ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অভিযানিক দলের ওপর চলছে হামলা, প্রভাবশালীদের মদদ

নদীতে মারমুখী জেলেরা, থামছে না মা ইলিশ শিকার

প্রকাশিত: ২৩:০৭, ৩০ অক্টোবর ২০২০

নদীতে মারমুখী জেলেরা, থামছে না মা ইলিশ শিকার

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ ইলিশ রক্ষায় অভিযান পরিচালনা ও টহল দিতে গিয়ে স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালীর মদদে একের পর এক জেলেদের হামলার শিকার হচ্ছেন পুলিশসহ সংশ্লিষ্টরা। নদীতে মারমুখী হয়ে ওঠা ওইসব জেলেদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের, গ্রেফতার ও ভ্রাম্যমাণ আদালতে শাস্তি দিয়েও হামলার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না প্রশাসন। সূত্রমতে, ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে ডিম ছাড়া ও প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণে আহরণ, বিপণন, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, বিনিময় ও মজুদ করতে টানা ২২ দিন (১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নবেম্বর) পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করছে সরকার। এমন নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠপর্যায়ে প্রশাসন, মৎস্য অধিদফতর, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও নৌপুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর অবস্থানে থাকলেও জেলেরা যে যার মতো করে দেদার মা ইলিশ শিকার করে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, নদীর তীরবর্তী প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মদদে জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে সাহস দেখাচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান পরিচালনা ও টহল দিতে গেলেই ওইসব প্রভাবশালীর ভাড়াটিয়া লোকজনে জেলে সেজে অভিযানিক দলের ওপর হামলা চালাচ্ছে। সূত্রে আরও জানা গেছে, ইতোমধ্যে কয়েক শ’ জেলেকে আটক, লাখ লাখ টাকা জরিমানা, মামলা ও তাদের কয়েক লাখ মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করলেও কোনভাবেই ইলিশ ধরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না প্রশাসন। উল্টো ইলিশ রক্ষায় অভিযান পরিচালনা ও টহল দিতে গিয়ে জেলেদের পরিকল্পিত হামলার শিকার হচ্ছেন পুলিশসহ সংশ্লিষ্টরা। পুলিশ ও মাঠ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলার হিজলা ও সদর উপজেলায় মা ইলিশ রক্ষায় অভিযান পরিচালনা এবং টহল দিতে গিয়ে কথিত জেলেদের হামলায় চলতি মাসের ১৪ থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত পাঁচ পুলিশ, এক মৎস্য কর্মকর্তা ও এক স্পীডবোট চালক আহত হয়েছেন। সর্বশেষ গত ২৭ অক্টোবর সকালে হিজলার বদরপুর এলাকার মেঘনা নদীতে টহল দিতে গিয়ে নৌ পুলিশের সদস্যদের উপর ১০টি ট্রলার নিয়ে কথিত জেলারা হামলা চালায়। এতে এক নৌপুলিশের সদস্য আহত হন। আত্মরক্ষায় পুলিশ হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে চার রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। একইদিন রাতে হিজলার মেঘনা নদীতে টহলরত নৌপুলিশের ওপর হামলা চালায় অবৈধ ইলিশ শিকারীরা। এ সময় হামলাকারীরা পুলিশের ট্রলারের ওপর তাদের চলন্ত ট্রলার তুলে দিয়ে পুলিশের ট্রলারকে নদীর মাঝে ডুবিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালায়। পুলিশ হামলাকারী তিনজনকে আটক করলেও অন্যরা পালিয়ে যায়। আটককৃতদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযানিক দলের প্রধান পুলিশ পরিদর্শক আবু তাহের জনকণ্ঠকে জানান, কারও না কারও উস্কানিতে জেলেরা পুলিশের ওপর আক্রমণের সাহস দেখাচ্ছেন। তিনি আরও জানান, এর আগে একই নদীতে হিজলা নৌপুলিশের ওপর আরও দুইবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর পূর্বে গত ২০ অক্টোবর রাত সাড়ে ১০টার দিকে বরিশাল সদর উপজেলা চন্দ্রমোহনে অভিযান পরিচালনা করতে গেলে উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যসহ ১০ জনের একটি অভিযানিক টিমের ওপর হামলা চালায় জেলেরা। এতে অভিযানের দলে থাকা দুই পুলিশ সদস্য, এক মৎস্য কর্মকর্তা ও স্পীডবোটের চালক আহত হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। গত ১৫ অক্টোবর রাতে হিজলার মেঘনা নদীতে ইলিশ শিকারের সময় নৌকাসহ দুই জেলে আটক করার পর তাদের ছিনিয়ে নিতে জেলেরা হামলা চালিয়ে নৌপুলিশের দুই সদস্যকে আহত করে। অপরদিকে জেলার মুলাদী, উজিরপুর, বানারীপাড়া, মেহেন্দীগঞ্জ, হিজলা, গৌরনদী, বাবুগঞ্জ ও বাকেরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন নদীতে স্থানীয় প্রভাবশালী কতিপয় রাজনৈতিক নেতা এবং প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় জেলেরা মা ইলিশ শিকারের উৎসবে মেতে উঠেছে। কৌশলে চলছে ইলিশ শিকার ॥ নিষেধাজ্ঞা শুরুর সময় থেকে বরিশাল বিভাগের সর্বত্র চলছে মৎস্য বিভাগের নেতৃত্বে অভিযান। যে অভিযানে জেলা, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌ-বাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা সহায়তা করছেন। তবে অভিযানের পরিসংখ্যান বলছে, নদীতে ফেলা হচ্ছে জাল, ধরা হচ্ছে মাছও। যার প্রমাণ দিচ্ছে অভিযানে আটক হওয়া জেলে এবং জব্দ হওয়া জাল ও মাছের পরিমাণ। যদিও মৎস্য বিভাগের দাবি, টানা অভিযানের কারণে নদীতে মাছ শিকারীর সংখ্যা কমে এসেছে। আর যারা মাছ শিকার করছেন তারা সবাই মৌসুমি জেলে হিসেবে পরিচিত।
×