ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বন্ধুকে হত্যার দায়ে তিন বন্ধুর মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ৩০ অক্টোবর ২০২০

বন্ধুকে হত্যার দায়ে তিন বন্ধুর মৃত্যুদণ্ড

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ২৯ অক্টোবর ॥ একটি মোটরসাইকেল হাতিয়ে নিতে রেজাউল ইসলাম (১৬) নামে এক বন্ধুকে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে ডেকে নিয়ে তার গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর আগুনে পুড়িয়ে লাশ গোপনের চেষ্টার দায়ে আদালত সুইট আলম (২৯), মেকদাদ বিন মাহাতাব ওরফে পলাশ (২৯) ও হাসান জামিল(৩২) নামে অপর ৩ সহকর্মীকে মৃত্যুদ-ের আদেশ দিয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বিএম তারিকুল কবীর বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি এ দ-াদেশ প্রদান করেন। এছাড়া দ-বিধি ধারায় প্রত্যেককে দোষী সাব্যস্ত করে সাত বছর করে সশ্রম কারাদ- ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছর করে কারাদ- এবং ফৌজদারি দ-বিধির ৩৮৫ ধারায় প্রত্যেককে দোষী সাব্যস্ত করে দশবছর করে সশ্রম কারাদ- ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদ- এবং দ-বিধির ৩৭৯ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তিন বছর করে সশ্রম কারাদ- ও তিন হাজার করে জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাস করে কারাদ-ের আদেশ দেয়া হয়। মৃত্যুদ- ও সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলো, সুইট আলম নওগাঁ জেলার মান্দা থানার বারিল্যা উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত আকবর আলীর ছেলে, মেকদাদ বিন মাহাতাব ওরফে পলাশ দিনাজপুর জেলার চিবিরবন্দর থানার দক্ষিণ পলাশবাড়ি গ্রামের মাহাতাব উদ্দীনের ছেলে এবং হাসান জামিল ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী থানার ভানোর সরকারপাড়া গ্রামের বজির উদ্দীনের ছেলে। তবে আসামি হাসান জামিল ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে পলাতক রয়েছে। মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর থানার আন্ধারমুহা গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে রেজাউল ইসলাম স্থানীয় টেকনিক্যাল এ্যান্ড বিএম কলেজে লেখাপড়া করছিল। রেজাউলের বন্ধু মেকদাদ বিন মাহাতাব ওরফে পলাশ ওয়ার্ল্ডমিশন-২১ নামে একটি মাল্টিলেবেল কোম্পানিতে চাকরি করত। একইসঙ্গে পলাশের সুবাদে দ-িত অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে রেজাউলের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তারা সকলে মিলে দিনাজপুরের পাবর্তীপুরে গিয়ে ওই কোম্পানির নতুন অফিস খোলার কাজ করা কালে রেজাউলের বাজাজ মোটরসাইকেলের প্রতি অপর বন্ধুদের চোখ পড়ে। তারা ওই মোটরসাইকেলটি নিজেরা হাতিয়ে নিতে রেজাউলকে হত্যার পরিকল্পনা আঁটে এবং তাকে আসামি হাসান জামিলের বাড়ি এলাকায় ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর এলাকায় নিয়ে আসে। ২০১৫ সালের ৪ মার্চ সন্ধ্যায় দ-িত আসামিরা সকলে মিলে রেজাউল ইসলামকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর কৈমারী গ্রামের একটি বাঁশঝাড়ে নিয়ে যায় এবং পূর্ব পরিকল্পনা মতে তারা রেজাউল ইসলামের ঘাড় মটকে ও রশি দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ হত্যা করে। পরে তার পড়নের কাপড় ও বাঁশঝাড়ের শুকনা ডালপাতা দিয়ে রেজাউলের মরদেহ আগুনে পুড়িয়ে বিকৃত করে। এ ঘটনায় পত্রিকায় অজ্ঞাত ব্যক্তির আগুনে পোড়া লাশের ছবিসহ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশ হলে র‌্যাব-১৩ এর রহস্য উদঘাটন ও মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে এবং ওপরে বর্ণিত তিনজনকে গ্রেফতার করে। সে সময় আসামিরা তাদের অপরাধ স্বীকার করে। এ ঘটনায় সেই সময় বালিয়াডাঙ্গী থানায় সরকার বাদী একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলার এজাহার, আসামিদের স্বীকারোক্তি ও সাক্ষীদের জবানবন্দীতে হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আদালত উপরোক্ত রায় প্রদান করেন। মামলাটি রাষ্ট্রপক্ষে সরকারী কৌঁসুলি এ্যাড. শেখর কুমার রায়, এ্যাড. আব্দুল হামিদ এবং আসামিপক্ষে এ্যাড. মোস্তাক আলম টুলু, এ্যাড.আবু মনসুর বাবুল ও ইউসুফ আলী মামলাটি পরিচালনা করেন।
×