তোমাকে খুঁজতে শেষবার এসেছিলাম আমি। গুম হয়ে যাওয়া শহরের বাতাসে তোমার নিঃশ্বাস তখনও বেঁচেছিল। আবছা কিছু পদচিহ্ন মিলিয়ে যেতে যেতেও লুক্কায়িত খনিজের মতো জমা ছিল মাটির প্রাণের কাছে। আর কিছু টুকরো কথার রিনরিনে ধ্বনি, চূর্ণ চাহনি অথবা প্রসাধনমাখা দেহের সুগন্ধ বাতাসের গায়ে ফিসফিসানি কথা হয়ে ভেঙেচুরে গিয়েছিল। এমনভাবে মিশেছিল যেমন আমরা নিশ্চিহ্ন সভ্যতার লুপ্ত সৌন্দর্যের কথা বলি। হারিয়ে গিয়েও তাতে অন্যরকম প্রাণ থাকে। এ সবই তোমাকে নিয়ে আমার বিশ্বাস ও অনিকেত ভাবনার সঙ্গী হয়ে আছে।
আমার মনের কাঠচাঁপার হলুদ বুকে রোদের উত্তাপ ভাগ বসিয়েছিল প্রতিদিন। ভেতরে ভেতরে লালচে কামনা। লোকে অবশ্য যেটাকে পাপ বলে ডাকে। সে পাপবিদ্ধ মনের সওয়ারি হয়ে শহরের প্রান্ত ধরে হাঁটি। জান তো, আজ কতদিন পরেও শহরটি এখনও ঝিমধরা, গুমোট, প্রাণহীন। তোমার দীর্ঘশ্বাসেরা নদীর প্রবল গর্জনতোলা ঢেউ কিংবা জলযানের যান্ত্রিক কোরাসে মিলিয়ে যায়নি। দিব্যি বেঁচে থেকে সাঁতরে যাচ্ছে এপার থেকে ওপারে, অতীত থেকে ভবিষ্যতে, বাস্তব থেকে গল্পে।
যে শহরের গল্প বলব বলে এসেছি তা মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন আমার একক উপলব্ধির মতো। একেবারে হারিয়ে যাওয়ার আগে একটি বাঁধানো সেতু নেমে গিয়েছিল ওদিকে। একবার ভেবে দেখ, এ সেতুটি কেবল দুটো ভূখ-কেই মিলিয়ে দেয়নি, দুটি মানুষের আকাক্সক্ষাকেও মিলিয়ে দিয়েছিল অবধারিতভাবে। তোমাদের দেখতে সেই তো প্রথম আসা।
অনেক দূরের একটি শহর থেকে দায়িত্বের ছুতোয় একদিন হঠাৎ করে এসেছিলাম। তোমার কাছে একদম অনাহুতের মতো। যে সেতুটির কথা মাত্র বললাম তা যখন পেরিয়ে যাচ্ছিলাম ওপর থেকে দাঁড়িয়ে দুধারের মানুষের অবিন্যস্ত জীবনযাপন, উন্মুখর কোলাহলের দিনপঞ্জি দেখছিলাম বিস্ময়ভরে। আমার ঔৎসুক্য বাড়িয়ে দিয়েছিল এ সাড়ম্বর ব্যস্ততা। জীবন কোলাহল পছন্দ করে- জীবিকার কোলাহল, বেঁচে থাকার কোলাহল। শব্দ নেই তো জীবন নেই। জীবনের নামই তো শব্দ। আর নির্জনতা মানে মৃত্যু, অজ¯্র শব্দের মৃত্যু। প্রকৃতিও তাই শব্দ পছন্দ করে। আমিও করি। বিশাল এক ঝাঁক গিরিবাজ পায়রার ডানা ঝাপটানো আওয়াজ চারপাশের আরও অসংখ্য শব্দের সঙ্গে মিশে গিয়ে এসব কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল।
অচিনপুর অমনই হয়! অনেককে জিজ্ঞাসা করে অচিনপুরের ঠিকানা খুঁজে খুঁজে তোমাদের কাছে ঠিক পৌঁছে গিয়েছিলাম। শহরটা তখনও পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি। তুমি ছিলে, তোমরা ছিলে, তোমাদের কাছে মানুষের আনাগোনা ছিল। ব্যস্ত বন্দরের চিরচেনা চেহারার মতো। প্রথমদিন তোমার নিশ্চয়ই মনে পড়ে, কী আশ্চর্য জীবন্ত ছিল শহরটা। এটা কি রোমাঞ্চকর কোন অভিজ্ঞতার কাছাকাছি পৌঁছানোর উত্তেজনা নাকি মনের সত্যি কৌতূহল তা আমাকে এখনও গভীর রহস্যে বিবশ করে রাখে। আমার সঙ্গে আসা বন্ধুটির হাতে ছিল ভারি লেন্সের ক্যামেরা, আর আমার কাঁধে ব্যাগ। একজন ফ্রিল্যান্সিং রিপোর্টার আর ফটোগ্রাফারের চেহারা ও অনুষঙ্গ এমন হবারই কথা।
তোমাদের শহরের কথা জেনেছিলাম পত্রিকার বিশেষ প্রতিবেদনে। শহরের ইতিহাস লুপ্ত সাম্রাজ্যের চেয়ে কোন অংশে কম ছিল না। প্রাচীনের প্রতি আমার কৌতূহল অসীমের মতো উড্ডীন। সে শহরের কথা জানতে ও জানাতে আমার ছুটে আসা ছিল। ওই যে বলেছি শব্দ নেই তো জীবন নেইÑ তাই জীবন হারিয়ে মৃত্যুর কাছাকাছি উপনীত হবার আগে বা জীবনহীন জীবনের দিকে ধাবিত হবার আগে এসেছিলাম তোমাদের খোঁজে। প্রথম দেখায় কী অদ্ভুত জীবনের স্বাদ খুঁজে পেয়েছিলাম আমি- দেখেছিলাম স্বাধীনতার সুখ। আমাদের দেখায় ক্লেদময় জীবন, দিনশেষে তোমাদের কাছে আত্মমর্যাদা বা গ্লানি ছিল কিনা জানি না। অথচ সে সুখ গ্রহণের আগেই কেমন ছন্দপতন হলো। তাই দ্বিতীয়বার আসার সুযোগ থেকে আমি কখনই বঞ্চিত হতে চাইনি।
জীর্ণ জনপদে একটা সিনেমা হল দাঁড়িয়ে ছিল। ভাঙাচোরা-রংচটা সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে তোমরা কজন পথ আগলে দাঁড়ালে। বন্ধুটির ক্যামেরা তোমাকে প্রথম আবিষ্কার করেছিল। আর ঝটপট ক্যামেরার কয়েকটা ক্লিক শব্দ। তোমাদের একজন খুব বিরক্ত হয়ে তোমাকে ডাকল।
শবনম... দ্যাখ তো... এরা কী চায়?
হ্যাঁ... শবনম। প্রথমদিন এমন একটি নামই শুনেছিলাম যতদূর মনে পড়ে। খুব সহজভাবে অল্প আলাপে আমাদের সঙ্গে মিশেও গিয়েছিলে। প্রথমে যদিও ঘোর আপত্তি ছিল। বলেছিলে, আমাদের ছবি তুললেন ক্যান?
না, এমনি। একটু কাজের প্রয়োজনে।
এমনি ক্যান তুললেন? আপনেরা শিক্ষিত। শহর থেকে আসছেন বইলাই কি সব পারেন? অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন নাই?
সকলেরই আত্মমর্যাদা রয়েছে। ব্যক্তিগত গ-িতে সহজে অনধিকার প্রবেশ করতে নেই। তোমার আত্মঅহঙ্কার আমাকে ভাবিয়েছিল। তুমি জানো দেখেই সোজাসাপটা জিজ্ঞাসা। এদিকে আমরাও অপ্রস্তুত কিছুটা। আমাকে চুপ থাকতে দেখে বন্ধুটি নিজেই অস্থির হয়ে তোমাকে শান্ত করতে উঠে-পড়ে লেগেছিল। তার অনবরত চেষ্টা দেখে তুমি হাসছিলে খলখল করে। আমি বিহ্বল হয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম শুধু।
আমরা যদিও আগে থেকে জেনে এসেছিলাম শহরের কোথায় তোমাদের পাওয়া যাবে। আমাদের গন্তব্য সুনিশ্চিত ছিল। আমরা আসলে জীবন, নাকি জীবন ও মৃত্যুর কাছাকাছি ধূসর কোন জীবনের সন্ধানে গিয়েছিলাম জানি না। মুখোশের প্রিয় আবরণের নিচে কত কুৎসিত বিবরণ লিপিবদ্ধ থাকে। সেগুলো তোমরা জান না। আমরা সকলেই জীবিকার পেছনে ছুটি। এই তুমিও যেমন ছুটছ। তবে তোমাদের মুখোশ নেই। অকারণ ছদ্মবেশ ধারণ নেই।
শহরের চকমকি থেকে বিচ্ছিন্ন সে ভূখণ্ড- তোমার জগত। ওখানে পৃথিবীর শেষ। শহর নিজেই সেখানে হারিয়ে গেছে। এটা অজানা অন্য পৃথিবীর অংশ। তবে এ পৃথিবীতে এখনও তোমাদের প্রয়োজন আছে। কিছু মুখোশপরা মানুষের প্রয়োজনে।
ঝিমিয়ে পড়া জনপদের এক কোণে অনুচ্চ বাতিঘর আজও দাঁড়িয়ে। একটা ত্রিকোণ ভূখ-ের শেষ পাথুরে ভিত্তির ওপর কী দৃঢ়ভাবে এটি দ-ায়মান আজও। এর সবুজ আলো কত দূরগামী নৌকা আর মালবাহী স্টিমারকে সাহস দিয়েছে বহুকাল ধরে। সেখান থেকে সাঁতরে ফিরেছে রতিরঙ্গ মানুষ। শহরটি তাই আমার কাছে ছবির মতো জীবন্ত ল্যান্ডস্কেপ। যা কেবল অন্তহীন আশা জাগিয়ে প্রাণের কাছে ঝড় তুলে যায়।
আসলে প্রথমবার আসাটা- একজন যাযাবর মানুষের। যে পথ চেনে না, দিক জানে না। দিকের কথা যখন উঠলোই তোমাকে বলে রাখি আমি এখনও দিক বুঝি না। তোমাদের খুঁজতে যাওয়ার আগে একটাই পথ ছিল পুরনো সে সেতুটি। আরও হয়ত অন্যপথ ছিল। সেগুলো আমি চিনি না।
তুমি হয়ত জান না, নদীতে আমার ভয়। ডুবে যাওয়ার ভয়। মরে যাওয়ার ভয়। কিন্তু, আমার পথে তোমাকে খুঁজতে গিয়েও কি আমার মরণ হয়নি? আমি কি ডুবে যাইনি অনন্ত অনিশ্চয়তায়? আর ডুবে গেছি বলেই তো ফিরে গিয়ে আবার খুঁজতে এসেছি তোমাকে এ হারানো শহরের কাছে। দিকভ্রান্ত হলেও অস্তগামী সূর্যের রং ধরে সোজা পথ চলে গেছে সেখানে। ওদিকটা পশ্চিমের। লোকে বলতো। পুবের সূর্য সেখানে হানা দিত কিনা জানি না তবে স্তব্ধ দাঁড়িয়ে থাকতো অনুজ্জ্বল বাতিঘর।
দুই.
হারানো শহরটার আমি কোন নাম দিইনি। অথবা নাম দেয়ার মতো কোন যুতসই শব্দ খুঁজে পাইনি। কী হবে নাম দিয়ে? আর এটাকে শহরই বা বলছি কেন? এটা ছিল শহরের প্রান্তে ঘুমিয়ে থাকা নিস্তব্ধ জনপদ। এক সময় যার জৌলুস ছিল, জমকালো পসরা সাজানো বিতান ছিল, বাণিজ্য ছিল, লক্ষ্মী ছিল সবখানে। এখন তো চারদিকে ভরা শূন্যতা, এক আক্ষেপভরা শূন্যতার হাহাকার। অতীতের সরবময় অবস্থা নিজে থেকে ডুব দিয়েছে অজানা গহ্বরে। তাই এটা আমার কাছে ছিল হারানো শহর। তুমি অবশ্য আমার নাম জানতে চাওনি। আমি জানতে চাইলেও বলেছিলে, নাম দিয়া কী হইব? আমাদের সব নামই তো বদলে দেয়া নাম। ও আর শুই না কী হইব? শবনমও যা, রুমকিও তা...। সত্যি, জীবিকার কারণে এখানে নামেরও বদল হয়, বদলে যায় পূর্বপরিচয়।
আমিও ভেবেছি সত্যিই তো, তোমার নাম তোমার মধ্যে হারিয়ে গিয়েছে বহু আগে। অথবা তুমি ভুলে গিয়েছ ইচ্ছা-অনিচ্ছার অগোচরে, ঝলমলে রঙিন নামের বহুল ব্যবহারে। আমরাই তোমাকে বারবার সাহায্য করেছিলাম নাম-পরিচয় বদলে। তবু আমি তোমাকে একটা নাম দিয়েছিলাম ডাকবার সুবিধার জন্য। তুমি মেনে নিয়েছিলে, মনে রেখেও দিয়েছিলে। ঘাড় কাত করে সায় জানিয়ে উঁচু কণ্ঠে সমর্থন দিয়েছিলে। কিন্তু বাকিসব ধীরে ধীরে হারানো শহরের মতো হারিয়ে গিয়েছিল একদিন। তুমিই বলতে, আমাদের কথা কেউ মনে রাখে না গো স্যার। রাত শেষ তো সব শেষ।
আমি বলতাম, আমার কাছে তুমি শূন্যতা। তুমিই ভাবনার পূর্ণতা।
আলাপের সময়ে তুমি মাঝে মাঝে বলতে, এ শহরটা তোমার জগত, আর তোমার জগতটাই এ শহর। যদিও কবে কখন কার হাত ধরে তুমি এখানে এসে ঠাঁই নিয়েছ বলতে পারোনি। শহরের চিৎকার তোমার চিৎকার, শহরের ব্যথা তোমার ব্যথা কিংবা আনন্দটাই তোমার আনন্দ। এখানে জীবিকার উপাদান পাওয়া গেছে। তাই ওটাই তোমার জীবন এখন।
একবারে শেষ প্রান্তে বাতিঘরের সবুজ আলোটা যেখানে জ্বলত নিভত তার কিছু দূরে গা ঘেঁষে টিনের চালার সারি। অনেক নাম না জানা ঠিকানাহীন মানুষের আশ্রয় ছিল সেখানে। তারা সব তোমার মতো। তবে তাদের মধ্যে তুমিই ছিলে সবচেয়ে স্বাধীনচেতা একজন। তাই তোমাকে খুঁজে নিয়েছিলাম। কাজের সূত্রে প্রথমে সেটাই সমীচীন ছিল।
তুমি আরও বলতে, আচ্ছা, ওই জলের ওধারে আর কি শহর আছে? চলেন, পালায়া যাই। এসব বলে খিলখিল করে হাসতে। তোমার হাসি শুনে সূর্যটা আরও কিছুক্ষণ ঠিক স্থির হয়ে থাকতো দিগন্তের বুকের কাছে।
আসলে সে ভাবনায় যৌক্তিকতা ছিল। নতুন করে বাঁচবার আকাক্সক্ষা ছিল। ছিল পাখির মতো মুক্তি। আমি জানি, এ শহরের বাইরে অন্য কোথাও তোমার যাবার সুযোগ ছিল না। দাঁড়াবারও নয়। আগেই জেনেছি শহর ও শহরের মানুষগুলোই তোমার জগত। তাই তোমার সে অন্য পৃথিবীতে আর কারও পৃথিবী মেশেনি, ওখানেই তোমার পৃথিবী শেষ হয়েছে, নিঃশেষও হয়েছে।
আমার জন্ম কেন জান? তোমাকে খুঁজে পাব বলে, নিজের মতো খুঁজে নেব বলে, আবার হারিয়ে ফেলে অকারণ খুঁজব বলে। জন্মটা সত্য। তবে প্রতিটা জন্ম আবার তার অনাগত মৃত্যুকে সত্য করে দেয়। নাকি জন্মটা মৃত্যুর অনুগামী হয়ে ছোটে! তোমাকে শেষবার খুঁজতে এসে জানি আমার জন্মটার মৃত্যু হয়েছে। হারানো শহরের কাছে কেউ কখনও আসে না। সবাই শুধু ধুলোমাখা ইতিহাস খুঁজতে আসে। তোমাদের স্মৃতি নিয়ে কেবল দাঁড়িয়ে আছে বিধ্বস্ত টিনের চালা আর সার সার হাহাকারের নিস্তব্ধতা।
সেবার এসে কাচকাটা বিশাল মসজিদ খুঁজে পেলাম; কী অপরূপ তার গম্বুজ, কেমন ধবধবে সুউচ্চ সুদৃশ্য মিনার। জ্বলজ্বল করে কথা বলে। কাছেই পেয়ে গেলাম হরিসভার মন্দির। যেখানে নদীর গর্জন বারবার চোখ রাঙিয়ে কথা বলে ওঠে। এরা কখনও তোমাদের কথা বলেনি। তোমাদের পাশেও ছিল না।
আজ এ মায়ার শহরটার চারদিকে শূন্যস্থান, যেন এক ধ্বংসক্ষেত্র। ল-ভ- হয়ে আছে সব। একটা আবছা ছায়ার ভ্রান্তি গোটা শহরজুড়ে মাখামাখি হয়ে আছে। গতকাল পত্রিকাগুলোর ভেতরের পাতায় বিধ্বস্ত এক জনপদের ছবি আঁকা ছিল। ছিল তোমাদের খবর। এতদিন ধরে যারা মিথ্যা করে আগলে রেখেছিল তোমাদের তারাই এসে হামলে পড়ল। ইস, কী নিষ্ঠুরতা, আদিম রিপুর বর্বরতা! জোর করে বাস্তুচ্যুত করেছে শেকড়গাড়া ভিটে থেকে। এই যে দেখো না, কত ঝড়-জল ডিঙিয়ে আমিও এসেছি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতে। ঘাঁটাঘাঁটি করব তোমাদের অতীত জন্মের ইতিহাস। নাকি আমাদের পুরনো পাপের? সে কাহিনী খুঁড়তে গিয়ে আমরা বার বার ক্লেদময় হয়ে উঠব। তবু থামব না।
শবনম, তোমার দেখা পাব না আমি জানি। হয়ত কোনদিনই আমাদের দেখা হবে না। মনে পড়ে, আগে যখন দূরগামী লঞ্চের ভেঁপু শুনতে পেতে, আমাকে বলেছিলে ঠিক একদিন ঠিকানাহীন পাড়ি জমাব কোথাও। তুমি খুব বোকা। লঞ্চগুলোর তো গন্তব্য রয়েছে। তোমাদের গন্তব্য থাকতে নেই। আমরাই বেঁধে দিই তোমাদের নিয়তি। ওটাই শেষ গন্তব্য তোমাদের। ভাল থেকো বলব না। তবে তুমিহীন তোমাদের শহরে এসে বোবা আর্তনাদ শুনতে পাচ্ছি বার বার। এক অদ্ভুত শূন্যতার অতলে হারিয়ে যাচ্ছি যেন। কেন এমন হলো?
সন্ধ্যা মিলিয়ে আসছে মোহনার কাছে। অগুনিত যাত্রী নিয়ে এখনই নির্ধারিত গন্তব্যের দিকে ছুটে যাবে বোগদাদীয়া জাহাজ। কত মানুষ ওখানে। ওখানে মিশে যাওয়া নিরাপদ। তুমি আছ তো ওদের ভিড়ে? আমি ওদের মাঝে তোমাকে খুঁজব না। তুমি পালিয়ে যাও। অনেক দূরে এ লোকালয় ছেড়ে পালিয়ে যাও। এক সময় মায়াবিদ্ধ ছায়ার পাপ বুকে নিয়ে আমি ফিরে যাব আমার অনাবিল শহরে।