ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আরও চার মামলা দায়ের

ইরফান সেলিম ও বডিগার্ড জাহিদ ৩ দিনের রিমান্ডে

প্রকাশিত: ২২:৪৩, ২৯ অক্টোবর ২০২০

ইরফান সেলিম ও বডিগার্ড জাহিদ ৩ দিনের রিমান্ডে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবৈধ জিনিসপত্র রাখার দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ইরফান সেলিমদের পরিবারের অবৈধ সম্পদের খোঁজে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এদিকে হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম ও ইরফানের বডিগার্ড জাহিদকে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ইরফান সেলিমসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আরও চারটি মামলা দায়ের হয়েছে। এ নিয়ে মোট পাঁচটি মামলা দায়ের হলো। আরও মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। ইরফান সেলিম নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমেদ খান ও তার স্ত্রীকে মারধর করে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গত ২৫ অক্টোবর রাজধানীর কলাবাগান সিগন্যালের পাশে ঢাকা-৭ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিমের ‘সংসদ সদস্য’ লেখা স্টিকারযুক্ত সরকারী গাড়ি নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমেদ খানের মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। ওই সময় নৌবাহিনীর কর্মকর্তার স্ত্রীও মোটরসাইকেলে ছিলেন। এ নিয়ে বাগবিত-ার এক পর্যায়ে ইরফান সেলিম, তার বডিগার্ড জাহিদসহ গাড়িতে থাকা লোকজন নৌবাহিনীর ওই কর্মকর্তাকে মারধর করে। কর্মকর্তার স্ত্রীর গায়েও হাত তোলে তারা। এ সময় জনতা ও ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা তাদের উদ্ধার করে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় ওই রাতেই ধানম-ি মডেল থানায় একটি জিডি হয়। রাতেই গাড়িটির চালক মিজানুর রহমানকে আটক করা হয়। পরদিন ২৬ অক্টোবর ধানম-ি থানায় নৌবাহিনীর ওই কর্মকর্তা হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম, হাজী সেলিমের প্রোটকল অফিসার এবি সিদ্দিক দিপু, মোহাম্মদ জাহিদ ও গাড়ি চালক মিজানুর রহমানসহ আরও অজ্ঞাত ২/৩ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। গত ২৬ অক্টোবর ঢাকা-৭ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি হাজী সেলিমের চকবাজারের দেবীদাস লেনের বহুতল দাদা চাঁন মিয়া ম্যানশনে অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযানে হাজী সেলিমের ছেলে ঢাকার দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইরফান সেলিম ও বডিগার্ড জাহিদ গ্রেফতার হয়। বাড়িতে মেলে ৩৮টি ওয়াকিটকি, পাঁচটি ভিপিএস সেট, তাজা বুলেটসহ একটি পিস্তল, একটি একনলা বন্দুক, একটি ব্রিফকেস, একটি হ্যান্ডকাফ, ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমদানি নিষিদ্ধ একটি ড্রোন (মনুষ্যবিহীন আকাশে উড়ার ছোট আকারের ক্যামেরা বহনকারী যান), ৭ বোতল বিদেশী মদ ও বিয়ার। অবৈধ মদ ও ওয়াকিটকি সেট রাখায় ইরফান সেলিম ও তার বডিগার্ড মোহাম্মদ জাহিদকে এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদ- দিয়ে কারাগারে পাঠান র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। গত ২৬ অক্টোবর রাত সাড়ে তিনটায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার আজিমুল হকের নেতৃত্বে ডিবির একটি বিশেষ দল টাঙ্গাইল থেকে মামলার অন্যতম আসামি হাজী সেলিমের মালিকাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মদীনা গ্রুপের প্রটোকল অফিসার এবি সিদ্দিক দিপুকে গ্রেফতার করে। তাকে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এদিকে মঙ্গলবার রাতেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে ইরফান সেলিমকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে। তাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। বুধবার দুদক প্রধান কার্যালয়ে কমিশনার (অনুসন্ধান) মোঃ মোজাম্মেল হক খান সাংবাদিকদের জানান, সংসদ সদস্য হাজী সেলিম ও তার ছেলে ইরফান সেলিমের অবৈধ সম্পদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব যদি দুদক আইনে তফসিলভুক্ত হয় তাহলে তা নিয়ে অনুসন্ধান করা হবে। তদন্ত শেষে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকারী জায়গা বা সম্পত্তি দখল করেছে কিনা তার তদন্ত চলছে। বুধবার ঢাকার চকবাজার থানায় ইরফান সেলিমের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা দায়ের করে র‌্যাব। ইরফানের দেহরক্ষী মোহাম্মদ জাহিদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। চকবাজার থানা পুলিশ জানায়, মাদক ও অস্ত্র আইনে দুটি করে মোট চারটি মামলা দায়ের হয়েছে। চকবাজার থানার ওসি মওদুদ হাওলাদার জানান, ইরফান ও জাহিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় প্রত্যেককে ১৪ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করা হবে। আমাদের কোর্ট রিপোর্টার জানান, বুধবার ইরফান সেলিম ও তার বডিগার্ড জাহিদকে ধানম-ি থানায় দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূর তাদের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ধানমণ্ডি মডেল থানার ওসি ইকরাম আলী মিয়া জনকণ্ঠকে জানান, বুধবার গাড়ি চালক মিজানুর রহমানকে একদিনের রিমান্ড শেষে ঢাকার সিএমএম আদালতে সোপর্দ করা হয়। দ্বিতীয় দফায় তার রিমান্ড চাওয়া হয়নি। প্রয়োজন হলে পরে চাওয়া হবে। আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। চালক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। ওসি আরও জানান, ধানম-ি থানায় দায়েরকৃত মামলায় ইরফান ও তার বডিগার্ড জাহিদের সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছিল। বুধবার আদালত তাদের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ধানম-ি থানায় দায়েরকৃত মামলাটির তদন্ত করছে একই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আশফাক রাজীব হাসান।
×