ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কোভিড-১৯ মোকাবেলায় টিকা আমদানিতে আইএফসির ঋণ সহায়তা কামনা

বন্ড মার্কেট বিকাশে আইএফসিকে সহযোগিতার আহ্বান অর্থমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ১৮:৪২, ৩১ অক্টোবর ২০২০

বন্ড মার্কেট বিকাশে আইএফসিকে সহযোগিতার আহ্বান অর্থমন্ত্রীর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনা পরবর্তী অর্থনীতি চাঙ্গা করতে আইএফসি’কে বন্ড মার্কেট বিকাশে আরও সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। তবে সংস্থাটির বাংলাদেশের বন্ড ও অন্যান্য ঋণ মার্কেট বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার সক্ষমতা রয়েছে। অর্থমন্ত্রীর আহ্বানে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে আইএফসি কর্তৃপক্ষ। সংস্থাটি দেশের বন্ড মার্কেট উন্নয়নে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এছাড়া কোভিড-১৯ মোকাবেলায় টিকা কিনতে আইএফসির ঋণ সহযোগীতা চেয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়। শনিবার অর্থমন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে আইএফসি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে একটি ভার্চুয়াল সভা করে অর্থমন্ত্রণালয়। মূলত বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফ এর বার্ষিক সভা-২০২০ এর অংশ হিসাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম ম্স্তুফা কামালের নেতৃত্বে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আইএফসি এর চিফ অপারেটিং অফিসার মিসেস স্টিফানি ফন ফ্রিডবার্গসহ অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, আইএফসি’র এশিয়া প্যাসিফিকের ভাইস প্রেসিডেন্ট আলফোনসো গার্সিয়া মোরা এবং বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের কান্ট্রি ম্যানেজার ওয়েন্ডি ওয়ার্নার আলোচনায় অংশ নেন। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, গত বছর লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে বিশ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের বন্ড জারি করতে আইএফসির সহায়তা এবং সহযোগিতায় বিশ্বে প্রথমবারের মতো প্রাথমিক ভিত্তিতে ৮০৭ মিলিয়ন টাকা (৯.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) সমপরিমাণ বাংলাদেশি ‘টাকা বন্ড’ চালু করা হয়েছিল। যা আগামী এক বছরে প্রায় ৮৫ বিলিয়ন টাকা (১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) মূল্যমানের বন্ডে উন্নীত করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিল আইএফসি। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত ছিল কারণ এটি আন্তর্জাতিক বাজারে জারি করা প্রথম বাংলাদেশী টাকা বন্ড। পরবর্তীতে করোনার কারণে এটি কিছুটা স্থিমিত হয়ে গেলেও আশা করা যায় এখন আবার আইএফসি এ খাতটি সমৃদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, আইএফসি-কে বাংলাদেশকে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য বিশেষত মহামারি দ্বারা আক্রান্ত হওয়া বেসরকারী খাতকে প্রণোদিত করার আহ্বান জানানো যাচ্ছে। পাশাপাশি আইএফসিকে সুদের হার হ্রাস করার অনুরোধ করা হয় যাতে, বেসরকারী খাত স্বল্প সময়ের মধ্যেই প্রত্যাবর্তন করতে পারে। বাংলাদেশের ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজ বিশেষ করে বন্ড মার্কেট উন্নয়নের জন্য তিনি আইএফসির সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনও আশ্বস্ত কওে যে বাংলাদেশের বিষয়গুলো অবশ্যই ইতিবাচকভাবে দেখা হবে। সভার শুরুতে অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে অব্যাহত সহযোগিতার মাধ্যমে সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আইএফসির অবদানের প্রশংসা করেন। এছাড়া কোভিড-১৯ এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সদস্য দেশগুলিকে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দেওয়ার সাম্প্রতিক উদ্যোগের জন্যও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায় অনুযায়ী কোভিড-১৯ এর টিকা আবিস্কারের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ অত্যন্ত আগ্রহী এবং বদ্ধপরিকর, তাই এ বিষয়েও আইএফির করণীয় নিশ্চিতে তিনি আহ্বান জানান। অর্থমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ নির্বিচারে বিশ্ব অর্থনীতি ও মানবজীবন হুমকির সম্মুখীন করেছে, বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ আয়ের দেশ অর্জনের প্রত্যাশায় আত্মবিশ্বাসী। বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে কোভিড ১৯ এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে অর্থনীতিকে আবার পুনরুদ্ধার করতে আমাদেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বকে কৃতজ্ঞতার সাথে স্বীকৃতি জানাই। উদ্যোগগুলির মধ্যে জিডিপির ৪ দশমিক ৩ শতাংশ সমতুল্যের ১৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ অন্যতম। আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, আর্থিক খাত পুনর্গঠন ও সুদের হার ক্যাপিং-এ আমরা কাজ করে চলেছি। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সলভেনসি অ্যাক্ট, ব্যাংক কোম্পানি অ্যাক্ট, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্টসহ বেশ কিছু অ্যাক্ট প্রণয়নের কাজ করছে, যা আমাদের আর্থিক খাত পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, আমাদের সরকার কোভিড-১৯ টিকা ক্রয়ের বিষয়ে অত্যন্ত আগ্রহী এবং বদ্ধপরিকর। অর্থমন্ত্রী ইতোমধ্যে দেশের সকল মানুষকে টিকা আবিস্কারের সাথে সাথে টিকা বিতরণ নিশ্চিতকরণের আশা ব্যক্ত করেছেন। তাই এ খাতে আমাদের বড় অংকের অর্থের সংস্থানের বিষয়টিও জড়িত। তিনি বলেন, দেশীয় তিনটি ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে তাদের প্রতিষ্ঠানকে টিকা তৈরি করার উপযোগী করতে শুরু করেছে, আশা করা যায় টিকা আবিস্কারের ছয় মাসের মধ্যেই এ প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে টিকা প্রস্তুত করতে সক্ষম হবে। যেহেতু আমাদের বিশাল জনসংখ্যার জন্য সব টিকাই আমদানি করা সম্ভব নয়, তাই আমাদের দেশিয় টিকার উপরও আমরা গুরুত্ব দেব। এসকল প্রতিষ্ঠানেরও টিকা প্রস্তুত করতে প্রচুর বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে, আইএফসির এ খাতে সহযোগিতা করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া ২০২৪ সালে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উন্নীত হবে। এসডিজির সাফল্যসহ উন্নয়নের পরবর্তী পর্যায়ের জন্য বেসরকারি মূলধনের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি)-তে আইএফসির উল্লেখযোগ্য অভিজ্ঞতা রয়েছে। ২০১৭-২০২১ অর্থবছরের মধ্যে বাংলাদেশে আইএফসির ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের (এলটিএফ) দেওয়া প্রতিশ্রুতি এবং ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত তার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ১ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
×