ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ রাসেল ॥ ফাগুনের অজস্র আগুন

প্রকাশিত: ২০:৪৮, ১ নভেম্বর ২০২০

শেখ রাসেল ॥ ফাগুনের অজস্র আগুন

‘সকাল বেলার হাওয়া লাখ টাকার দাওয়া’- উদ্ধৃত বাক্যটিকে ছন্দযুক্ত ও রসাত্মক শোনালেও এর ভাবার্থ বেশ বিস্তৃত। কারণ দিনের শুরুতে প্রকৃতির যে সুস্থ চরিত্র থাকে তাতে মন ও শরীরে আলাদা নাচন লাগার সুযোগ থাকে। যদিও স্বাভাবিকভাবে অন্যান্য সকালের মতো ১৯৭৫-এর ১৫’ আগস্ট বাংলাদেশের জন্য স্বাভাবিক ছিল না। কারণ এদিন ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে পৃথিবীর ইতিহাসে কলঙ্কজনক ঘটনাটি ঘটে। ঘাতকের নির্মম বুলেটে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। যে কোন হত্যাই বেদনাদায়ক । তবে এও সত্য যে সময়ের ব্যবধানে সব ক্ষতেরই বোধ ও ধার কমে থাকে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু পুত্র শেখ রাসেল হত্যাকা-ের গতিপথ যতই উন্মোচিত হয় ততই বাড়তে থাকে ক্ষতের গভীরতা। কারণ হত্যার পূর্বে শিশু শেখ রাসেলকে যে মানসিক নির্যাতনের সাগর পাড়ি দিতে হয়েছিল তা সত্যিই এই আধুনিক সময়ে অকল্পনীয়। শেখ রাসেলকে হত্যা করা হয়েছিল সবাইকে হত্যার পর বা বলা যায় সব শেষের দিকে। অর্থাৎ নারকীয় তা-বের গোটাটাই রচিত হয়েছিল তার অবুঝ মনের সীমানায়। বিস্তৃত অর্থে শিশু রাসেল যখন মায়ের কাছে যেতে চেয়েছিলেন তখন নিশ্চিতভাবে তার বাবা-ভাই-ভাবিসহ অন্যান্য স্বজনের লাশ পাড়ি দিয়েই তাকে নেয়া হয়েছিল। অর্থাৎ হত্যার ভেতর দিয়ে হেঁটে হলেও জীবনের রসদ মায়ের কাছে গিয়ে বাঁচবার আকুতি ছিল রাসেলের। কিন্তু সেখানেও মৃত্যু, মায়ের রক্তাত্ব লাশ। সবশেষে পাড় ভাঙ্গা শব্দের তোলপাড়ে আদর করে ডাকা হাসুপার (শেখ হাসিনা) কাছে যেতে চাওয়া। অর্থাৎ মৃত্যুকে পাশ কাটিয়ে জীবনকে সর্বোচ্চ আকাক্সক্ষায় ধরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পাশবিক হত্যাকারীরা বাবা-মা, ভাই-ভাবি ও অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে পাড়ি জমাতে বাধ্য করেছিলেন নিথুয়া অথৈ পাথারের পথে। চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিত রায় তার সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ এগিয়ে ছিলেন। কারণ তিনি যা নির্মাণ করবার পরিকল্পনা করতেন তা তিনি শুটিংয়ে যাবার পূর্বেই মনের চোখে ভিজ্যুয়ালাইজ করতে পারতেন। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট ধানম-ির ৩২ নম্বর বাড়িতে যে রক্তগঙ্গা রচিত হয়েছিল এবং তাতে মৃত্যুপূর্ব পর্যন্ত শেখ রাসেলের মানসিক অবস্থা কেমন হয়ে উঠেছিল তা অনুভব করতে সত্যজিত নয়, একজন বোধ সম্পন্ন সুস্থ মানুষ হলেই যথেষ্ট। কারণ এখানে নান্দনিকতা নয়, ছিল নারকীয় বীভৎসতা। বঙ্গবন্ধু আজন্ম নিপীড়িত মানুষের পক্ষে লড়াই করে গেছেন। আর এজন্যই হয়ত নিপীড়িত মানুষের লেখক বার্ট্রান্ড রাসেল তার বিশেষ প্রিয় ছিলেন এবং ছিলেন নিয়মিত পড়ার তালিকায়ও। শিশুপুত্র ছোট্ট শেখ রাসেলের নাম সেখান থেকেই রেখেছিলেন। ব্যক্তিত্বসম্পন্ন রাসেলও হয়ত হয়ে উঠতেন পিতার মতোই মানুষের কণ্ঠস্বর কিংবা একজন সাহিত্যিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী বা শৈশবের খেলার সাথীদের নিয়ে নানা কায়দায় বন্দুক বানানো ও চালাতে চালাতে নিজের আকাক্সক্ষার সেই সেনা অফিসার। অথবা তার মাঝেই ছিল হয়ত বাঙালীর সেই বিশ্বজয়ের সূত্র। যা ফাগুনের অজস্র আগুন হয়ে ঝরার পূর্বেই মিলিয়ে গেছে মৃত্যু বাতাসে। তবে সব ছাড়িয়ে আজও শেখ রাসেলের জন্ম-মৃত্যু দিনে শেখ হাসিনা কাঁদেন। কারণ রাসেলের জ-িস না হলে তাঁর সঙ্গেই দেশের বাইরে যাবার কথা ছিল। তাহলে হয়ত রাসেল বেঁচে যেতেন। সেই অপ্রাপ্তিকে সম্বল করেও আজ রাসেলের হাসুপা বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছেন সব হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে। এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দেশকে। যেখানে সকল রাসেলের প্রতি তাঁর আহ্বান- কে আছো জোয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যত এ তুফান ভারি, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার। লেখক : ছাত্রনেতা [email protected]
×