ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রংপুরে স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণ

এএসআই রাহেনুলকে কারাগারে প্রেরণ, রিমান্ড আবেদন

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ৩০ অক্টোবর ২০২০

এএসআই রাহেনুলকে কারাগারে প্রেরণ, রিমান্ড আবেদন

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর, ২৯ অক্টোবর ॥ রংপুরে স্কুলছাত্রী গণধর্ষণ মামলার আসামি ডিবি পুলিশের এএসআই রাহেনুল ইসলাম ওরফে রাজুকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অধিকতর তদন্তের জন্য সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পিবিআই। আগামী ৪ নবেম্বর রিমান্ড আবেদনের শুনানি হবে। বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার দিকে রংপুর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন পিবিআই’র পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, স্কুলছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় রাহেনুলের জড়িত থাকার বিষয়ে বেশকিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখন কিছু বলা যাচ্ছে না। তিনি আরও জানান, বিচারক আগামী ৪ নবেম্বর রিমান্ড আবেদনের বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করেছেন। তখন রিমান্ডে আরও বিস্তারিত জানা যাবে। এর আগে বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কার্যালয় থেকে তাকে হারাগাছ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে নেয়া হয়। সেখানে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম অধিকতর তদন্তের জন্য সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করেন। বিচারক স্নিগ্ধা রানি আগামী ৪ নবেম্বর রিমান্ড আবেদন শুনানির দিন ধার্য করেন। পরে তাকে মেট্রোপলিটন পুলিশের ভ্যানে করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। প্রসঙ্গত, সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে এএসআই রাহেনুলসহ আরও দুইজনের নাম উল্লেখ করে নির্যাতিতা স্কুলছাত্রীর বাবা মামলা করেন। বুধবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক জাহাঙ্গীর আলমের কাছে ২২ ধারায় জবানবন্দী দেয় মেয়েটি। একইদিনে আরও দুইজন আসামি আবুল কালাম আজাদ ও বাবুল হোসেন ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দীতে ধর্ষণে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। এছাড়া ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগে গ্রেফতার মেঘলা ও শম্পা নামে দুই নারীকে মঙ্গলবার কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। ওই স্কুলছাত্রী যে বাড়িতে ধর্ষণের শিকার হয়েছিল সেই বাড়ির বাসিন্দা ওই দুই নারী। এই মামলায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। মামলা সূত্রে জানা যায়, রংপুর মহানগর পুলিশের হারাগাছ থানাধীন ময়নাকুঠি কচুটারি এলাকার নবম শ্রেণীর এক ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন মহানগর ডিবি পুলিশের এএসআই রাহেনুল ইসলাম। পরিচয়ের সময় রাহেনুল তার ডাক নাম রাজু বলে জানান ওই ছাত্রীকে। প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে গত শুক্রবার ওই ছাত্রীকে সিগারেট কোম্পানির ক্যাদারের পুল এলাকার ডাঃ শহিদুল্লাহ মিয়ার ভাড়াটিয়া সুমাইয়া আক্তার মেঘলা ওরফে আলেয়ার বাড়িতে নিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করেন রাহেনুল। পরে গত শনিবার রাতে ভাড়াটিয়া মেঘলা ও তার সহযোগী সুরভি আক্তারের সহায়তায় আরও দু’জন তাকে গণধর্ষণ করে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে রোববার বিষয়টি জানাজানি হয়। পরে ওইদিন রাত সাড়ে আটটার দিকে পুলিশ মেয়েটিকে ওই বাড়ি থেকে উদ্ধারসহ মেঘলাকে এবং পরে রাতে আরেক সহযোগী সুরভিকেও আটক করে। এছাড়া ওই রাতেই অসুস্থ ছাত্রীকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করায় পুলিশ। এ ঘটনায় ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে পুলিশ সদস্য রাহেনুল ইসলাম ওরফে রাজু ও মেঘলার নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আসামি করে হারাগাছ থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত সোমবার সকালে রাহেনুল ইসলামকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। পরে দুপুরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সেদিন থেকে পুলিশ লাইন্সে নজরদারিতে ছিলেন রাহেনুল। অধিকতর তদন্তের স্বার্থে গত সোমবার বিকেলে মামলাটি হারাগাছ থানা থেকে রংপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তর করা হয়। পরে বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাহেনুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ লাইন্স থেকে পিবিআই কার্যালয়ে নেয়া হয়।
×