ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

টকশোয় অভিমত

করোনা মোকাবেলায় ধর্মের ইতিবাচক ব্যবহারের আহ্বান

প্রকাশিত: ২৩:০৫, ২৯ অক্টোবর ২০২০

করোনা মোকাবেলায় ধর্মের ইতিবাচক ব্যবহারের আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্ক এবং উদ্বেগের ফল হিসেবে ধর্মীয় এবং রক্ষণশীল মনোভাব বেড়েছে। এই রোগটি উদারপন্থী ও ধর্মে অবিশ্বাসীদের জন্য ‘শাস্তি’ ডানপন্থীদের এমন দাবি জনগণের আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দেয়। ডানপন্থীরা এই রোগ প্রতিরোধ ও সুরক্ষিত থাকার উপায় হিসেবে ধর্ম এবং গণজমায়েতে প্রার্থনাকে ব্যবহার করে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকে এই প্রবণতা বাংলাদেশে একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চরম রক্ষণশীল ইসলামপন্থী কণ্ঠস্বর জনগণের ভয়কে আরও বাড়িয়ে তুলেছে এবং এই সুযোগে তাদের এজেন্ডা আরও বিস্তৃত করছে। এর ফলে সরকারী সুরক্ষা নীতিমালা এবং সামাজিক দূরত্ব সংক্রান্ত ব্যবস্থাগুলো ভেঙ্গে পড়েছে। জার্মান পররাষ্ট্র দফতর, ডিডব্লিউ, আর্টিক্যাল নাইনটিন ও চ্যানেল আইয়ের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত টকশোতে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তারা আরও বলেছেন, দেশের জনগণের বিরাট একটি অংশ সরকার কর্তৃক জারিকৃত বাধ্যতামূলক বিধিগুলোকে অগ্রাহ্য করে রোগসম্পর্কিত ডানপন্থী এই ভাষ্যকে শ্রদ্ধা করে এবং তাদের নির্দেশনা অনুসরণ করে। এটি একটি চ্যালেঞ্জ। এজন্য মহামারীতে ধর্মের ভূমিকা সংজ্ঞায়িত করতে এবং এটিকে সঙ্কট মোকাবেলায় ইতিবাচক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য এই কণ্ঠস্বরগুলোকে ব্যবহার করার বিষয়টি মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবিচ্ছেদ্য হয়ে উঠেছে। ডয়চে ভেলের খালেদ মুহিউদ্দিনের উপস্থাপনায় এই টকশোর আলোচনায় অংশ নেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অর ল্যাবরেটরি মেডিসিন এ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. এ কে এম শামসুজ্জামান, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের আইন ও মানবাধিকার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আজিজুন নাহার, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গবেষণা বিভাগের মুহাদ্দিস মুফতি ওয়ালীয়ুর রহমান খান ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ। বিভিন্ন সম্প্রদায় কীভাবে চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে পারে এবং সঙ্কট চলাকালীন একে অপরকে সহায়তা করতে পারে তাও আলোচনায় উঠে আসে। আলোচকরা বলেন, সকলের সুরক্ষা এবং সংশ্লিষ্ট সেবাগুলোতে সকলের সমান প্রবেশ নিশ্চিত করার জন্য সহযোগিতা এবং সামাজিক সম্প্রীতিই মুখ্য। কারণ মহামারীটি ধর্ম, বিশ্বাস, শ্রেণী ও বর্ণ নির্বিশেষে আমাদের সবাইকে প্রভাবিত করেছে। এশিয়ায় ডিডব্লিউর প্রকল্প ব্যবস্থাপক ফ্লোরিয়ান ওয়েগ্রান্ড এ বিষয়ের ওপর জোর দিয়ে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ধর্ম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ধর্মীয় কর্তৃপক্ষগুলো করোনা বিষয়ক ‘চরমপন্থী ফেক নিউজের’ বিরোধিতা করেছে। এটি মহামারীর চ্যালেঞ্জ সম্মিলিতভাবে এবং দায়িত্বের সঙ্গে মোকাবেলার যে আহ্বান তার একটি দৃশ্যমান লক্ষণ। বাংলাদেশের মতো একটি দেশের জন্য যা ধর্মীয়ভাবে রক্ষণশীল। এখানে সঠিক প্রমাণ-ভিত্তিক তথ্য প্রচারে সহায়তা এবং সামাজিক আচরণগত নির্দেশিকাগুলো প্রতিপালনে সহায়তা করতে ধর্মের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। বিশেষত ভুল তথ্য ও বিকৃত তথ্য মোকাবেলায় এবং সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠীর নেতিবাচক প্রচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ইতিবাচক ধর্মীয় কণ্ঠস্বর সহায়ক হতে পারে। চরমপন্থী ও এবং ক্ষতিকারক দৃষ্টিভঙ্গি ছড়িয়ে দেয়ার জন্য যারা ধর্মকে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে তাদের মোকাবেলায়ও এটি ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়াও জনসাধারণের উদ্বেগ বাড়ার সময়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বার্তা ছড়িয়ে দিতে এবং জনগণকে আশ্বাস প্রদানের ক্ষেত্রে এই সমস্ত ধর্মীয় নেতার কণ্ঠকে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরী। তার মতে, আমাদের জনসংখ্যার যে অংশটির প্রস্তুতি সবচেয়ে খারাপ আমরা তাদের মতোই শক্তিশালী। তাই একে অপরকে সাহায্য করা এবং এই জনস্বাস্থ্য জরুরী অবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের সবার এক হয়ে কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ। একই মত ব্যক্ত করে আর্টিকেল নাইনটিন বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, বাংলাদেশ সরকার এখন কোভিড ১৯-এর দ্বিতীয় তরঙ্গ মোকাবেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই প্রস্তুতি পর্বের কর্মসূচীতে ধর্মীয় কণ্ঠস্বরকে যুক্ত করা হলে তা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগকে আরও ফলপ্রসূ করবে। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দ্বারা সমর্থিত নিজ নিজ ধর্মীয় নির্দেশিকা অনুসরণ করে মহামারী মোকাবেলায় জনগণকে তাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক দায়বদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন করতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
×