হচ্ছে দেশের শেয়ারবাজারকে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো। এটাই এখন আমাদের চিন্তা-ভাবনার মূল ধারণা এবং এই লক্ষ্যেই কমিশন কাজ করছে। বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বাজারে ভাল আইপিও আনতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন। আইপিও অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে কোম্পানির বিগত বছরগুলোর ব্যবসা পর্যালোচনা করছি। বিশেষ করে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন কত, ৫ বছরের ট্যাক্স রেকর্ড বিশ্লেষণ করছি। তিনি বলেন, মিউচুয়াল ফান্ডকে আরও জনপ্রিয় করতে চাই। গত কয়েক বছরে অনেক ফান্ড বিনিয়োগকারীদের কোন রিটার্ন দিচ্ছে না এটা ঠিক না। এ সময় অনেক মিউচুয়াল ফান্ড লভ্যাংশ দিলেও কিছু ফান্ড দিচ্ছে না।
×