ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে বৈঠবে বসছে ইউজিসি শর্তসাপেক্ষে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা মুলধনের সুদের অংশ তুলতে পারবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

করোনায় শিক্ষার ছুটি বৃদ্ধির ঘোষণা আসছে আগামীকাল

প্রকাশিত: ১৭:০৯, ২৮ অক্টোবর ২০২০

করোনায় শিক্ষার ছুটি বৃদ্ধির ঘোষণা আসছে আগামীকাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের করোনা মুক্ত রাখতে আরেক দফা বাড়ানো হচ্ছে সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি। আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলনে ছুটি বাড়ানোর ঘোষণা দেবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি। আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করতে কাল উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এদিকে শর্তসাপেক্ষে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেবল ফাইনাল সেমিস্টারে শিক্ষার্থীদের প্রাকটিক্যাল পরীক্ষার অনুমতি দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারিদের বেতনের টাকা হিসেবে বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়গুলো তাদের জমা দেয়া মুলধনের সুদের অংশ তুলতে পারবে। চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কয়েক দফা এই ছুটি বাড়ানো হলেও সর্বশেষ ঘোষণা অনুসারে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির মধ্যে না ফেলতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি আবারও বাড়ানো হচ্ছে। ছুটি কতদিন বাড়ানো হবে, সে বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়আজ বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নেবে। বৈঠকের পর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সংবাদ সম্মেলন করে সিদ্ধান্ত জানাবেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেছেন, বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে এখন স্কুল-কলেজ খোলা সম্ভব হবে না। তাই চলমান ছুটি আরো বৃদ্ধি করা হবে। ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি রয়েছে। দুই মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তারাই বলছেন, বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে এখনই স্কুল-কলেজ খোলা সম্ভব হবে না। তাই চলমান ছুটি আরো বাড়ানো হবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করতে আজ উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এবার ভর্তি পরীক্ষা কীভাবে নেয়া হবে, কারা কিভাবে পরীক্ষা কিংবা ভর্তি নিতে চায় তা জানতেই উপাচার্যদের সঙ্গে বসবে ইউজিসি। বিকেল সাড়ে তিনটায় বৈঠব হওয়ার কথা রয়েছে। উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহসহ কমিশনের সকল সদস্য ও উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহিদুল্লাহ বুধবার জনকণ্ঠকে বলেছেন, আসলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিভাবে পরীক্ষা নেবে, কিংবা কিভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করাবে তা একান্তই তাদের সিদ্ধান্ত। আমরা ইউনিভার্সিটির মতামত নেব। তারা কে কিভাবে ভর্তি করতে চায়। সিদ্ধান্ত তাদের। আমরা শুরু তাদের সহযোগীতা করবো। এদিকে শর্তসাপেক্ষে বিশেষ বিবেচনায় শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেবল ফাইনাল সেমিস্টারে শিক্ষার্থীদের প্রাকটিক্যাল পরীক্ষার অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা ও বাস্তবতার কথা বিবেচনায় নিয়ে ইতোমধ্যেই শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে এসব সুপারিশ পাঠিয়েছে কমিশন। সিদ্ধান্ত অনুসারে কেবল যেসব শিক্ষার্থী ফাইনাল সেমিস্টারে রয়েছেন শুধু তারাই এই সুযোগ পাবেন। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং দু’জন শিক্ষার্থীর মাঝে অন্তত ছয় ফুট দুরত্ব বজায় রেখে এই ক্লাস পরীক্ষা নিতে হবে। কেবল তাই নয়, একেকটি পরীক্ষার ব্যাচে ১০ জনের বেশি হতে পারবেনা। ইউজিসির চেয়ারম্যান ড. কাজী শহীদুল্লাহ জনকণ্ঠকে বলেছেন, কেবল যে সকল শিক্ষার্থী তাদের ফাইনাল সেমিস্টারে রয়েছেন তাদের ব প্রাকটিক্যাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। ইউজিসি চেয়ারম্যান আরো বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পুনরায় খুলে দিচ্ছি না। শুধু এসব শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে বিশেষ বিবেচনায় ক্লাস ও পরীক্ষার অনুমতি দিচ্ছি। এ বিষয়ে সব দায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বহন করবে। মনে রাখতে হবে কেবল যেসব শিক্ষার্থী ফাইনাল সেমিস্টারে রয়েছেন শুধু তারাই এ সুযোগ পাবেন। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে এটি কার্যকর করা হবে। এক্ষেত্রে দুজন শিক্ষার্থীর মাঝে অবশ্যই অন্তত ছয় ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সর্বোচ্চ ১০ জন শিক্ষার্থী ল্যাব ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। একদিনে শুধু একটি ক্লাস নেয়া যাবে। এছাড়া বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় গুলোর আবেদনের প্রেক্ষিতে কেবল করোনাকালে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারিদের বেতনের টাকা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের জমা দেয়া মুলধনের সুদের অংশ তুলতে পারবে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সুপারিশ পাঠিয়েছে কমিশন। এখন চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে মন্ত্রনালয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দাবি ছিল প্রতিষ্ঠার সময় সরকারের কাছে জমা রাখা পুরো টাকাই তোলার সুযোগ দেয়া হোক। সেই আবেদনে সারা মেলেনি। ইউজিসির চেয়ারম্যান ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেছেন, আমাদের কাছে জমা রাখা পুরো টাকা তোলা যাবেনা। যেহেতু করোনার সময় অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারিদের বেতন ঠিকভাবে দিতে পারেনি বলে জানিয়েছে তাই বাস্তবতা বিবেচনা করে জমা রাখা মুলধনের কেবল সুদের অংশ পাওয়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবেদনের প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ই আমাদের কাছে এ বিষয়ে মতামত চেয়েছিল। আমরা মতামত পাঠিয়ে দিয়েছি। উল্লেখ্য, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠান আইন অনুসারে একেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নিতে পূরণ করতে হয় আইনের বেশ কিছু শর্ত। এর মধ্যে আছে- আবেদন পর্বেই থাকতে হয় ২৫ হাজার বর্গফুটের বাড়ি। কোনো কোনো উদ্যোক্তা বিপুল অঙ্কের অর্থে ভবন ভাড়া নেন। আবার কেউ বা নিজস্ব বাড়ি ব্যবহার করেন। পাঁচ কোটি টাকা এফডিআর করতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে। গঠন করতে হয় ট্রাস্টি বোর্ড। বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ভর্তি পরীক্ষা বিরুদ্ধে সমাবেশ: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে এমন খবরে উদ্বেগ জানিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। বুধবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, পাবলিক বিশ্ববদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে অনলাইনে ক্লাসের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো। আমরা অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি এই ক্লাসগুলোতে বড় অংশের ছাত্ররা অংশগ্রহণ করতে পারেনি। এর পেছনের কারণ ডিভাইস না থাকা, ডাটা কিনতে না পারা, নেট সমস্যাসহ আরও কিছু বাস্তব পরিস্থিতি। এ সমস্যাগুলো এখনও সমানভাবে আছে। শহরের বা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল পরিবারে বেড়ে ওঠা একজন শিক্ষার্থী যতটুকুও অনলাইন সিস্টেমে অভ্যস্ত গ্রামের একজন শিক্ষার্থী এখান থেকে অনেক দূরে। ফলে অনলাইন ভর্তি পরীক্ষা বৈষম্য তৈরি করবে ও ভর্তি পরীক্ষার্থীদের বিপদে ফেলবে। বক্তারা আরো বলেন, আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একদিনে এক থেকে দেড় ঘণ্টার একটা ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রক্রিয়ায় মেধার বাস্তব মূল্যায়ন সম্ভব নয়। ফলে কাঠামোর মধ্যেই বৈষম্য বিদ্যমান। এখন এই পরীক্ষা অনলাইনে অনুষ্ঠিত হলে প্রকৃত মেধা যাচাইয়ের সম্ভাবনা আরও তলায় গিয়ে ঠেকবে। ভর্তি পরীক্ষা একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন ও ভবিষ্যৎ কর্মজীবনকে প্রভাবিত করে। যদিও সরাসরি ভর্তি প্রক্রিয়ার মধ্যেও বহু গলদ রয়েছে। তবুও তা দীর্ঘদিন ধরে চলে এসেছে এবং শিক্ষার্থীরাও এর সাথে অভ্যস্ত। তাই সরাসরি ভর্তি প্রক্রিয়া যৌক্তিক। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির সভাপতি সভাপতি ডা. জয়দীপ ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ারসহ সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
×