ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন উদ্যমে আঁচল

প্রকাশিত: ২৩:৩৯, ২৯ অক্টোবর ২০২০

নতুন উদ্যমে আঁচল

বর্ষার মতো জমকালো নয়; আবার শীতের বিস্মৃত অনুভূতিও নেই। পঞ্জিকার বাইরে শরতের আসা-যাওয়া অনেকটাই অলক্ষ্যে অগোচরে। তাই এই ঋতু অনেকের কাছেই উপেক্ষিত। প্রকৃতিতে শারদ আবাহন আর বান্দনা চলে নিয়ম মেনেই। হেমন্তের ভোরেও দেখা নেই সূর্যের। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, রাত থেকেই কখনো টিপ টিপ আবার কখনও অঝোর ধারায় বৃষ্টির আনাগোনায় সিক্ত মাটি ও প্রকৃতি। হেমন্তেও প্রকৃতির এই বিষণœরূপ। কার্তিক মাস এসেছে এক সপ্তাহের বেশি। আকাশ থাকবে ঝকঝকে নীল। সূর্য ছড়াবে মিষ্টি আলো। সঙ্গে হাল্কা হিম বাতাস। কিন্তু প্রকৃতির মাঝে এখন কোন কিছুরই দেখা নেই। বরং আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। ঝরছে ঝিরিঝিরি বা ভারি বৃষ্টি। সূর্যের দেখা তো নেই বললেই চলে। হেমন্তে প্রকৃতির কেন এই আচরণ? সেই উত্তর না খুঁজে আনন্দকণ্ঠের সঙ্গে কথা হয় ঢাকাই চলচ্চিত্রের মিষ্টি মেয়ে আঁচলের সঙ্গে। আকাশে এখন সাদা মেঘের ওড়াউড়ি থাকলেও কাজ নিয়ে উড়ছেন তিনি। বাংলা চলচ্চিত্রে যাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত বলা হয় তাদের মধ্যে অন্যতম একজন আঁচল। আঁচলের ক্যারিয়ারের সুসময়। কারণ হাফ ডজন কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। আজ এক শূটিং বাড়ি তো কাল অন্য শূটিং বাড়ি। দম ফেলার সুযোগ নেই। সর্বশেষ কাজ করেন মিজানুর রহমান মিজানের ‘রাগী’ চলচ্চিত্রে। সিনেমার কাজ শেষ, বাকি শুধু গানের শূটিং। যখনই গানের শূটিংয়ের জন্য মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে তখনই করোনার থাবা। সবার মতো আঁচলও শূটিং বিরতিতে ছিলেন। ‘চিতকার’ ওয়েব চলচ্চিত্র দিয়ে দীর্ঘ এক বছরের বিরতি শেষে কাজে ফিরেন। তারপর অংশ নেন মনতাজুর রহমান আকবার পরিচালিত ‘আয়না’ চলচ্চিত্রে। প্রথমবার নাম ভূমিকায় অভিনয় করছেন তিনি। এদিকে সম্প্রতি চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ফরিদুল হাসান পরিচালিত ‘কর্পোরেট’ ওয়েব চলচ্চিত্রে। নবেম্বরে শুরু হবে ওয়েব চলচ্চিত্রটির দৃশ্যায়ন। সোমবার চুক্তি বদ্ধ হয়েছেন পূর্ণদৈর্ঘ্য নতুন একটি চলচ্চিত্রে। আগামী মাসেই ঘটা করে জানান দেবেন। আরও দুটি ছবির কথা চলছে। কথা চূড়ান্ত পর্যায়ে শীঘ্রই চুক্তিবদ্ধ হবেন তিনি। আঁচলের কাছে আনন্দকণ্ঠ প্রশ্ন রাখে আজ এই শূটিং বাড়িতে তো আবার কাল আরেক শূটিং বাড়ি। মাঝে চরিত্রের জন্য সুযোগ মিলছে না। অল্প সময়ে চরিত্রে প্রবেশ করতে সমস্যা হচ্ছে কি? উত্তরে জানান, একজন শিল্পীর কাজই হচ্ছে বিভিন্ন চরিত্রে নিজেকে ধারন করা। যদিও ফিরেই বেশ কয়েকটি কাজ শুরু করেছি। বিরতি নেই বললেই চলে। মাঝে এক দিন সুযোগ পাওয়া যায়। তবে সমস্যা হচ্ছে না। বিশ্রামের দিনটিই কাজে লাগাচ্ছি চরিত্রটি নিজের ভেতর ধারন করি। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে ‘কর্পোরেট’ ওয়েব চলচ্চিত্রের গল্পটি যখন পড়ি চোখ দিয়ে পানি চলে আসে। চমৎকার একটি গল্প। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের আশপাশের একটি ঘটনা ফুটে উঠবে। আঁচলের মায়ের স্বপ্ন ছিল নায়িকা হবেন। কাজ করবেন শোবিজ দুনিয়ায়। পছন্দের নায়িকার ছবি টেলিভিশনে যেদিন প্রচার হতো সেদিন কেউ আর টিভির সামনে আসার দূর সাহস দেখাতেন না। কারণ সেদিন পুরো সময়টাই তাঁর। তিনি যতই বেড়ে উঠছেন রুপালি পর্দায় কাজ করার স্বপ্ন বিভোর হয়। তবে পরিবার স্বপ্নে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। কেউ শোবিজে কাজ করার পক্ষে নয়। স্বপ্ন মাটি দিয়ে সংসার বেছে নেন। তবুও রঙিন দুনিয়ার স্বপ্ন কিছুতেই মাথা থেকে যাচ্ছে না। তবে মা পূরণ করতে না পারা স্বপ্ন পূরণ করেন মেয়ে আঁচলকে দিয়ে। মাত্র তিন বছর বয়সে আঁচলকে ভর্তি করেন গানের স্কুলে। তবে গানের চেয়ে আঁচলের ঝোঁক ছিল নাচের দিকে। গানের স্কুলের সঙ্গে নাচের স্কুল। মা দিয়ে আসতেন গান শেখার জন্য তবে আঁচল তা ছেড়ে চলে যেতেন নাচ শিখতে। তবে মায়ের জন্য দুটিই রপ্ত করেন আঁচল। তাঁর মায়ের আজ স্বপ্ন পূরণ। মেয়ে আজ প্রতিষ্ঠিত নায়িকা। মাঝখানে কিছু সময়ের জন্য পর্দার আড়ালে থাকলেও আবারও নিয়মিত হয়েছেন আঁচল। সিনেমা আঁচলের নেশা। মাঝে বিরতির কারণ ভাল কাজের অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। নৃত্য শিল্পী থেকে অভিনয়ে জগতে প্রবেশ। তারপর একে একে কাজ করে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। সবারই স্বপ্ন থাকে বড় পর্দায় অভিনয়ের। আঁচলও স্বপ্ন দেখেন। প্রস্তাব পেতেই লুফে নেন। ছোটবেলার স্বপ্ন আর্মি হলেও রঙিন পর্দা তাকে নতুন করে স্বপ্ন দেখায়। মায়ের স্বপ্ন পূরণ করেন আঁচল। তার পুরো পরিবার সংস্কৃতি মানা। ‘জটিল প্রেম’ ছবিটি আঁচলের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। আঁচল যখন যে ছবিটি করেন তখন সেই চরিত্রটিই মধ্যে ধারণ করেন। নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেন। ব্যতিক্রম গল্পে কাজ করতে আগ্রহী। চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিজেকে মেলে ধরতে চান। সর্বশেষ মুক্তি পাওয়া ছবি ‘দাগ’। তারপর আর পর্দায় পাওয়া যায়নি। তবে একুশ সালের প্রথম সপ্তাহে মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে আঁচল অভিনীত ওয়েব চলচ্চিত্র ‘চিতকার’। ওটিটি প্লাটফর্মের পাশাপাশি ছবিটি হলেও মুক্তি পাবে। এ ছবিতে প্রথমবার মেকআপ ছাড়া এবং পুরো ছবি জুড়ে বোবা চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। আঁচল কাজের সঙ্গে কখনই আপোস করতে নারাজ। যে কাজটিই করেন শতভাগ মন দিয়ে করার চেষ্টা অবহ্যাত থাকে। যেতে চান আরও বহুতর। নিজেকে দেখতে চান অনন্য উচ্চতায়।
×