ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রসঙ্গ- যুবতী রাধে

প্রকাশিত: ২৩:৩৯, ২৯ অক্টোবর ২০২০

প্রসঙ্গ- যুবতী রাধে

একই গান গেয়েছেন অনেকেই নিজেদের মতো করে। রাধা কৃষ্ণের প্রেম উপাখ্যান সুরের মূর্ছনায় গান হয়ে উঠেছে জীবন্ত। কিন্তু আধুনিককালে সৃজনশীলতার মালিকানা হয়ে উঠেছে মুখ্য। তাই প্রশ্ন উঠেছে ‘যুবতী রাধে’ গানটি আসলে কে লিখেছেন? সরলপুর ব্যান্ডের সদস্য মার্জিয়া তুরিনের দাবি ৪২ লাইনের গানটির প্রতিটি বাক্য তাদের লেখা। অন্যদিকে অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন মনে করেন মৌলিক গান মানে সম্পূর্ণ নতুন কথা আর সুর করলে তখনই সেটি তাঁর হয়। সঙ্গে কিছু শব্দ যুক্ত করে কণ্ঠে তুললেই তাঁর হয় না। কিন্তু গানের মালিকানা নিয়ে বিতর্ক তার কারণ কি? গানটি যে কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন করা তা আমরা অবগত ছিলাম না। শাওনের প্রশ্ন আসলেই কি এর কপিরাইট হয়? আমার তা মনে হচ্ছে হয় না। যখন ইউটিউবের সব জায়গায় লেখা থাকে সংগৃহীত তখন কেউর বোঝার উপায় নেই যে এটা কপিরাইট করে রেখেছে। একটি গান একদিনে দখল করে নেয় গোটা সামাজিক মাধ্যম। প্রশংসায় ভেসেছে অসংখ্য দর্শক-শ্রোতার। কারও মতে বাংলার লোকসঙ্গীত আবার কারও মতে সঙ্গীতের আর একটি মাধ্যম। বলছিলাম ‘সর্বধ মঙ্গল রাধে’ গানটির কথা। সঙ্গীতশিল্পী পার্থ বড়ুয়ার সংগীত পরিচালনায় গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন অভিনেত্রী ও নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওন ও নন্দিত অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। গানটির একটি ভিডিও কয়েক দিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার পর ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়, সেটিতে গানের কথার ক্রেডিটে বলা হয় ‘লোকজ সঙ্গীত ও সংগৃহীত গান।’ কিন্তু সরলপুর নামের একটি ব্যান্ডের দাবি, এই লিরিক্স তাদের লেখা এবং তাদের কপিরাইট রেজিস্ট্রেশনও রয়েছে। এমন দাবি ও মামলা করার হুমকির প্রেক্ষাপটে গানটির প্রযোজনা সংস্থা ‘আইপিডিসি আমাদের গান’ ভিডিওটিকে ইউটিউব থেকে নামিয়ে নেয়, কিন্তু তাতে বিতর্ক না থেমে বরং বেড়েই চলে। অনেকেই এই গানটিকে প্রাচীন লোকগানের সঙ্কলন ‘ময়মনসিংহ গীতিকা’র অন্তর্ভুক্ত বলে দাবি করেন এবং গানটির কপিরাইট আনুষ্ঠানিকভাবে সরলপুর ব্যান্ডের হওয়া উচিত না বলেও অভিযোগ তোলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। গানটি সরিয়ে নেয়ার পর বিতর্ক হয়ত খানিকটা মিটেছে কিন্তু দিনশেষে গানটি ছুঁয়ে গেছে অজস্র শ্রোতাদের মাঝে। একদল বলছে, গানটি কপিরাইট ভঙ্গ করে গাওয়া হয়েছে। আরেক দল প্রশ্ন তুলছে, লোকসঙ্গীতের আবার কপিরাইট হয় কি করে? অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী আক্ষেপ নিয়ে বলেন, লজ্জা হচ্ছে যে, ফেসবুকে মন্তব্য করে লেখা হচ্ছে গানটি আমরা চুরি করেছি। দুই হাজার বিশ সালে এসেও আমি, পার্থ বড়ুয়া কিংবা শাওনের গান চুরি করতে হবে? এটি সত্যি লজ্জার। আসল চুরি কে করেছে সেটি খতিয়ে দেখা দরকার। ইউটিউব ভাইরালের যুগ। অত্যন্ত সস্তা অনেক শব্দ প্রয়োগ করেও অনেক গান ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে। যেখানে শুদ্ধ, সুস্থ লোকগীতির প্রয়োজন আছে সেখানে উদ্যোগটা হয়ত দিন দিন বাড়ছে কিন্তু তুলনামূলক কম। সেই জায়গা থেকে এ জাতীয় গানগুলো নতুন করে তরুণদের কাছে কিভাবে পৌঁছায় দেয়া যেতে পারে। গুরুত্ব কতটুকু? উত্তরে চঞ্চল বললেন, সে রকম কার্যক্রম মাথায় রেখেই এই গানটি করা। উদ্দেশ্য শুদ্ধ লোকসঙ্গীত তরুণদের কাছে পৌঁছে দেয়া। বর্তমানে শিল্প সংস্কৃতির ঐতিহ্য আমরা হারাতে বসেছি সংরক্ষণের চর্চার দিকে কেউ আগাচ্ছে না। পশ্চিমা সংস্কৃতি ধারা প্রবাহিত হচ্ছে তাঁরা। সেই জায়গা থেকে আমরা কিছু মানুষ এই কাজগুলো করার চেষ্টা করছি। গানের প্রশংসা এবং ভিউ দেখার পর জটিলতা নিয়ে কষ্ট লাগছে না। যদিও অপমান গায়ে লেগেছে। তবে দু-এক লাইন পরিবর্তন করে নিজের দাবি করলেই কি সত্যিকার অর্থে তাঁর হয়? এ কথাগুলো যুগের পর যুগ শুনে আসতেছি। পরিবর্তন হতে পারে তবে মালিকানা নয়। গান চুরির অভিযোগ উঠেছে এখন এর সমাধান কি হতে পারে? এমন প্রশ্নের উত্তরে আনন্দকণ্ঠকে শাওন বলেন, গানটি যখন আমরা গাই তখন ২৫-৩০টির অধিক লিংক ইউটিউব চ্যানেলে দেখেছি সেখানে গীতিকার বা সুরকার কারোর নাম নেই। যাঁরা দাবি করছেন তাঁদের গান তাঁরাই নিজেরাই নিজেদের নাম উল্লেখ করেননি। কপিরাইট করা তাও উল্লেখ ছিল না। যার কারণে কারোরই বোঝার উপায় নেই যে এটি কপিরাইট করা। আমরা সংগৃহীত গান হিসেবে গেয়েছি। গানটি অবমুক্ত হওয়ার পর এখন তাঁরা নিজেদের বলে দাবি করছেন। প্রথমে বিব্রত হয়েছি। পরবর্তীতে গবেষণা ও তথ্য খুঁজে বের করলাম। নিশ্চিত হই যে এটি তাদের নিজস্ব গান দাবি করার কারণ খুঁজে পাইনি। গানের বেশকিছু অংশ এদিক ওদিক করে নিজেদের বলে দাবি করছেন। তবে বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে নিজেদের কিছু কথা জুড়ে দিয়েছেন। কিন্তু এই গানটি কিছুতেই তাঁদের হতে পারে না। হুবহু কিছু লাইন পাওয়া গেছে। মূল বইটি এরই মধ্যে কপিরাইট অফিসে জমা দেয়া হয়েছে আশা করছি খুব শীঘ্রই জানা যাবে আদৌ তারা কপিরাইট পাবেন কিনা। এটি পুরো টিমের প্রশ্ন। সবার প্রশ্নটি রেখেছি আশা করছি দ্রুত সুন্দর সমাধান পাওয়া যাবে। গানটি নেট দুনিয়ায় তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিতর্কের অভিযোগে গানটি সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এতে করে গানের ভবিষ্যত কি হতে পারে বলে মনে করেন? গান ভাল হলে ইউটিউব থেকে সরিয়ে দিলেই ভবিষ্যত খারাপ হবে না। গানটি প্রচারের চার ঘণ্টার মধ্যে কপিরাইট অভিযোগ করা হয়। সরিয়ে ফেলার পরও গানটি ইউটিউব ও ফেসবুকে শত শত মানুষ দেখছে। গান যদি ভাল হয় মানুষ শুনবে। কপিরাইট দিয়ে আটকিয়ে রাখতে পারবে না। গান যদি সুন্দর হয় সেটি শিল্পীর মুক্ত আকাশে পাখা মিলবেই। পাখা কেটে বিচরণ করতে পারবে না। এ ধরনের বিতর্ক এরাতে বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা লোকগান রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষণ করা উচিত বলে মনে করছেন সবাই। আনন্দকণ্ঠ প্রতিবেদক
×