ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

প্রতিবাদী চেতনায় উদীচীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপিত

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ৩০ অক্টোবর ২০২০

প্রতিবাদী চেতনায় উদীচীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কমেছে সূর্যের তেজ। দুপুর গড়িয়ে নেমেছে হেমন্তের বিকেল। শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনের আঙিনায় বিরাজমান উৎসবমুখর আমেজ। ঢোলের বাদনে স্পন্দিত হয় হৃদয়। গানের সুরে প্রকাশিত হয় উচ্ছ্বাস। নৃত্যের নান্দনিকতা কিংবা কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে স্তিগ্ধতা ছড়ায় আয়োজনজুড়ে। তবে নিছক বিনোদন ছাপিয়ে পরিবেশনাগুলোয় উঠে আসে সামাজিক দায়বোধ আর কল্যাণময় রাষ্ট্রের প্রতি অঙ্গীকার। সেই সঙ্গে অশুভের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে আলোচনায় অংশ নেয়া আলোচকদের কণ্ঠস্বর। এমন আয়োজনের উপলক্ষ ছিল উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৬৮ সালে যাত্রা করা ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটি এ বছর পার করেছে পথচলার বায়ান্ন বছর। সেই সাফল্যের উদ্যাপনে ‘দূর কর দুঃশাসন দুরাচার-জনতা জেগেছে যে দুর্বার’ স্লোগানে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয় ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনটি। সেখানে উদীচীর শিল্পী, শুভার্থী ও সদস্যদের কণ্ঠে ব্যক্ত হয় আগামী দিনের শপথ। আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি ... গানের সুরে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এই সুর থামতেই সম্মেলক কণ্ঠে গীত হয়- আরশির সামনে একা একা দাঁড়িয়ে/যদি বলি জনতার মুখ দেখবো/হয় না হয় না হয় না/কে বলেছে হয় না, এসো এই মঞ্চে/উদীচী এমনই এক আয়না...। সেই সঙ্গে উত্তোলিত হয় সংগঠনের পতাকা। উদ্বোধনী পবের্র আলোচনায় অংশ নেন প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও সাবেক সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ ইদু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক তানজীম উদ্দীন খান, উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন, সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম, অমিত রঞ্জন দে ও ইকবালুল হক খান। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সহ-সভাপতি হাবিবুল আলম। আলোচনায় বক্তারা বলেন, গণমানুষের সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী। সেই সুবাদে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত রয়েছে উদীচী। সংস্কৃতির আলোকিত শক্তিতে ভর করে দেশের প্রতিটি ক্রান্তিকালে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে এই সংগঠন। আগামীতেও সময়ের দাবি মেটাতে উদীচী অধিকার আদায়ের আন্দোলন চালিয়ে যাবে। মানুষের অধিকার, সুখ, নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য- জীবনযাপনের সেই সুষম স্তরে সকল মানুষের উত্তরণ না ঘটা পর্যন্ত এ সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। আলোচনা শেষে ছিল নাচ-গান, কবিতা ও পথনাটকে সজ্জিত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। অনেক কণ্ঠ মিলে যায় এক সুরে। গেয়ে শোনায়- অধিকার কে কাকে দেয়/অধিকার কেড়ে নিতে হয়/অধিকার লড়ে নিতে হয়...। এছাড়া পরিবেশিত হয় ‘বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা আজ জেগেছে সেই জনতা’ ও ‘চিৎকার করো মেয়ে দেখি কতদূর গলা যায়’ শীর্ষক দলীয় সঙ্গীত। দলীয় পরিবেশনার পর ছিল একক গানের পরিবেশনা। মাইশা সুলতানা উর্বি গেয়ে শোনায় ‘আমি মানবধর্মে মানবকর্মে স্বপিনু এ প্রাণমন’ শিরোনাগের গান। সাজেদা বেগমের কণ্ঠে গীত হয় ‘আগুনে ঘুমাই আগুনে খাই রে’ এবং রবিউল হাসান গেয়ে শোনান ‘চলো যাই চলো যাই’ শিরোনামের গান। কবিতা আবৃত্তি করেন বেলায়েত হোসেন, মিজানুর রহমান সুমন ও শিখা সেনগুপ্তা। নৃত্য পরিবেশন করেন আদৃতা আনোয়ার প্রকৃতি ও মৃত্তিকা আনোয়ার প্রভা। সব শেষে পরিবেশিত হয় উদীচীর পথনাটক ‘সময়ের আর্তনাদ’। রচনার পাশাপাশি নাটকটির নিদের্শনায় ছিলেন নাজমুল হক।
×